জন্ম-মৃত্যু সনদ
বরগুনা সংবাদদাতা
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:১৯ পিএম
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:৩২ পিএম
প্রশাসনিক সকল কাজ ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা হয়। পাসপোর্ট, আইডি কার্ড, জমি রেজিস্ট্রেশন, বিয়ে এবং স্কুলে ভর্তিসহ ১৭টি সেবার ক্ষেত্রে জন্মসনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে সন্তান জন্ম নেওয়ার পর মানুষ স্থানীয় প্রশাসনে জন্মনিবন্ধন করেন। এখন নাগরিকদের সেবার মধ্যে অন্যতম জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সনদ। কিন্তু গত পাঁচ মাস ধরে এই সেবা নিতে এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বরগুনার বাসিন্দারা। সার্ভার জটিলতার কারণে এমনটা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ নিয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে সেবাপ্রত্যাশীদের মাঝে। অভিভাবকরা সন্তানকে স্কুল-কলেজে ভর্তি করা নিয়ে সংশয়ে আছেন। অনেকেই পেনশন, পাসপোর্ট, জমি রেজিস্ট্রিসহ বিভিন্ন কাজ করতে পারছেন না। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনও। বরগুনা পৌরসভায় সেবা নিতে আসা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘জন্ম সনদের জন্য দুই মাস ধরে ঘুরছি। সার্ভার জটিলতার কথা বলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ একই অভিযোগ করেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. জসীমউদ্দীনও। তিনি চার মাস ধরে জন্মনিবন্ধনের জন্য ঘুরছেন বলে জানান।
একই অবস্থা জেলার বিভিন্ন উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদেও। সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, ১৫ থেকে ২০ জন সনদ নেওয়ার অপেক্ষায় বসে আছেন। তাদের মধ্যে শহিদুল ইসলাম শাহীন নামে একজন জানান, তিন মাস আগে পরিবারের তিন সদস্যের জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে আসেন। দুটি সনদ পেলেও একটি পাওয়া যায়নি। কবে পাওয়া যাবেÑ জানাতে পারছেন না তথ্যসেবা কেন্দ্রের লোকজন। প্রতিদিন অন্তত একবার ইউনিয়ন পরিষদে এসে খোঁজ নিতে হচ্ছে তাকে।
ইউনিয়নের ধুপতি এলাকার জুয়েল হাওলাদার নামে আরেকজন বলেন, ‘ছেলের স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য জন্মসনদ চাচ্ছিল। তাই তাড়াতাড়ি ইউনিয়ন পরিষদে ছুটে আসি। তবে ইউনিয়ন পরিষদে এসে আরেকটা ভোগান্তির মধ্যে পড়ি। দুই মাস ধরে ঘুরেও জন্মসনদ পাইনি।অফিসে এলেই বলে সার্ভারে সমস্যা।’
বরগুনা পৌরসভার ডিকেপি রোডের বাসিন্দা রাবেয়া আক্তার বলেন, ‘মোর পোলা ঢাকা থাকে। নাতির জন্মসনদের লইগ্গা দুই মাস ধরে ঘুরছি পৌরসভায়।কিন্তু তারা দেয় না। মোর টাহাও যায়, সময়ও যায়, কোনো কাম হয় না। পৌরসভা আইলেই কয়, কাম অয় নাই। সার্ভারের সমস্যা নাকি। জানি না কবে পামু!’
গৌরিচন্না ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দিনের বেশিরভাগ সময় সার্ভারে ঢুকতে পারি না। কখনও চেয়ারম্যানের আইডিতে ঢুকতে পারলেও সচিবের আইডিতে ঢুকতে পারি না। পাঁচ মাস ধরে এভাবেই চলছে। সেবাপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর মাসে রেজিস্ট্রার জেনারেল শূন্য থেকে এক বছরের শিশুদের জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদানের টার্গেট দেন ১ হাজার ১৯৮। কিন্তু জেলার ৪২টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভা থেকে সনদ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩৮৬টি। একইভাবে মৃত্যু সনদের টার্গেট ছিল ৫৪৭টি। কিন্তু দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৪৯টি। তবে বেশি বয়সি নাগরিকের জন্মসনদ প্রদানের হিসাব জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে বরগুনা পৌরসভার মেয়র কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, ‘সার্ভার জটিলতা নিয়ে জেলা উন্নয়ন সভায় কথা হয়েছে। ঢাকায়ও চিঠি দেওয়া হয়েছে। সমাধান হয়নি। বিষয়টি আমাদের হাতে না থাকলেও সাধারণ মানুষকে বোঝানো সম্ভব হয় না। তারা ভাবে আমরা ইচ্ছা করেই দিচ্ছি না। তাদের সঙ্গে প্রায়ই বচসা হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার।’
জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সার্ভার সমস্যার কারণে সনদ দিতে কিছুটা সময় লাগছে। তবে রাতে সার্ভার কিছুটা ফ্রি থাকে। এ কারণে সংশ্লিষ্টদের এ সময়ে সেবা দেওয়া যায় কি নাÑ তা ভেবে দেখতে বলা হয়েছে।’