× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নগদ লাভের আশায় জমির সর্বনাশ

আমানত উল্যাহ, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর)

প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:২৬ পিএম

ফসলি জমির মাটি কেটে দুটি ট্রাক্টরে ভরা হচ্ছে। নেওয়া হবে পার্শ্ববর্তী ইটভাটায়। সম্প্রতি কমলনগর উপজেলার চরআফজল গ্রাম। প্রবা ফটো

ফসলি জমির মাটি কেটে দুটি ট্রাক্টরে ভরা হচ্ছে। নেওয়া হবে পার্শ্ববর্তী ইটভাটায়। সম্প্রতি কমলনগর উপজেলার চরআফজল গ্রাম। প্রবা ফটো

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে কৃষিজমির মাটি অবৈধ ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে। ওপরের অংশের মাটি কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে। জমির মালিকেরা নগদ টাকার আশায় এসব মাটি না বুঝে বিক্রি করছে। আর অপরিকল্পিতভাবে মাটি খনন করায় ফসল উৎপাদন কমার আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ইটভাটা রয়েছে ৪৩টি। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে মাত্র ২টি। বাকি ৪১টি ভাটার কোনো ছাড়পত্র বা লাইসেন্স নেই। এরপরও এসব ভাটায় থেমে নেই ইট পোড়ানো। ইট তৈরির প্রধান কাঁচামাল মাটি। তাই আশপাশের ফসলি জমির মাটি ইট তৈরির জন্য অবাধে ব্যবহার করছেন ভাটা মালিকরা। বছরের পর বছর জমির মালিকদের অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির অসাধু মাটি ব্যবসায়ী কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কিনে নেন। পরে তারা সেই মাটি বেশি দামে ইটভাটায় বিক্রি করেন। আবার কোথাও কোথাও সরাসরি ভাটার মালিকরাই মাটি কিনে নেন। কেউ বিক্রি করতে না চাইলে জোরজবস্তিরও অভিযোগ রয়েছে।

কৃষিবিদদের মতে, জমির উপরিভাগের চার থেকে ছয় ইঞ্চি (টপ সয়েল) গভীরের মাটিতেই মূল পুষ্টিগুণ থাকে। মূলত মাটির এই স্তরে ফসল উৎপাদিত হয়। মাটির এই স্তর কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়। এ জন্য অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করেও কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায় না। তা ছাড়া কৃষিজমি ওপরের এ টপ সয়েল হারিয়ে ফেললে, তা স্বাভাবিক হতে প্রায় ১০-১২ বছর লাগে। 

সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলার চররমিজ ইউনিয়নের চরআফজল গ্রামে দেখা যায় টিবিএল ব্রিকস ফিল্ড নামে একটি ইটভাটার জন্য কৃষিজমির মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভাটায় ইট পোড়াতে ব্যবহার হচ্ছে জ্বালানি কাঠ। একই দৃশ্য দেখা গেল চরআলগি ইউনিয়নের কলকোপা গ্রামের এসবিএল ব্রিকস ফিল্ড নামের ইটভাটায়ও। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু এ দুটি ইটভাটায়ই নয় বৈধ-অবৈধ সব ইটভাটায়ই অবাধে আশপাশের ফসলি জমির মাটি কেটে আনা হয়। আর ইট পোড়াতে ব্যবহার করা হয় জ্বালানি কাঠ। কোনো ভাটায়ই পরিবেশসম্মতভাবে কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানো হয় না। 

চরআফজল গ্রামের কৃষক সাঈদুল হক বলেন, ‘জমি একটু উঁচু হওয়ায় সবজি ভালো হতো। তবে ধানের আবাদ করার জন্য আড়াই বিঘা জমির মাটি ইটভাটায় ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি।’ তবে জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি করায় কী ধরনের ক্ষতি হয় তা তিনি জানেন না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ তারেক বলেন, ‘এভাবে মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। আর টপ সয়েল কেটে নেওয়া জমিতে দ্বিগুণ সার দিতে হবে। ফলনও স্বাভাবিকের চেয়ে কম হবে। দুই-তিন বছর ওই জমি থেকে ভালো ফলন আশা করা যায় না।’ 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কৃষিজমির মালিক জানান, মূলত ফসলি জমির ওপরের অংশের মাটি ইটভাটায় বিক্রি হয়ে থাকে। এতে করে দেড় থেকে দুই বছর ওই জমিতে ফসল উৎপাদন হয় না। প্রচুর পরিমাণ জৈবসার, খৈল, জিপসাম, ফসফেট, পটাসসহ বিভিন্ন সার ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু ইটভাটার মালিকরা সমাজের প্রভাবশালী। তাদের কথামতো মাটি না দিলে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। তাই ফসলি জমি নষ্ট করে মাটি বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।

চররমিজ এলাকার সিরাজুল ইসলাম, চরমেহার এলাকার মফিজ মিয়াসহ কয়েকজন জানান, ইটভাটা মালিকদের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কাছে উপজেলা প্রশাসনও অসহায়। মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে চিমনি ভেঙে আগুন নিভিয়ে দেওয়া হয়, জেল-জরিমানা করা হয়। এরপরও থেমে নেই ইট পোড়ানো।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসবিএল ব্রিকস ফিল্ডের মালিক শাহেদ আলী মনু বলেন, ‘উপজেলায় মাত্র ২টি ভাটার লাইসেন্স রয়েছে। বাকি ৪১টির কারও লাইসেন্স নেই। লাইসেন্স পাওয়ার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করেছি। কৃষকদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে মাটি ক্রয় করছি। জোর করে মাটি নিচ্ছি না।’ একই বক্তব্য চরআফজল গ্রামের টিবিএল ব্রিকস ফিল্ডের মালিক ছানাউল্লাহ ছানুরও।

উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি খলিল উল্যাহর সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কথা বলতে চাইলে তিনি সবগুলো ইটভাটার সব ধরনের অনুমতি আছে বলে লাইন কেটে দেন। সাধারণ সম্পাদক সানাউল্লাহ বলেন, ‘বিভিন্ন দপ্তর ম্যানেজ করেই এসব অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা করছি।’

‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩’ অনুযায়ী কৃষিজমির মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা নিষিদ্ধ। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকার জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ আইন প্রয়োগ করবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, ‘এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সব ইউএনওকে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে আমরা এ ব্যাপারে আরও কঠোর হবো। কোনোভাবেই অবৈধ ইটভাটায় ইট পোড়াতে দেওয়া হবে না।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, ‘অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে মামলা করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা