× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কুরুখ ভাষা রক্ষায় দুই তরুণের সংগ্রাম

সাদিকুর রহমান সামু, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)

প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:৩১ পিএম

আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:৩৫ পিএম

কমলগঞ্জের দেওড়াছড়া চা-বাগানের বামনবিল টিলায় নিজেদের বিপন্ন মাতৃভাষা ‘কুরুখ’ শিখছে ওঁরাং সম্প্রদায়ের শিশুরা। প্রবা ফটো

কমলগঞ্জের দেওড়াছড়া চা-বাগানের বামনবিল টিলায় নিজেদের বিপন্ন মাতৃভাষা ‘কুরুখ’ শিখছে ওঁরাং সম্প্রদায়ের শিশুরা। প্রবা ফটো

চা-বাগানে জন্ম নেওয়া দুই চা-শ্রমিকসন্তান আপন ওঁরাং ও মিঠুন ওঁরাং। তারা নিজেদের বিপন্ন মাতৃভাষা ‘কুরুখ’ রক্ষায় সংগ্রাম করে চলছেন। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার দেওড়াছড়া চা-বাগানের বামনবিল টিলায় গত এক বছর ধরে খোলা উঠানে সপ্তাহে প্রতি শুক্র ও শনিবার স্বেচ্ছাশ্রমে ওই দুই তরুণ ‘কুরুখ’ ভাষা শিখিয়ে আসছেন তাদের সম্প্রদায়ের শিশু-কিশোরদের। কুরুখ ভাষা শিক্ষাকেন্দ্রে শিক্ষার্থীরা কুরুখ ভাষায় বিভিন্ন প্রাণী, শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নাম শিখছে, সহভাষা বাংলা-ইংরেজিও শিখে নিচ্ছে। তবে পাঠদানের জন্য স্থায়ী একটি ঘর না থাকায় তাদের এ কার্যক্রমে নানা অসুবিধা দেখা দিচ্ছে বলে তারা জানান।

শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকালে দেওড়াছড়া চা-বাগানের বামনবিল টিলায় গিয়ে দেখা যায়, একটি বাড়ির মাটির উঠানে চাটাই বিছিয়ে ওঁরাং সম্প্রদায়ের একদল ছেলেমেয়ে বসে আছে। এসব শিশুর সবাই কুরুখ ভাষা শিখতে এসেছে। এখানে সপ্তাহে দুই দিন তাদের মাতৃভাষার পাঠদান করা হয়। ভাষা শেখাচ্ছেন এ বাগানেরই শ্রমিকসন্তান আপন ওঁরাং। তাকে সহযোগিতা করছেন পাশের মিরতিংগা চা-বাগানের মিঠুন ওঁরাং। তারা একই কলেজের, একই শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাদের লক্ষ্য একটাই। মাতৃভাষার চর্চায় গতি দিতে চান, সমৃদ্ধ করতে চান। 

তারা জানান, তাদের পরিবারে মা-বাবা, মুরব্বিরা সব সময় কুরুখ ভাষায় কথা বলেন। কেউ কেউ লিখতে পারেন, পড়তে পারেন, তবে শুদ্ধ করে বলতে পারেন না। কিন্তু শিশু-কিশোর বা যুবকদেরও অনেকে কুরুখ ভাষা জানেন না, কথা বলেন না। নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই ভাষার চর্চা বাড়াতে তাদের এই উদ্যোগ।

আপন ওঁরাং পাঠদানের জন্য একটি স্থায়ী ঘরের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘এক বছরের ওপর নিজেরা স্কুল চালিয়েছি। এখন একটা ঘর দরকার। সরকারি সুযোগ-সুবিধা মিললে মাতৃভাষা, নিজেদের সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখা সহজ হবে।’ কুরুখ ভাষার এই চর্চা সামনে আনার পেছনে কাজ করেছেন কমলগঞ্জের লোক-গবেষক আহমদ সিরাজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞানী সেলু বাসিত ও কুরুখ ভাষার গবেষক দীপংকর শীল। তারা এই ভাষার বই, অভিধান তৈরি করেছেন। এখানে যারা ভাষা শিখতে আসে তারা বিভিন্ন প্রাথমিক ও উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বর্তমানে ২৪-২৫ জন। দেওড়াছড়া চা-বাগানে ৩৭০ জন ওঁরাং জনগোষ্ঠীর লোক আছে। বামনবিল টিলায় আছে ১৫০ জনের মতো। পাশের মিরতিংগা চা-বাগানের হালকি টিলায় ৭০০ ওঁরাং জনগোষ্ঠীর বসবাস।

এই শিক্ষাকেন্দ্রে এসে কুরুখ ভাষায় অনেক কিছু শিখেছে বলে জানায় নবম শ্রেণির ছাত্রী সীমা ওঁরাং। সে বলে, ‘আগে আমরা কুরুখ ভাষা বলতে পারতাম না। মা-বাবা নিজেদের মধ্যে কুরুখ ভাষায় কথা বলতেন। এখন নিজস্ব ভাষা শিখতে পেরে নিজেদের মধ্যে কুরুখ ভাষায় কথা বলতে পারি।’

কমলগঞ্জের লোকগবেষক আহমদ সিরাজ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাংলাদেশে কুরুখ ভাষার নিজস্ব বর্ণমালা নেই। কুরুখ ভাষায় লোকসংগীত, গল্প, ধাঁধা, প্রবাদ-প্রবচন ইত্যাদির চর্চা আছে। ভাষাটি এখন বিপন্ন। ২০২২ সালের মার্চ মাসে আমার বাড়িতে ওঁরাং ভাষা শিক্ষার স্কুল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় সে বছর সেপ্টেম্বর মাসে বামনবিল টিলার লালসাই ওঁরাংয়ের বাড়িতে স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্লাস শুরু হয়। এ ভাষাটি টিকিয়ে রাখতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।’ 

কুরুখ ভাষার গবেষক দীপংকর শীল বলেন, ‘কমলগঞ্জে ওঁরাং জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। কুরুখ দ্রাবিড় ভাষা পরিবারের একটি শাখা। ভাষাটি এখন বিপন্ন। অনেকে ভুলতে বসেছে। কুরুখ ভাষা শিক্ষার জন্য কুরুখ ভাষা শেখার প্রথম পাঠ রচনা করে দিয়েছি। আগামীতেও এই ভাষার বই, অভিধান তৈরি করব।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা