মেরিনা লাভলী, রংপুর
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:৪৫ পিএম
রংপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ারা ইসলাম রানী
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে দেশজুড়ে আলোচনায় ছিলেন ট্রান্সজেন্ডার আনোয়ারা ইসলাম রানী। রংপুর-৩ (সদর ও সিটি করপোরেশন) আসনে তিনি হেভিওয়েট প্রার্থী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন।
দীর্ঘদিন রংপুর-৩ আসন জাতীয় পার্টির দখলে থাকলেও এ নির্বাচনে দলের প্রধানের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমে চমক দেখিয়েছেন রানী। ভোটের ফলাফলেও ভালো করেছেন। প্রথমবারের মতো নির্বাচনে এসে প্রদত্ত ভোটের ২১ শতাংশ পেয়েছেন। নির্বাচনে নবাগত রানী ভোটার ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। একই সঙ্গে আগামীতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ও সাধারণ মানুষের উন্নয়নে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। রংপুর-৩ আসনটি জাতীয় পার্টির ঘাঁটি। এ আসনের মধ্যে রয়েছে রংপুর সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, অফিস-আদালত। রংপুর সিটি করপোরেশনে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তাই এ আসনে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী জাতীয় পার্টি।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছাড়ের আসন ছিল রংপুর-৩। আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিলে জিএম কাদেরের বিপরীতে ছিল না শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী। ফলে বিকল্প হিসেবে ট্রান্সজেন্ডার স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ারা ইসলাম রানীকে বেছে নেন ভোটাররা। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী গোপনে রানীকে সমর্থন দেন। এ ছাড়া রংপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টির নির্বাচিত সংসদ সদস্য এলাকায় অবস্থান না করায় একটি ক্ষোভ ছিল সচেতনদের মনে। এসবই আশীর্বাদ হয়েছে রানীর জন্য। নির্বাচনে ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭৬৭ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন। এতে ৮১ হাজার ৮৬১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। রানী পেয়েছেন ২৩ হাজার ৩২৬ ভোট। প্রথমবারের মতো কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা রানী ২৩ হাজারের বেশি মানুষের ভালোবাসা পেয়ে অভিভূত।
আনোয়ারা ইসলাম রানী বলেন, ‘তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে স্বীকৃতি দেওয়াসহ মূলধারার সব কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ায় আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি এ সুযোগ দেওয়ায় আমি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পেরেছি। যারা ভালোবেসে, কষ্ট করে কেন্দ্রে এসে আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষকে ভোট দিয়েছেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। যারা ভোট দিতে পারেননি, আমাকে শুভকামনা জানিয়েছেন তাদের প্রতিও আমার ভালোবাসা রইল।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের ফলাফলে আমি সন্তুষ্ট। আমার কোনো অভিযোগ নেই। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কমিশনের ব্যবস্থাপনা ভালো ছিল। সব মিলে আমি ভালো নির্বাচন দেখেছি। যদিও ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। আগামীতেও রংপুরবাসী আমার পাশে থাকবেন বলে প্রত্যাশা করছি। আমিও মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করে যাব।’
রানী আরও বলেন, ‘আমার স্বামী নেই, সন্তান নেই, সংসার নেই। আমার সম্পদেরও প্রয়োজন নেই। আমার মতো মানুষ যারা তাদের উন্নয়নে কাজ করছি। সাধ্যমতো সাধারণ মানুষের পাশেও দাঁড়াই। মানুষের সেবা করতে পছন্দ করি। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য সাধারণ মানুষ আমাকে উৎসাহিত করেছিল। তাই মানবসেবার ব্রত নিয়ে নির্বাচনে এসেছিলাম।’
উল্লেখ্য, রংপুর মহানগরীর নূরপুর এলাকার জুলেখা বেগম ও চান মিয়ার সন্তান আনোয়ারা ইসলাম রানী। তিনি অষ্টম শ্রেণি পাস। রানী ন্যায়-অধিকার ট্রান্সজেন্ডার উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি। তিনি হিজড়া জনগোষ্ঠীর দেড়শ জনকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এর মধ্যে ৩০ জন সদস্য কর্মমুখী জীবন যাপন করছেন এবং ১১ জন একটি বেসরকারি কারখানায় কাজ করছেন। এ ছাড়া রানীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রূপান্তরে ২৩ জন সদস্য নিয়মিত কাজ করছেন।