গাজীপুর-২ ভোটচিত্র
মো. মাহবুবুল আলম, টঙ্গী (গাজীপুর)
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:৪৫ পিএম
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:২৭ পিএম
গাজীপুর-২ আসনে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আলিম উদ্দিন বুদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেন সরকারি দল বনাম বিরোধী দলের নির্বাচনী যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থী না হয়েও দিনরাত আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে আছে নানা পেশাজীবী ও বিভিন্ন দলের লোকজন। ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী আলিম উদ্দিন বুদ্দিনের জন্য তিনি যেন চালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এ কারণে এই নির্বাচনে তাকে ট্রাকের ড্রাইভার হিসেবে দেখছেন অনেকে।
নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য নির্বাচনবিরোধী দলের লোকজন নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিলেও এ এলাকায় তারা নৌকার বিরুদ্ধে ভোট দিতে একাট্টা। শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে হওয়ার সুবাদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহিদ আহসান রাসেল চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। কিন্তু তার নির্ভার রাজনৈতিক মাঠ বর্তমানে নির্বাচন পরিস্থিতিকে জটিল ও কঠিন করে তুলেছেন তার প্রতিপক্ষ সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, রাসেলের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমেছেন জাহাঙ্গীর। স্বতন্ত্র প্রার্থী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন গাজীপুরের প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তি হলেও এলাকায় বেশি পরিচিত নন। তবে তার নির্বাচনী প্রচারণায় জাহাঙ্গীরের নজরকাড়া উপস্থিতি, বক্তৃতা ও আলিম উদ্দিনের পোস্টার-ব্যানারে জাহাঙ্গীরের ছবি আলিম উদ্দিনের নাম সর্বত্র পৌঁছে দিয়েছে।
উভয় প্রার্থীর নির্বাচনী সভায় লোকসমাগম চোখে পড়ার মতো। পোস্টার-ব্যানার ও মাইকিং এলাকার স্থবির রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জমজমাট করে তুলেছে। জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার ও মেয়র পদ হারানোর বিষয়ে জাহিদ আহসান রাসেলকে দায়ী করে প্রতিটি নির্বাচনী সভায় কড়া ভাষায় সমালোচনা করছেন। অপরদিকে জাহিদ আহসান রাসেলও জাহাঙ্গীর আলমের সমালোচনার জবাব দিচ্ছেন। অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন নিজে সমাবেশে উপস্থিত থেকে নিশ্চুপ দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। কদাচিৎ দুয়েকটি কথায় শুধু দোয়া চাইছেন।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি বিরাট অংশকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সক্ষম হন। এ ছাড়া শিক্ষক, সাংবাদিক, শ্রমিক, যুবক, আলেম সমাজ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে তার একটি গভীর সম্পর্ক গাজীপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে তাকে প্রধান ফ্যাক্টরে পরিণত করেছে। জাহাঙ্গীর আলম এই নির্বাচনের মাধ্যমে মূলত তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রতিশোধ নিচ্ছেন বলে এলাকাবাসীর ধারণা। জাহাঙ্গীরের কারণেই এই নির্বাচন উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে—এমনও মনে করছেন ভোটাররা। জাহাঙ্গীরভীতি নৌকা প্রার্থীকে প্রচণ্ডভাবে ধাক্কা দিয়েছে। ফলে নির্বাচনী আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। এখন আর আওয়ামী লীগের মধ্যে নির্বাচন স্থির হয়ে বসে নেই, ছড়িয়ে পড়েছে সবার মাঝে।
টঙ্গীর আউচপাড়া এলাকার বাসিন্দা বশির উদ্দিন বলেন, ‘স্থানীয় আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে স্পষ্টভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে। জাহাঙ্গীর ও মন্ত্রী রাসেলের দুটি ব্লক শক্তভাবে তৈরি হলো, যা ভবিষ্যতে ক্ষতিকর অবস্থার সৃষ্টি করবে।’
দত্তপাড়া এলাকার মুদি দোকানি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন অপরিচিত মানুষ। অন্যের ওপর ভর করে রাজনীতি করা যায় না। জনপ্রতিনিধি হতে হলে জনপ্রিয় হতে হয়। জাহিদ আহসান রাসেল তার বাবার মতো ক্লিন ইমেজের মানুষ। বিজয়ী তিনিই হবেন। জাহাঙ্গীরের কথায় মানুষ ভোট দেবে না।’
গাজীপুর সদর এলাকার বোর্ড বাজারের ব্যাংক কর্মকর্তা ইয়াসিন আরাফাত বলেন, ‘গাজীপুরের নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী আলিম উদ্দিন বুদ্দিনকে সমর্থন দিয়ে বলেছেন, একটা পরিবর্তন দরকার, একজন নবীন লোক চারবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। তার কাজ মানুষ দেখেছে। এবার একজন প্রবীণ লোক নির্বাচিত হোক। দেখা যাক তিনি কী করেন। জাহাঙ্গীর নিশ্চয় বুঝেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’