রাজশাহী-১
রাজু আহমেদ, রাজশাহী
প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:৫৪ পিএম
আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:৪৩ পিএম
রাজশাহীর গোদাগাড়ীর রাহি গ্রামের নারীরা চিত্রনায়িকা মাহিকে পাশে পেয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে। এসময় মাহি তাদের আলিঙ্গন করেন এবং ট্রাক মার্কায় নিজের জন্য ভোট প্রার্থনা করেন। প্রবা ফটো
অতিসাধারণ পোশাকে এক নারী পোড়ামাটির আঁকাবাঁকা মেঠোপথে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছুটে চলেছেন গ্রামের অবহেলিত পরিবারগুলোর মন জয় করতে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে গৃহিণীদের জড়িয়ে ধরছেন। লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের চাকচিক্যময় জীবন ছেড়ে ঢালিউডের চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির এমন আবির্ভাব গ্রামবাসীকে নাড়া দিয়েছে। সিনেমার কাহিনীর মতো শুনতে মনে হলেও এটাই এখনকার চিত্র। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি।
আসনটিতে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ১০ জন। তবে মাহি তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করছেন বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীকে। ফারুক চৌধুরীকে তিনি একজন সিনেমার চৌধুরী সাহেবদের মতো শোষক ও নির্যাতনকারী বলেই মনে করেন। মাহির দাবি, এলাকাবাসী তাকে ফারুক চৌধুরীর নির্যাতনের বিষয়ে সবকিছু বলেছেন, যা তাকে ব্যথিত করেছে। মাহি নির্বাচিত হলে অন্তত এলাকার সকলের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন বলে জানান।
মাহি যখন যেখানেই ভোট চাইতে যাচ্ছেন, পুরো গ্রাম তাকে দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। কারোবা আবদার তার সাথে সেলফি তোলার, কারোবা বাড়িতে দুদণ্ড বসিয়ে আপ্যায়নের। মাহি কাউকেই নিরাশ করছেন না। সবসময় মাহির মুখে মিষ্টি হাসি, যা আসনটিতে নির্বাচনী প্রচারণাকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে। সাদা রঙের ছাদখোলা একটি গাড়িতে করে মাহি যখনই রাস্তা দিয়ে হাত নাড়তে নাড়তে যাচ্ছেনÑ সবাই তার পিছু নিচ্ছেন। বাড়ির নারীরা রাস্তার দুই ধারে ভিড় করে তাকে দেখছেন। মাহি তার হাতে থাকা একটি খেলনা ট্রাক দেখিয়ে সকলকে আগামী ৭ জানুয়ারি ট্রাক মার্কায় ভোট দেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন।
তানোর-গোদাগাড়ী উপজেলার ভোটারদের একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে আদিবাসী ও সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্য। সেই সাথে রয়েছে হতদরিদ্র পরিবার। এসব পরিবারের বসবাস এমন গ্রামগুলোতেই বেশি করে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন মাহি। তার এই প্রচারণার ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় বিষয়টি হলো অন্য প্রার্থীরা গেলে তাদের যেভাবে সমাদৃত বা আপ্যায়ন করা হচ্ছে কিন্তু মাহির ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের ১২টি পরিবারের বাস মাটিকাটা গ্রামে। মাহি ওই গ্রামটিতে যাওয়ার আগেই সেখানে একটি ভিন্নধর্মী আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়। বুধবার দুপুরে মাহি সেখানে পৌঁছার সাথে সাথে তাকে হিন্দুরীতি অনুসারে ফুল-চন্দন ও আগুন দিয়ে স্বাগতম জানানো হয়। মাহিকে একটি লাল বেনারশি শাড়ি ও তার স্বামীকে একটি সাদা ধুতি দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। এ সময় ওই এলাকায় উৎসুক মানুষের ভিড়ে মাহি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। মাহি গ্রামবাসীর উদ্দেশে বলেন, আমি আপনাদের এই ভালোবাসার মর্যাদা দিতে চাই। আপনারা আমাকে ট্রাক মার্কায় ভোট দিয়ে একটিবার সেই সুযোগ করে দিন।
এর আগে মাহি আদিবাসী পল্লীতে গেলে তাকে স্বাগত জানিয়ে তার পা ধুইয়ে দেন আদিবাসী গ্রামের নারীরা। গ্রামবাসী জানান, এটা তাদের ঐতিহ্য। তারা যাকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করেন, তাদের তারা এভাবেই স্বাগত জানান। এ সময় মাহি বলেন, আমি শুনেছি আলুর জমিতে পানি দিতে না পারার কারণে আপনাদের দুই সন্তান জমিতে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। বিএমডিএর ডিপ-টিউবয়েল অপারেটররা এমপির সহযোগিতায় আপনাদের শোষণ করে চলেছে। তারা এলাকায় পানির মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছে। আমি নির্বাচিত হতে পারলে এসব থেকে আপনাদের পরিত্রাণ দেব সবার আগে।
শুক্রবার তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা গ্রামে প্রচারণা শেষে মাহি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসছে। আমার প্রতিপক্ষ যিনি আছেন, আমাকে নিয়ে তার মাথাব্যথা বাড়ছে। ১ হাজার ৩০০-এর বেশি গ্রাম আছে এ আসনে। আমি প্রত্যেকটিতে যাবার চেষ্টা করছি। তবে সময় খুব অল্প। যে গ্রামেই যাচ্ছি, সেখানেই দারুণ সাড়া পাচ্ছি। গ্রামের মানুষ আমাকে আপন করে নিচ্ছে, আপ্যায়ন করছে এবং আমার ডাকে সাড়া দিচ্ছে। তাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ করতে পারব না। প্রত্যেকটা গ্রামবাসী আমার জন্য অপেক্ষায় আছে মাহি কখন আসবে। কোনো কারণে আমি কোনো গ্রাম মিস করলে তারা আমাকে আবেগ দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে, বলছে, ভোট দেব না। চিন্তা করছি এত কম সময়ে কীভাবে সবার কাছে যাব।
মাহির দাবি, এলাকায় অর্ধেক ভোটারই নারী। তিনি নির্বাচিত হলে এলাকার নারীদের স্বাবলম্বী করতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেবেন। সেই সাথে তরুণ ভোটারদের জন্যও নানা প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেবেন, যা তাদের ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। মাহির স্বামী রকিব সরকার বলেন, ওর (মাহির) যোগ্যতা আর আমার মানুষকে ভালোবাসতে পারার দক্ষতা আমাদের প্রচারণায় সহযোগিতা করছে। আশা করি, এলাকার মানুষ নতুনকে বেছে নেবে এবং সুযোগ করে দেবে তাদের সেবা করার।