রহিম শুভ, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:১৬ পিএম
শীতের পাখিতে মুখর হয়ে উঠেছে রাণীশংকৈলের রামরাই দিঘি। প্রবা ফটো
শীত মানেই দেশে অতিথি পাখির আগমন। শূন্যে ডানা মেলে দলবেঁধে আসে তারা। নীল জল ছুঁয়ে কখনও লুটোপুটি খায়, কখনও খাবারের খোঁজে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ায়। একটু উষ্ণতার খোঁজে ছুটে আসা রঙ-বেরঙেরে এসব পাখির আগমনে পুকুর-দিঘি-হাওর-বাঁওড়-বিল-হ্রদসহ অসংখ্য জলাশয় হয়ে ওঠে চমকপ্রদ। ঠাকুরগাঁও সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে রাণীশংকৈল উপজেলা। এই উপজেলার উত্তরগাঁও গ্রামেই অবস্থান বরেন্দ্র অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম রামরাই দিঘির। এরই মধ্যে শীতের পাখিতে মুখর হয়ে উঠেছে দিঘিটি। প্রতিবছরই শীত মৌসুমে শীতপ্রধান দেশ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আসে এখানে। আর এসব পাখি দেখতে আসে প্রচুর দর্শনার্থীও।
রামরাই দিঘির পানিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা মিলছে অতিথি পাখির। ৪২ একরের এ দিঘির চারদিকে রয়েছে সাড়ে ৮০০ অধিক লিচুগাছ। সন্ধ্যা নামলেই দিঘিরপাড়ের লিচুবাগানে আশ্রয় নেয় এসব পাখি।
আশপাশের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা পাখি দেখতে আসে এই দিঘিতে। তেমনি রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে এসেছেন কামাল হোসেন। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর শীত মৌসুমে পরিবার নিয়ে এখানে অতিথি পাখি দেখতে আসি। অনেক সুন্দর আর নানা রকম পাখি দেখে মুগ্ধ হই। নৌকা নিয়ে কাছে যাই ছবি তুলি, ভিডিও করি। একসঙ্গে এত পাখি দেখে মনটা ভরে যায়।’
পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলা থেকে আসা শাম্মি আক্তার বলেন, ‘ফেসবুক, ইউটিউবে দেখেছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি পাখি শীত মৌসুমে আসে। তবে এবার রাণীশংকৈল উপজেলার রামরাই দিঘিতে পাখি দেখতে এসেছি। দিঘিটাও অনেক বড়, আর চারপাশে অতিথি পাখির ঝাঁক। দেখে সত্যি মন ভরে গেল।’
ঠাকুরগাঁও সদর রোডের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘এত সুন্দর সুন্দর পাখি শীতের সময় দেশে আসে। তাই কয়েকজন বন্ধু মিলে দেখতে আসছি। পুরো পুকুরজুড়ে অনেক পাখি। নৌকা দিয়ে কাছ থেকে পাখিগুলো দেখলাম অনেক ভালো লাগছে।’
রাণীশংকৈলের বাসিন্দা রাজু আহম্মেদ বলেন, ‘শীত এলে রামরাই দিঘি অতিথি পাখিতে মুখর হয়ে ওঠে। আশপাশের বিভিন্ন জেলার দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসে অতিথি পাখি দেখতে। এসব অতিথি পাখি সকালে একবার দিঘিতে আসে। কিছু সময় অবস্থান করার পরে বিভিন্ন বিলে চলে যায়। পরে আবার বিকালে ফিরে আসে। সন্ধ্যা হলেই দিঘির চারপাশে লিচুগাছে আশ্রয় নেয়।’
দিঘির কেয়ারটেকার হেদলু রাম বর্মন বলেন, ‘শীত এলেই রামরাই দিঘিতে চোখে পড়ে রঙ-বেরঙের জানা-অজানা পাখির। এসব অতিথি পাখি প্রকৃতির বন্ধু, আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গর্ব ও প্রেরণা। এ পাখিগুলোকে অচেনা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বন্ধুসুলভ আচরণ করা উচিত। এই পাখিগুলো রক্ষা করা সবার দায়িত্ব।’
দিঘির মৎস্যচাষি কাউসার কাকন বলেন, ‘অতিথি পাখির কোলাহলে মুখর রামরাই দিঘি। পাখির যেন সুন্দর অভয়ারণ্য গড়ে ওঠে সেদিকে খেয়াল রাখছি। কেউ যেন পাখি শিকার না করতে পারে সে বিষয়ে প্রশাসনসহ আমরা সর্বদা নজরদারি করছি। এখানে অতিথি পাখির অবাধ বিচরণে কোনো বাধা নেই। কেউ পাখি শিকারের উদ্দেশ্যে এলে আমরা সব সময় তাদের নিরুৎসাহিত করি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন, ‘প্রতিবছর অনেক দূর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি আসে রামরাই দিঘিতে। গাংচিল, পানকৌড়ি, পাতিহাঁসসহ নানা প্রজাতির হাজার হাজার অতিথি পাখি। বিভিন্ন জেলা থেকে এই পাখি আর দিঘির মনোরম দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী আসছে। এখানে পাখি শিকারের কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি পাখি শিকার করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’