দূষণমুক্ত পৃথিবীর স্বপ্ন
নওগাঁ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:৩৯ পিএম
আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:১১ পিএম
পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা বাড়াতে বাংলাদেশে এসেছেন রামপ্রসাদ নস্কর। পরিবেশদূষণ রোধে তার প্রচারাভিযানের যন্ত্র দুই চাকার বাইসাইকেল। বুধবার সকালে নওগাঁয়। প্রবা ফটো
অন্যের বাড়ির নিরাপত্তাপ্রহরী সন্ন্যাসী নস্কর। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে মেজ ছেলে রামপ্রসাদ নস্কর পেশায় শিক্ষক। গল্পটা তাকে নিয়ে; যে কিনা একটি দূষণমুক্ত পৃথিবী গড়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে। পরিবেশদূষণ রোধে তার আছে এক দারুণ প্রচার কৌশল। নিজ দেশ ভারতে এই প্রচারাভিযান শেষে বিদেশের মাটিতে পরিবেশ রক্ষার পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন তিনি। বিদেশের মাটিতে তার মিশন শুরু হলো প্রতিবেশী বাংলাদেশের মানুষকে পরিবেশদূষণ রোধ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে।
বাইসাইকেল চালিয়ে বুধবার (৩ জানুয়ারি) সকালে রামপ্রসাদ পৌঁছান উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁয়। বেলা ১১টার দিকে রামপ্রসাদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে। আলাপে জানা গেল পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে বাইসাইকেল হলো তার প্রচারযন্ত্র। এই যন্ত্রের প্যাডেলে চেপে ঘুরেছেন নিজ দেশের ২৮টি রাজ্য। যাত্রা শুরু করেছিলেন ২০১৩ সালে। পরিবেশবান্ধব বাইসাইকেল নিয়ে প্রচার চালাতে গিয়ে রামপ্রসাদকে ’দু-চাকার’ ভারত ভ্রমণকারী হিসেবে চেনে মানুষ।
রামপ্রসাদ নস্কর বলেন, ‘সচেতনতার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব বাইসাইকেল চালানোর জন্য যুবসমাজকে উৎসাহিত করতে চাই। আমি সাইকেল চালিয়ে এক দিনে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ পাড়ি দিতে পারি। বাংলাদেশে তিন মাস থাকব। চেষ্টা করব বাংলাদেশের কিছু অঞ্চল ঘুরে মানুষকে সচেতন করতে।‘
১৯৭৮ সালের ২৫ মার্চ জন্ম নেওয়া রামপ্রসাদ পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সোনারপুর গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় শ্রীপুর শিক্ষাসদন উচ্চ বিদ্যালয়ে ভূগোল বিষয়ের সহকারী শিক্ষক তিনি। সুন্দরবনের কোলঘেঁষা জেলার বাসিন্দা হওয়ায় বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই বনাঞ্চল রক্ষা করা নিয়ে তিনি বেশি উদ্বিগ্ন। সুন্দরবনের বর্তমান অবস্থা নিয়ে তার মত– অনেক মানুষের মাথার চতুর্পাশে চুল থাকলেও মাঝখানে টাক। ঠিক তেমনি সুন্দরবনের চতুর্পাশে গাছ থাকলেও মাঝখানে বৃক্ষহীন মাঠ হয়ে গেছে। উপকূলবর্তী সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে পানির তলে।’
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সঙ্গে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ সুন্দরবনের পরিবেশ বিপন্ন করে তুলেছে– এমন মত দিয়ে রামপ্রসাদ নস্কর বলেন, ‘কারখানার অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানি ও জলযানের পোড়া মবিল সুন্দরবনসংলগ্ন নদীতে মিশে দূষণ সৃষ্টি করছে।’
রামপ্রসাদ বলেন, ‘সর্বত্র এখন দূষণ– পাহাড়, সমতল, গাছ কাটা, পাথরযুক্ত মাটি পড়ে নদীর নাব্যতা হ্রাস, নদী অববাহিকায় গড়ে উঠেছে কলকারখানা, চাষাবাদে কীটনাশক-রাসায়নিক ব্যবহার ইত্যাদি। কোথাও দূষণমুক্ত নেই। নিজের অবস্থান থেকে সামান্য উদ্যোগ নিয়েছি। সচেতনতা বাড়াতে বাইসাইকেল নিয়ে ঘুরে ঘুরে লিফলেট বিতরণ করছি। সাইকেলের সামনে একটি সচেতনতামূলক স্টিকার লাগিয়ে রেখেছি। আশা করছি, আমার এই সামান্য প্রচেষ্টায় একটু হলেও সবাই সচেতন হবে।’