আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:৪৬ পিএম
বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত লেক, ঝরনা আর পাহাড়ের মিশেলে অনিন্দ্য সুন্দর উপজেলা চট্টগ্রামের মিরসরাই। সবুজে ঢাকা মিরসরাইয়ের বুক চিরে যতটুকু যাওয়া যায় দেখা মিলবে পিচঢালা রাস্তার। এলাকা ঘুরলে বোঝা যায় ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া পড়েছে উপজেলাটিতে।
এসবের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর জ্যেষ্ঠ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের। তবে নির্বাচনে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না তিনি। তার জায়গায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন তার ছেলে মাহবুব উর রহমান রুহেল। বাবার এত অর্জনের পরও নির্বাচনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে রুহেলকে। ঈগল প্রতীক নিয়ে এখানে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন মিরসরাইয়ের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন। আওয়ামী লীগের বিরাট একটা অংশের নেতাকর্মীর সমর্থন পাচ্ছেন তিনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উন্নয়ন হলেও স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচনে পছন্দের লোকজনকে মেম্বার ও চেয়ারম্যান বানিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এর ফলে তৃণমূলের নেতারা যেমন অবমূল্যায়ন হয়েছেন, তেমনি সামাজিক বিচারব্যবস্থাও ভেঙে গেছে বলে মত তাদের।
১০ নম্বর মিঠানালা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মো. মামুন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সাতবারের এমপি মোশাররফ হোসেনের হাত ধরে উন্নয়ন হয়েছে। তবে ইউনিয়ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান-মেম্বার নির্ধারণ করে দিতে গিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছে। ত্যাগীরা মূল্যায়িত হননি। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা সামাজিক বিচার-আচার করতে পারেন না। এতে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে তৃণমূলে। এই মান-অভিমানই এবারে মিরসরাইয়ের নির্বাচনের অন্যতম ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন তৃণমূল আ.লীগের মান-অভিমানের ফায়দা তুলতে মরিয়া। এ ছাড়াও তার আন্তরিকতার ইমেজও আকৃষ্ট করছে ভোটারদের।
নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। নির্বাচন নিয়ে স্থানীয়রা আলাপ-আলোচনা করলেও অপরিচিত কাউকে দেখলে আলোচনা থেমে যাচ্ছে। তবে অনেক এলাকায় দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদেরও খুনসুটি করতেও দেখা গেছে।
স্থানীয় একজন ভোটার বলেন, ‘গিয়াস উদ্দিনের অনেক জায়গায় এজেন্ট হতে সাহস করবেন না। ভোট থাকলেও এটা তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে গিয়াস উদ্দিনের প্রচারণা কমিটির প্রধান মাইনুল ইসলাম মিলটন বলেন, ‘সব জায়গায় আমাদের কর্মী আছে। কৌশলগত কারণে এখনই সব প্রকাশ করা হচ্ছে না।’
তবে অভিমান ভাঙাতে চেষ্টার কমতি রাখছেন না নৌকার প্রার্থী। প্রতিটি পাড়ামহল্লা চষে মাহবুব রুহেল। নির্বাচনী প্রচারণায় উঠান বৈঠকে জোর দিচ্ছেন রুহেল। দিনে একটা ইউনিয়নের নয় ওয়ার্ডে নয়টি উঠান বৈঠক করছেন তিনি। জানতে চাইলে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ইউনিয়ন চেয়ারম্যান-মেম্বার নিয়ে কিছু মান-অভিমান আছে। তবে এটা বড় বিষয় না। এখানে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। মানুষের সামগ্রিক উন্নয়ন হয়েছে। মানুষ এই উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিবে।’
অন্যদিকে গিয়াস উদ্দিনের প্রচারণা কিছুটা ভিন্ন। তিনি দিনে দুটি ইউনিয়নে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সাধারণত হাটবাজারকেন্দ্রিক পথসভায় জোর দিচ্ছেন তিনি। যেখানেই যাচ্ছেন তাকে ঘিরে বড় জমায়েত হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি অবমূল্যায়নের জবাব দেওয়ার কথাও বলছেন তিনি। নির্বাচনে তার অনুসারীদের হামলা করা, পোস্টার ছিঁড়া, প্রধান এজেন্টকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করছেন তিনি।
গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘মানুষ ঈগল প্রতীকে ভোট দিতে মুখিয়ে আছে। যেখানে যাচ্ছি সাড়া পাচ্ছি। এসব দেখে বিভিন্ন এলাকায় আমার কর্মীদের ওপর হামলা হচ্ছে, নির্বাচনের প্রধান এজেন্টকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’
এই দুই প্রার্থী ছাড়া আসটিতে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টির এমদাদ হোসাইন চৌধুরী, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মো. আব্দুল মান্নান, বিএনএফের মো. ইউসুফ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির নুরুল করিম আফছার, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী।