রাজশাহী অফিস
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:১২ পিএম
আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:২৫ পিএম
রাজশাহীতে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত সময় কাটান নৌকার প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা। প্রবা ফটো
নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে রাজশাহী-২ আসনে নৌকার পালে লাগা হাওয়া তত স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের একটি বড় অংশ নৌকার প্রার্থী ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতা ফজলে হোসেন বাদশার পক্ষে কাজ করছে। একদিকে নৌকা প্রতীক, অন্যদিকে ব্যক্তি ফজলে হোসেন বাদশাকে নিয়ে নগরীর ভোটারদের মধ্যে ইতিবাচক ধারণার কারণে এই আসনে বেড়েছে নৌকার প্রতি সমর্থন। তবে শুরুর চিত্রটা এমন ছিল না। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ জোটের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নেমেছিল। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শেষ হওয়ার আগে আগে বদলে যায় সেই পরিস্থিতি।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ফজলে হোসেন বাদশা তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কারণে জনপ্রিয়। বিশেষ করে প্রচারবিমুখ এই নেতার ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে নানা সময়ের আন্দোলন সংগ্রামের বিষয়টি ভোটারদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।
আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মী ও প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭৩ সালের পর থেকে প্রায় ৩৫ বছর রাজশাহী-২ আসনে সংসদ নির্বাচনে কোনোদিন নৌকা জয়ের মুখ দেখেনি। পুরো সময়টাতেই এখানে জয়জয়কার ছিল বিএনপির। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ফজলে হোসেন বাদশার হাত ধরে প্রথম এই আসনে নৌকা জয় পায়। এরপর থেকে টানা তিনবার তিনি নৌকার কাণ্ডারি হিসেবে সংসদ সদস্য হয়েছেন।
সামরিক শাসনের অবসানের পর ১৯৯১ সালে ফজলে হোসেন বাদশা ৩৪ হাজার ২৬৭ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। ২০০২ সালের সিটি নির্বাচনে বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনুর বিরুদ্ধে ভোটের লড়াইয়ে নামা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাবেক ভিপি বাদশার সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য ঐক্য তৈরি হয়। ওই নির্বাচনে সামান্য ব্যবধানে বাদশা হারলেও অভিযোগ ওঠে, বিএনপি কারচুপির মাধ্যমে ফল বদলে দিয়েছে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে ১৪ দলীয় জোট গঠিত হলে বাদশার হাত ধরেই এই আসনে নৌকা বিজয়ী হয়।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘যে মানুষটির হাত ধরে এই আসনে ৩৫ বছর পর নৌকা জয়ের মুখ দেখেছে, তাকে ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসরদের অপপ্রচার থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেইসব অপপ্রচার দিয়ে নৌকার বিজয় ঠেকানো যাবে না।’
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দলটির একজন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ও তার পরিবারের কঠোর চাপের কারণে দলের একটি অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে থাকলেও তাদেরও বেশিরভাগই নৌকার বিপক্ষে ভোট দিতে চান না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর আওয়ামী লীগের একজন চিকিৎসক নেতা বলেন, ‘আমাদের কিছু করার নেই। কারণ রাজশাহী একটি বিশেষ পরিবারের হাতে জিম্মি। এখন সেই পরিবারের বিরোধিতা প্রকাশ্যে করার সাহস আমাদের অনেকেরই নেই। যদিও ভেতরে ভেতরে পরিস্থিতি ভিন্ন। তার দাবি, এই আসনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষেই ভোটারদের রায় যাবে।’
শাহমখদুম থানা এলাকার সাধারণ ভোটার বিল্লাল হোসেন জানান, তার এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের লোকজন এসে তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়েছে, যাতে নৌকার পক্ষে ভোট না যায়। বিল্লাল বলেন, ‘জন্মের পর থেকে নৌকায় ভোট দিয়ে এসেছি। এখন কী জন্য অন্য মার্কায় ভোট দিতে যাব?’
শিরইল কলোনি এলাকার ষাটোর্ধ্ব আনোয়ারা রাজশাহীর আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘ভাল্লাগছে না যে, ক্যারে আমার আব্বা ছিল নৌকা। নৌকা নিয়ে দাঁড়াবে। তা, সেই আব্বার নৌকা গেল কোথায়? কী কয় এগুলা? অন্য মার্কায় ভোট দেব, নৌকা কই? এহানে যারা সব নেতা ফেতা আছে তারা সব কচ্ছে যে দাও, এডাও শেখ হাসিনার। আমি কই যে শেখ হাসিনার কেন হবে এডা? আমার আব্বা যেডায় ছিল, সেই নৌকায় আমি দেখবো।’
নগরীর বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৫ বছরে তার মেয়াদে এখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। একাধিক প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ হয়েছে। এমপিওভুক্ত হয়েছে সব প্রতিষ্ঠান। ঢাকা-রাজশাহী সরাসরি ট্রেন চালুর বিষয়টি তিনি সংসদে তুলে ধরে সফল হয়েছেন। এর বাইরে বন্ধ বিমানবন্দর চালুর ক্ষেত্রেও মূল ভূমিকা ছিল তার। রাজশাহী মহানগরীর অবকাঠামোগত উন্নয়নে সবচেয়ে বড় দুটি রাস্তার কাজও তিনিই বাস্তবায়ন করেছেন। ফলে পরীক্ষিত এই নেতার ব্যাপারে সাধারণ ভোটারদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।
রাজশাহীর চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক কর্মী আহসান কবির লিটন বলেন, ‘ফজলে হোসেন বাদশার সবচেয়ে বড় গুণ হলো, তিনি দুর্নীতি নিজে করেন না। দুর্নীতিকে প্রশ্রয়ও দেন না। এর বাইরে এখানে প্রগতিশীল রাজনৈতিক চর্চা ও সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য তার অবদান ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।’
রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি আমিনুর রহমান খান রুবেলের দাবি, রাজশাহীতে একটি বিশেষ সিন্ডিকেট মানুষকে ভুল বোঝাতে চেয়েছিল। কারণ বাদশা সংসদ সদস্য থাকলে দুর্নীতিতে সমস্যা হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তার করণীয় নির্ধারণ করে ফেলেছে যে তারা নৌকায় ভোট দেবে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘আমি নির্বাচনী প্রচারে সব থেকে বেশি পেয়েছি সাধারণ মানুষের ভালোবাসা এবং আমি বিশ্বাস করি এর দৃশ্যমান ফল পাব। এ ছাড়া সত্যিকারের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কখনোই নৌকা প্রতীকের বাইরে যেতে পারেন না।’