টাঙ্গাইল-৩ ভোটচিত্র
হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:১০ পিএম
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:২০ পিএম
ফাইল ছবি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ও টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক কামরুল হাসান খান। তিনি দেশের বিখ্যাত নাট্যকার মামুন অর রশীদের ছোট ভাই। আর স্বতন্ত্র (ঈগল) প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খানের ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা। উপজেলা আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে সভা-সমাবেশসহ নির্বাচন করছে নৌকার প্রার্থী কামরুল হাসান খানের পক্ষে। অপরদিকে রানা তাদের ‘খান পরিবারের’ অনুসারীদের নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ফলে এ আসনের নির্বাচন আওয়ামী লীগ বনাম ‘খান লীগের’ লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে বলে এলাকাবাসী আলোচনা করছেন। প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। ফলে জমজমাট হয়ে উঠেছে নির্বাচনী লড়াই। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় সরব আসনটি। কামরুল হাসান খানের জন্য এ আসনটি প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আসনটিতে মোট সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও লড়াই হবে দুই প্রার্থীর মধ্যে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ভোটের লড়াই শুরু হয়ে গেছে। এদিকে ঘাটাইল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগের দলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য হয়েও আতাউর রহমান খানের সাথে আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মীর সম্পর্ক ছিল না। তিনি তার ছেলে আমানুর রহমান খান রানার ব্যক্তিগত কর্মী-সমর্থক নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। প্রচারণার শুরু থেকেই দুইপক্ষ থেকে নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর, দলীয় কর্মীদের হুমকি দেওয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। তাই নির্বাচনী উত্তাপের পাশাপাশি উত্তেজনাও ছড়িয়ে পড়েছে এ আসনে।
টাঙ্গাইল-৩ আসনে ১৯৭০ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন শামসুর রহমান খান শাহজাহান। তিনি ১৯৭৩ ও ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শামসুর রহমান খান শাহজাহান স্বতন্ত্র প্রার্থী আমানুর রহমান খান রানার চাচা। এছাড়া ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লুৎফর রহমান খান আজাদ। শামসুর রহমান খান শাহজাহান এবং লুৎফর রহমান খান আজাদ চাচাতো ভাই। বিগত ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় মতিউর রহমানকে। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১২ সালে মতিউর রহমান মৃত্যুবরণ করেন। উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম লেবু। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আমানুর রহমান খান রানা। বিগত ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে আমানুর রহমান খান রানা দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই বছরই পুলিশি তদন্তে আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় আমানুর রহমান খান রানার সম্পৃক্ততার বিষয়টি বের হয়ে আসে। পরে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। কয়েক বছর আত্মগোপন ও হাজতবাস করতে হয় তাকে। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগ তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। প্রায় তিন বছর হাজতবাস করে বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন তিনি। মামলাটি বিচারাধীন। বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমানুর রহমান খান রানার বাবা সাবেক ব্যাংকার আতাউর রহমান খানকে এক প্রকার ডেকে নিয়ে এই আসনে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। রাজনীতির বাইরে থাকা সাবেক ব্যাংকার আতাউর রহমান খান এমপি নির্বাচিত হন। তারপর থেকেই বিভিন্ন সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাথে খান পরিবারের কর্মী-সমর্থকদের হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটেছে প্রতিনিয়ত। হামলার শিকার হয়ে অনেককেই পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছে। সেই থেকে আমানুর রহমান খান রানার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থানীয়ভাবে ‘খান লীগ’ নামে পরিচিতি পায়।
ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম লেবু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ্য ব্যক্তিকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। ঘাটাইলের মানুষ দীর্ঘদিন পরে যোগ্য, সৎ প্রার্থী পেয়েছেন। দীর্ঘ এক যুগ যারা সংসদ সদস্য ছিলেন, তারা কোনো উন্নয়ন করে নাই, মানুষের জন্য কাজ করে নাই। ঘাটাইলের মানুষ এবার অপশক্তি দূর করে উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য আগামী ৭ জানুয়ারি নৌকা মার্কাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে। দলীয় প্রার্থী কামরুল হাসান খানের পক্ষে উপজেলা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের সকল নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে কাজ করছে।
কামরুল হাসান খান ঘাটাইলবাসীকে নিয়ে অনেক পরিকল্পনা করছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী ঘাটাইল উপজেলাবাসী আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নৌকা উপহার দেবে।’ আমানুর রহমান খান রানাও আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘আমি শতভাগ আশাবাদী ঘাটাইলের মানুষ আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে।’ এ আসনে অপর প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন আব্দুল হালিম (জাতীয় পার্টি), জাকির হোসেন (বিএনএম), সাখাওয়াত খান সৈকত (বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল), হাসান আল মামুন (এনপিপি), আব্দুল আজিজ খান (জাকের পার্টি)। আসনটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭৩। পুরুষ ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৯০, নারী ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮৮১ ও হিজড়া ২ জন।