ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীদের ভোট নিয়ে ভাবনা
প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:৫৫ পিএম
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:২৬ পিএম
‘কারও কোনো চাপে নয়, হুমকিতে নয়, আমরা ভোট দিব আমাদের পছন্দের প্রার্থীকে। আর ভোট যাকেই দিই না ক্যান, তাও সবাই কবে এ্যারা নৌকাতে ভোট দিচ্ছে। এজন্য নৌকাতেই আমরা ভোট দিব, যে যা পারে করুক। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে আমাদের ভোটটা ঠিকঠাক দিতে পারলেই হলো। ভোটের দিন সকাল-সকাল কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছি।’
কথাগুলো অকপটে নির্ভয়ে বলছিলেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ১নং এলুয়ারি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম শ্রীরামপুর (ধামাহার) গ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা সুমি হেম্ব্রম, মাইনো সরেন, মিনি টুডু। পাশে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনছিলেন গৃহবধূ লিলি মুর্মু, লিলি হাঁসদা ও এবারের প্রথম ভোটার কৃস্তিনা কিস্কু।
এবারের প্রথম ভোটার কৃস্তিনা কিস্কু বলেন, স্কুলে যাওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সাইকেল, টাকা, খেলার সামগ্রীসহ খাবার ও উপবৃত্তির টাকা দিয়ে সহায়তা দিয়েছেন। তার জন্যই আমাদের অনগ্রসর পরিবারের ছেলেমেয়েরা স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শিক্ষা নিতে পারছে। স্কুল-কলেজগুলোর বড় বড় সুন্দর বিল্ডিং করে দিচ্ছেন, তাতে তো শেখ হাসিনার নৌকা ছাড়া আর কোন প্রতীকে ভোট দিতে মন চাইবে। দেশের সার্বিক উন্নতি-অগ্রগতিতে আমিও প্রথমবারের ভোটার হিসেবে নৌকাতেই ভোট দেব।
উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর সূর্যপাড়া গ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর গৃহবধূ নির্মলা টুডু বলেন, যেসব গরিব মানুষের ঘরবাড়ি ছিল না, সেই মানুষগুলোকে প্রধানমন্ত্রী পাকা ঘরবাড়ি তৈরি করে তাদের নামে লিখে দিয়েছেন। এতে অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে। শেখ হাসিনা না করে দিলে এগুলো কে করে দিত? এজন্য গ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভোটাররা সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে উদগ্রীব।
শ্রীরামপুর (ধামাহার) গ্রামের আদিবাসী নেতা কমল কিস্কু ও লালদীঘি পার্বতীপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা যোহন টুডু বলেন, শ্রীরামপুর (ধামাপাড়া), পশ্চিম মহেশপুর, লালদীঘি পার্বতীপুরÑ এই তিন মৌজার পাঁচ গ্রামে পাঁচশতাধিক নারী-পুরুষ ভোটার রয়েছেন। ভোটের দিন শতভাগ ভোটার ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেনÑ আশা নির্বাচন কমিশনের। এখন পর্যন্ত ভোট বর্জন কিংবা ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য বিএনপি কিংবা জামায়াতের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার চাপ দেখা যায়নি।
দিনাজপুর-৫ (ফুলবাড়ী-পার্বতীপুর) নির্বাচনী আসনে এবার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে অষ্টমবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম লাঙ্গল প্রতীকে, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শওকত আলী আম প্রতীকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. তোজাম্মেল হক ঈগল প্রতীকে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হযরত আলী বেলাল ট্রাক প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটের কার্যক্রম শেষ করতে পুলিশ সদস্যরা সার্বিকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন।
নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর মো. আল কামাহ্ তমাল বলেন, ৫২টি ভোটকেন্দ্রের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। উপজেলার একটি পৌরসভাসহ সাত ইউনিয়নের মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার ৪১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭৪ হাজার ৮১৬ জন, নারী ৭৫ হাজার ২২৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) একজন রয়েছেন। মোট ভোটারের মধ্যে মুসলমান ভোটার ১ লাখ ২৪ হাজার ২৮০ জন, সনাতন ধর্মাবলম্বী (হিন্দু) ২১ হাজার ৭০৯ জন এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৪ হাজার ৫২ জন রয়েছেন। ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ভোটের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিন প্লাটুন বিজিবি, পুলিশ, আনসার সদস্যসহ একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।
ক্যাপশন:
সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নবীন-প্রবীণ নারীরা। ছবিটি দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর এলুয়ারি শ্রীরামপুর (ধামাহার) গ্রামের Ñপ্রবা ফটো