কিশোরগঞ্জের ৬ আসন
সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:২২ পিএম
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:২০ পিএম
শনিবার (৬ জানুয়ারি) সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের ছয় আসনের তিনটিতেই প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন সাবেক তিন রাষ্ট্রপতির চার সন্তান। তাদের মধ্যে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করছেন কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের একমাত্র ছেলে বিসিবির সভাপতি মো. নাজমুল হাসান পাপন; কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-অষ্টগ্রাম-মিঠামইন) আসনে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বড় ছেলে প্রকৌশলী রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক; এবং কিশোরগঞ্জ-১ (কিশোরগঞ্জ সদর-হোসেনপুর) প্রয়াত জাতীয় নেতা দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। আর কিশোরগঞ্জ-১ আসনে নৌকার ডা. জাকিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে স্বতন্ত্র হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন তারই বড় ভাই মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম। ভোটারদের কাছে তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে কী পারিবারিক, কী ব্যক্তিগত বিশেষ ইমেজ।
সদর-হোসেনপুর আসনে ভাইবোনের লড়াই
কিশোরগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয়ভাবে মনোনয়ন পেয়েছেন দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। উত্তরাধিকার সূত্রে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এর আগে এ আসনে রাজনৈতিক ভূমিকা রেখেছেন। রাজনীতিতে তার ক্লিন ইমেজ এখনও শ্রদ্ধা ও গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়ে থাকে। এবারের সংসদ নির্বাচনে একই আসনে তার ভাই মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম ও বোন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপির প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বাভাবিকভাবেই সারা দেশে আলোচিত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ডা. লিপির পক্ষে ভাই সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, সৈয়দ শরীফুল ইসলাম এবং বোন সৈয়দা নাফিজা নূর জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনী এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলামের পক্ষে তার চাচাত ভাই সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুসহ আওয়ামী লীগের একটি অংশ মাঠে সক্রিয় রয়েছে। দুই পক্ষের লোকজনই নানা প্রচার চালিয়ে ভোটারদের মন জয় করে কিশোরগঞ্জ-১ আসনটি সৈয়দ পরিবারের জন্য বিশেষ করে নৌকার জন্য নিশ্চিত করতে মাঠে নেমেছেন। এখন বাকি শুধু ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষার পালা। এ আসনে অন্য প্রার্থীদের উল্লেখযোগ্য প্রচার নেই। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত এখানে নৌকার প্রার্থীই বিজয়ী হবেন।
হাওরে উন্নয়ন করে সাড়া জাগিয়েছেন তৌফিক
কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে অনুসরণ করে তার ছেলে রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক সারা বছরই এলাকার জনগণের নানা সমস্যার সমাধান করেছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে এলাকার ফসলহারা কৃষকের পাশে থেকে নানা সহযোগিতা করে তিনি অনন্য এক রাজনীতিক হয়ে উঠেছেন। এক্ষেত্রে হাওর এলাকায় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পৃষ্ঠপোষকতায় গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সুফল পাচ্ছেন তারই সন্তান নৌকার প্রার্থী, দুইবারের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক।
ইটনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. কামরুল হাসান বলেন, বাবার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও ইমেজকে অক্ষুণ্ন রেখে তৌফিক হাওরে সারা বছরই অবস্থান করেছেন। প্রতিটি মানুষের মন জয় করেছেন। এ আসনে উল্লেখ করার মতো কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিও নেই। বলতে গেলে আমরা এখন শুধু ফল ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছি।
ভোটাররা ভোলেননি জিল্লুর ও আইভির স্মৃতি
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শেখ হাসিনার পরীক্ষিত বিশ্বস্ত মানুষ। তার ছেলে নাজমুল হাসান পাপনও একজন ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি। তার মা আইভি রহমান জীবন দিয়েছিলেন শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে সংঘটিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায়। রাজনীতিতে জিল্লুর রহমানের বিশ্বস্ততা ও ত্যাগ এবং আইভি রহমানের জীবনদান ও আন্তরিকতা কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের ভোটারদের এখনও আবেগান্বিত করে তোলে।
এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল বলেন, সবকিছু মিলিয়ে রাজনীতিতে এমন পরিবার বিরল। তা ছাড়া এ আসনে উল্লেখ করার মতো অন্য কোনো প্রার্থীও নেই। তাই আমাদের বিশ্বাস, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে নৌকার প্রার্থী নাজমুল হাসান পাপনেরই জয় হবে।
অন্য তিন আসনের চালচিত্র
ভোটারদের ধারণা, ত্রিমুখী ভোটযুদ্ধ হবে কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে। এই ত্রিমুখী লড়াই হবে নৌকার প্রার্থী বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল কাহহার আকন্দ, বিএনপির বহিষ্কৃত ট্রাক মার্কার মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন ও সাবেক সংসদ স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিনের মধ্যে।
কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন লাঙ্গল প্রতীকের জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু। যদিও স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের আওয়ামী লীগ নেতা মাহফুজুল হক হায়দার, কেটলি প্রতীকের ব্যারিস্টার মো. গোলাম কবীর ভূঁইয়া, কাঁচি মার্কার মেজর অব. নাসিমুল হকও মাঠে জোরশোরে প্রচারাভিযান চালাচ্ছেন। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, একক প্রার্থী হিসেবে চুন্নুর বিজয় মোটামুটি নিশ্চিত।
কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন। তবে পরপর তিনবার এমপি হওয়ায় এবং আত্মীয়স্বজনসহ একটি নিজস্ব দলীয় বলয় গড়ে তোলায় তাকে নিয়ে দলে দেখা দিয়েছে নানা বিতর্ক। দলের একটি অংশই এ নির্বাচনে তার বিপক্ষে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর (ঈগল মার্কা) পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাই এ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।