সংসদ নির্বাচন
রাজু আহমেদ, রাজশাহী
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:২৩ পিএম
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:১৩ পিএম
রাজশাহীর ছয়টি আসনের প্রতিটিতেই বিএনএম ও জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিটি আসনে প্রার্থী দিতে না পারলেও রয়েছেন তৃণমূল বিএনপি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মতো দলের মনোনীত প্রার্থী। এ ছাড়া রয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনীত এবং দলের একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে আসনগুলোর ভোটারদের দাবি, আওয়ামী লীগের বাইরে অধিকাংশ দলের প্রার্থীরাই কাস্ট হওয়া মোট ভোটের আট ভাগের এক ভাগও পাবে কি না সন্দেহ রয়েছে।
রাজশাহীর ছয়টি আসনে মনোনয়ন ফরম তুলেছিলেন মোট ৬০ জন প্রার্থী। যাদের মধ্যে বৈধতা পেয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪২ জন। এদের মধ্যে রাজশাহী-১ আসনে ১১ জন, রাজশাহী-২-এ ৭, রাজশাহী-৩-এ ৬, রাজশাহী-৪-এ ৬, রাজশাহী-৫-এ ৬ এবং রাজশাহী-৬ আসনে ৬ জন প্রার্থী রয়েছে।
আসনগুলোর একাধিক ভোটারের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, রাজশাহীর ছয়টি আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের নৌকা ও দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে। রাজশাহী-১ আসনের নৌকার প্রার্থী ফারুক চৌধুরীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কাঁচি প্রতীকের গোলাম রাব্বানী এবং ট্রাক প্রতীকের মাহিয়া মাহি। রাজশাহী-২ আসনে নৌকার প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশা। রাজশাহী-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নোঙ্গর প্রতীকের মতিউর রহমান মন্টু। রাজশাহী-৪ আসনে নৌকার আবুল কালাম আজাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কাঁচি প্রতীকের এনামুল হক। রাজশাহী-৫ আসনে নৌকার আব্দুল ওয়াদুদ দারার প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের ওয়াবদুর রহমান। রাজশাহী-৬ আসনে নৌকার শাহরিয়ার আলমের প্রতিদ্বন্দ্বী কাঁচি প্রতীকের রাহেনুল হক রায়হান। রাজশাহী-৩ বাদে প্রতিটিতেই ভোটযুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে।
ভোটাররা জানান, সেই হিসেবে ৪২ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ১৩ জনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে। এই ১৩ জনের বাইরে অন্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় দেখা যায়নি। এদিকে অন্যান্য দলের যেসব প্রার্থী রয়েছে, তারা হয় এলাকার বাইরে বসবাস করেন, নয়তো নিজ ইউনিয়ন বা ওয়ার্ডের মধ্যেই তাদের পরিচিতি সীমাবদ্ধ। এমন প্রার্থীর প্রতি ভোটারদের আগ্রহ বা বিশ্বাস কম।
নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, একজন প্রার্থী তার আসনে কাস্ট হওয়া মোট ভোটারের আট ভাগের এক ভাগ না পেলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়। এবার নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানত ৩৫ হাজার টাকা।
এদিকে রাজশাহী-১ আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান আখতার কাঁচি প্রতীকের অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম রাব্বানীকে এবং রাজশাহী-৬ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী শামসুদ্দিন রিন্টু নৌকা প্রতীকের শাহরিয়ার আলমকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া রাজশাহীর বাকি পাঁচ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মধ্যে হতাশা ও সমন্বয়ের অভাব লক্ষ করা গেছে। এই পরিস্থিতি বিএনএম, তৃণমূল বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীদেরও।
প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ছিলেন প্রচারবিমুখ। আসনগুলোতে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের পোস্টার দেখা গেলেও দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রার্থীদের দেখা মেলেনি। অবশ্য এজন্য তারা কেন্দ্রকেই দায়ী করেছেন।
রাজশাহী-৬ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী শামসুদ্দিন রিন্টুকে নির্বাচনী এলাকায় কোনো পোস্টার টানাতে দেখা যায়নি। নির্বাচনী কোনো প্রচারেও নামেননি তিনি। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে প্রার্থীদের কোনো সহযোগিতা করা হয়নি। পোস্টারও দেওয়া হয়নি। এসব কারণে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাকে নিরুৎসাহিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, তারা জেলার দলীয় ছয়জন প্রার্থী একত্রে বসেছিলেন। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রাজশাহী-১ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী শামসুদ্দীন বলেন, ‘এত বড় নির্বাচন একার পক্ষে পুরোটা সামাল দেওয়া সম্ভব হয় না। কেন্দ্রের কথামতোই প্রার্থী হই। তবে যেদিন থেকে কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে বসে ২৬টি সিট নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছল, তারপর থেকে কেন্দ্রের কোনো নেতা আমাদের ফোন ধরছেন না বা যোগাযোগ করতে পারছি না। তাদের নির্দেশনার জন্য আমরা বসে আছি। আমরা কী করব বুঝতে পারছি না।’
রাজশাহী-২ (সদর) আসনের লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন। তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টির রাজশাহী মহানগরের আহ্বায়ক। স্বপন বলেন, এখন পর্যন্ত আমার একার ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে ৩৫ হাজার টাকা জামানত দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকে এই টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কথা ছিল পোস্টারসহ নির্বাচনে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার। তবে তার কোনোটাই আমরা প্রার্থীরা পাইনি। এখন নির্বাচন থেকে সরে গেলে মানুষ আমাকে দালাল ভাববে। তাই বাধ্য হয়ে টুকটাক প্রচার চালিয়ে গেছি।