পঞ্চগড় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:১৮ পিএম
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:৫৪ পিএম
কুড়িগ্রামে বছরের প্রথম দিনে ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় শীতের সকালের মানুষের কর্মচঞ্চলতা। প্রবা ফটো
নতুন বছর শুরু হলো দেশের সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার রেকর্ড দিয়ে। সোমবার (১ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ে এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এর আগে ভোর ৬টায় ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তাই বছরের প্রথম দিনে ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় শীত জেঁকে বসেছে উত্তরের এ জেলায়। তবে বিকালে সূর্য উঁকি দিলেও মেঘের আড়ালে লুকোচুরি খেলে হারিয়ে যায়। দিনব্যাপী সূর্যের উত্তাপ ছড়াতে না পারায় তীব্র শীত অনুভূত হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বছরের শুরুতে তাপমাত্রা রেকর্ড হলো ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিদায়ি বছরের ডিসেম্বরে এ জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২৩ দিন। তার মধ্যে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ছিল ছয় দিন; ১১ থেকে ১২ ডিগ্রির মধ্যে ছয় দিন, ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রির মধ্যে ছয় দিন, ১৩ থেকে ১৪ ডিগ্রির মধ্যে চার দিন, ১৪ থেকে ১৫ ডিগ্রির মধ্যে দুই দিনসহ তার ওপরেই তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে।
এদিকে রবিবার সন্ধ্যার পর থেকেই হিম বাতাসে বইছে শীতের ঝাঞ্ঝা। রাত ৯টার মধ্যে প্রায় কোলাহল থেমে যায় শহর ও গ্রামের হাটবাজারগুলোতে। রাত বাড়তে থাকলে কুয়াশার সঙ্গে শিশির বৃষ্টি পড়তে দেখা যায়। ভোর থেকেই কুয়াশার আবরণে দেশের এ প্রান্তিক জেলা। কুয়াশা ঝরা ঠান্ডা বাতাসের কারণে নেমে আসে স্থবিরতা। জীবিকার তাগিদে নিম্ন আয়ের মানুষ বের হলেও শহরের অধিকাংশ বাসিন্দা প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের নলেহাপাড়া এলাকার রবিউল ইসলাম বলেন, ‘নতুন বছরের শুরুতেই কুয়াশা আর বাতাসের কারণে ঠান্ডা লাগতেছে। ১৪-১৫ দিন পর রবিবার ভোর থেকে কুয়াশা। কনকনে শীতের তীব্রতা না থাকলেও হিমেল হাওয়ার কারণেই বেশ ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।’
শহরের ভ্যানচালক আজিজুল হক জানান, কয়েক দিন ঝকঝকে রোদের পর আবার কুয়াশা দেখা দিল। কুয়াশার কারণে ভ্যানে চড়তে চায় না অনেকেই। তারা অটোরিকশায় যায়। এ কারণে কামাই কম হচ্ছে।’
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, ‘হিমালয় এলাকায় অবস্থান হওয়ায় অন্যান্য জেলার তুলনায় পঞ্চগড়ে শীত আগে নামে। এ সময়টাতে তাপমাত্রা অনেক কম থাকে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।’
সিভিল সার্জন মোস্তফা জামান চৌধুরী জানান, শীতের কারণে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, ক্রনিক শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ। গড়ে শতাধিক রোগী আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এ ছাড়া হাসপাতালে আউটডোরে ঠান্ডাজনিত দুই শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। চিকিৎসার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে নিরাময় থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেছেন চিকিৎসকরা। বিশেষ করে, পচা-বাসি খাবার পরিহার এবং উষ্ণতা রক্ষা করা জরুরি।’
জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘পঞ্চগড় শীতপ্রবণ জেলা। এখানে প্রায় দিনই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করে। শীত মোকাবিলায় জেলা-উপজেলা প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি আছে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ২৬ হাজার কম্বল পাওয়া গেছে। প্রকৃত গরিব, অসহায় ও শীতার্তদের উপহার হিসেবে এসব শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। আরও শীতবস্ত্র চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। সমন্বয় করে বেসরকারি সংগঠন, সংস্থা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগেও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে।’