বরিশাল-৫
বরিশাল প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:৪৫ পিএম
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:১৭ পিএম
নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীম শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। প্রবা ফটো
বরিশাল-৫ আসনে নৌকার নির্বাচনী অফিসে অগ্নিসংযোগের জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে দায়ী করেছেন নৌকার প্রার্থী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম।
শনিবার (৬ জানুয়ারি) বিকালে বরিশাল প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে শামীম বলেন, ‘শনিবার ভোরে আমার ক্যাম্পে যে আগুন লাগল, এ আগুন তারা লাগিয়ে বিএনপিকে দোষারোপ করছে। এ কাজ করেছে ট্রাকের ওপর ভর করা ট্রাকের উপদেষ্টামণ্ডলীতে যারা আছেন তারা। বরিশালের মানুষের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করতে তারা এ কাজ করেছে। এটা বরিশালবাসীকে বুঝতে হবে। আমরা বরিশালবাসীকে শান্তিতে রাখতে চাই। নির্বাচনে জয়ী হলে এই বরিশাল হবে গর্বিত একটি শহর।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। শান্তিপূর্ণভাবে সুন্দর পরিবেশে আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সমস্যাটা তখনোই হয় যখন একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী সম্পূর্ণভাবে প্রার্থিতা হারিয়ে আরেকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতীক ট্রাকের ওপর ভর করে। এরপর থেকে তারা মারমুখী হয়।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ট্রাকের প্রার্থী সালাউদ্দিন রিপন প্রথম থেকে শালীনতা বজায় রেখে নির্বাচনী প্রচারণা করে আসছিলেন। উনাকে (সালাউদ্দিন রিপন) বিভিন্নভাবে প্ররোচনা করে মারমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এক পক্ষ। শুক্রবার রাতে সালাউদ্দিন রিপনের বাড়ি ও প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে নৌকার কর্মীদের বিরুদ্ধে। অথচ নৌকার কর্মীরা চরবাড়িয়া এলাকা ক্রস করলে আটকে রেখে তাদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। পরে পুলিশ ও র্যাব গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।’
তিনি বলেন, ‘নৌকার কর্মীরা হামলা করতে গেলে সামনে থাকা কর্মীরা আহত হতো। অথচ এ রকম কিছু ঘটেনি। এর মানে হলো তারা নরমালই ছিল, বরং তাদের পেছন থেকে হামলা করা হয়েছে। এরপর তারা একটি নাটক সৃষ্টি করে নৌকার কর্মীদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। ট্রাক প্রতীকের নির্বাচনী কার্যালয়ে সিসি ক্যামেরা ছিল, সেই ক্যামেরাও তারা ঘুরিয়ে দিয়েছিল। এত সূক্ষ্ম বুদ্ধি ট্রাকের প্রার্থীর নেই।‘
শামীমের অভিযোগ এই সূক্ষ্ম বুদ্ধি তারাই তাকে দিয়েছে, যারা বরিশাল নগরীতে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি করছে। তারা ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা এ কাজ করেছে। তাদের সূক্ষ্ম বুদ্ধির কারণে এই কর্মকাণ্ড ঘটেছে।
নৌকার প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শামীম বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে আপনারা আমাকে দেখেছেন, কখনও কি কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আমার সমর্থন ছিল, প্রশ্ন আপনাদের কাছে রেখে গেলাম। আমি প্রতিমন্ত্রী ছিলাম, কোনো চাঁদাবাজি কিংবা কারও ঘরবাড়িতে কি হামলা করেছি। আমার সঙ্গে ছিল এ রকম কোনো ছেলে এসব কর্মকাণ্ডে কি জড়িত ছিল। এখন নির্বাচনের সময় আমি কীভাবে এমন সব কর্মকাণ্ড করব, যা আমার এত বছরের অর্জন ও সুনাম ক্ষুন্ন করবে।’
তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘উনি আমাকে মূল্যায়ন করেছেন। গত ২৯ তারিখে প্রধানমন্ত্রী জনসভায় খোলামেলা আমারা প্রশংসা করেছেন। বরিশালবাসী আমাকে মূল্যায়ন করেছে।’
নৌকার প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ফোনে একাধিকবার কল করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠজন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা কোনো পক্ষের জন্য ভোট চাইনি। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী সাধারণ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়েছি। সবাই যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে, সকলের প্রতি সেই আহ্বান জানিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার পর বরিশালে এসে দুই দিন অপেক্ষা করেছেন তিনি। কিন্তু নৌকার প্রার্থী বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ উপেক্ষা করে নির্বাচন করছেন। তাই আমরা কোনো প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিইনি। আমার ধারণা, উনি নৌকার প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগ নন। কারণ আওয়ামী লীগ হলে তো সবাইকে ডাকতেন।’
পাল্টা অভিযোগ করে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘তিনি তো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে উস্কে দিচ্ছেন। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন কেউ যদি একটা মারে তাহলে ১০টা মেরে দিতে। আমরা কোথায়ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করিনি।’
সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আফজালুল করিম, সাবেক দপ্তর সম্পাদক লস্কর নুরুল হক এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য বলরাম পোদ্দার নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীমের পাশে ছিলেন।