× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চট্টগ্রাম-২ আসন

ফটিকছড়িতে একতারার ভরে নৌকা টালমাটাল

এস এম রানা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:৪২ পিএম

আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:৩৬ পিএম

(বাঁয়ে) নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী ও আবু তৈয়ব

(বাঁয়ে) নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী ও আবু তৈয়ব

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির একতারা প্রতীকের ভরে টালমাটাল হয়ে উঠেছে নৌকা। স্থানীয় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নৌকা ছেড়ে একতারার সুরে মুগ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আপাতত একতারার সুরের মূর্ছনায় মুগ্ধ হতে চাইছেন না। তারা বরং ঘূর্ণিবায়ুতে উত্তাল নদীতে সৃষ্ট তরঙ্গমালা পাড়ি দিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে বদ্ধপরিকর। অভিমানী কর্মীরা যেন পণ করেছেন তারা আপাতত একতারার সুরে মুগ্ধ হবেন না! 

শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রামের দুইজন শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতা দলীয় প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু তৈয়ব ও মোহাম্মদ শাহজাহানকে ডেকে নেন। সেখানে নৌকার প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার উপস্থিত হলেও তৈয়ব ও শাহাজাহান উপস্থিত হননি। ফলে বৈঠক অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়। এরপর রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। শীর্ষ নেতাদের কাছে তথ্য জানার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাহলে নৌকাসহ সব প্রার্থীই নির্বাচনে থাকুক। জনগণ যাকে ভোট দেবেন তিনিই জয়ী হয়ে আসবেন।’ 

এর আগে গত বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসনটিতে জটিল সমীকরণ শুরু করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ। তিনি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পরদিন বৃহস্পতিবার দলটির দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ ইব্রাহীম মিয়া দাবি করেন, ‘ফটিকছড়ির নৌকার নেতা-কর্মীরা এখন থেকে সুপ্রিম পার্টির একতারা সমর্থন করবেন। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ চিঠি দেবে।’

বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির এমন প্রচারণার পর ফটিকছড়িতে নৌকার কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। কিন্তু একতারায় সমীকরণ বদলের যে হাওয়া শুরু হয়, তা শুরুতে ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগ ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দিলেও পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ফোন করে নৌকার প্রচারণা বন্ধ করে একতারা সমর্থনের জন্য মৌখিক নির্দেশনা দেন। এরপর উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণে সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান ফোন করে বিষয়টি ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরীকে অবহিত করেন। 

কিন্তু শুক্রবার ফোনে নির্দেশনার পরদিন শনিবার ও গতকাল রবিবার ফটিকছড়িতে নৌকার প্রার্থী সারাদিন গণসংযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, ফটিকছড়ির নৌকার কর্মী-সমথর্করা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাকে নৌকা প্রতীক প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। তাই নিশ্চয়ই ফোনটি আমাকেই করতে হবে।’ 

এমন বক্তব্য দিয়ে প্রার্থী মূলত প্রচারণা চালিয়ে চাওয়ার পথ সুগম রাখলেন এবং সারাদিন প্রচারণাও করলেন। প্রার্থীকে সরাসরি ফোন করা হয়নি এমন দাবি করে প্রার্থীর সঙ্গে মাঠে আছেন ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরীও। তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত দল। এখানে কর্ম বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া আছে। আমাকে ফোন করলেই সেটি বাস্তবায়িত হবে এটি অসম্ভব ব্যাপার। যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করার কথা, সেই প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। সুতরাং নেতা-কর্মীরা মাঠে আছে। তাদের ফেরার সুযোগ নেই। তারা ফিরতেও চাচ্ছে না।’ 

সাধারণ সম্পাদক এমন বক্তব্য দিয়ে নিশ্চিত করেছেন, দলীয় ফোন তিনি পেয়েছেন। কিন্তু শুধু ফোন পেয়েই নেতা-কর্মীরা মাঠ ছাড়তে নারাজ। একই সঙ্গে ‘নৌকা ঘাটে বেঁধে রেখে একতারায় মুগ্ধ হতে চাইছেন না তারা।’ স্থানীয় আওয়ামী লীগ মাঠে থেকে নির্বাচন করতে চাইলেও অন্য দুটি দল নিয়ে অম্লমধুর সমস্যায় পড়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দলটির একজন কেন্দ্রীয় নেতা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘যে কাজটি শুরুতে করলে সহজ হতো, সেটি এখন কঠিন হয়ে গেল। নেতা-কর্মীরা নৌকা নিয়ে মাঠে নেমে যাওয়ার পর তাদের দমিয়ে রাখা কঠিন। আবার সেখানে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান পদে থাকা দুই ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখন একটি দলকে সমর্থন দিলে অন্য দলটি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে। সার্বিকভাবে ফটিকছড়ি আসনের সমীকরণ আপাতত জটিল হয়ে উঠেছে।’

নৌকার কর্মীদের একতারায় স্থানান্তরের যে মৌখিক নির্দেশনা প্রক্রিয়া আওয়ামী লীগ শুরু করেছে সেটিকে ভালোভাবে নেয়নি বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। এমনিতেই মাইজভাণ্ডারী তরিকার দুটি দলের প্রধানদের মধ্যে সম্পর্কের বেশ দূরত্ব আছে। সেখানে ভাজিতা সাইফুদ্দিন আহমদের একতারায় যদি নৌকা মুগ্ধ হয়, তাহলে ‘ফুলের মালা’ (প্রতীক) গলায় পরা বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়বে—এটা সহজেই অনুধাবন করেন দলটির চেয়ারম্যান ও বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন মহাজোটভুক্ত দল। এমন কিছু হলে মহাজোট পর্যায়ে আলোচনা দরকার। সেটা না করে অন্য কিছু করলে তা হবে আওয়ামী লীগের দলীয় বিষয়। নৌকা যদি একতারায় মুগ্ধ হয় তাহলে ফুলের মালা নিয়ে আপনি বিশেষ কিছু ভাববেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। সময় হলে জানতে পারবেন।

তবে দলটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিকে যদি আওয়ামী লীগ সমর্থন দেয় তাহলে তরিকত ফেডারেশন নিজস্ব চিন্তাভাবনা করবে।’ সেই চিন্তা ভাবনা কি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া? এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, ‘চিন্তাভাবনা চলছে দলীয় পর্যায়ে। এখনো মন্তব্য করার সময় আসেনি।’ আবার রোববার প্রধানমন্ত্রী যেহেতু সব প্রার্থীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন, সেই ক্ষেত্রে সুপ্রিম পার্টির অবস্থানই বা কি হবে সেটা রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ষ্পষ্ট হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জানতে সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান শাহজাদা সাইফুদ্দিন আহমদকে ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, ‘দল শুরুতেই তরিকত ফেডারেশন বা সুপ্রিম পার্টির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারত, এখন মাঝপথে এসে নৌকা ঘাটে বেঁধে রাখার কথা বলা হচ্ছে। এতে আমরা হতাশ। আবার প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু বলতেও পারি না। তবে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সুপ্রিম পার্টিকে সমর্থন করলে তরিকত নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার শঙ্কা আছে। এখন দুটি দলকে কী দিয়ে নির্বাচনে রাখবেন সেটি দলীয় প্রধান নিশ্চয় বুঝবেন।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা