× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অটোরিকশায় সংসারের হাল ধরেছেন রোজিনা

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল

প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:৪০ পিএম

অটোরিকশা চালক রোজিনা বেগম

অটোরিকশা চালক রোজিনা বেগম

টাঙ্গাইল পৌর শহরের রাস্তায় প্রতিদিনই দেখা যায় এক নারী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালককে। যাত্রী নিয়ে ছুটে চলছেন গন্তব্যে। হাজারো পুরুষ চালকের ভিড়ে তিনিই একমাত্র নারী। বলছি জেলার বাসাইল উপজেলার আইসড়া গ্রামের রোজিনা বেগমের কথা। সড়ক দুর্ঘটনায় অসুস্থ স্বামীর অনুপস্থিতিতে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন রোজিনা একাই। গত পাঁচ বছর চালাচ্ছেন অটোরিকশা। 

রোজিনার বাবা ছিলেন তাঁতশ্রমিক। তিন বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় রোজিনা। অভাবের সংসারে রোজিনার বিয়েও হয়ে যায় তাড়াতাড়ি। বিয়ের পর জন্ম নেয় দুই কন্যাসন্তান। স্বামী রফিকুল ইসলাম, পেশায় ছিলেন অটোরিকশাচালক। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় রফিকুলের এক চোখ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। আরেকটি চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই চোখেরও দৃষ্টি কমতে থাকে একসময়। ফলে কর্মক্ষম মানুষটি পুরোপুরিই অচল হয়ে পড়েন। একদিন ভাবলেন, স্বামীর যেহেতু অটোরিকশা আছে, সেটা চালানো শুরু করলে কেমন হয়। যেই ভাবনা সেই কাজ। স্বামীকে বললেন, তাকে চালানো শিখিয়ে দিতে। গ্রামের স্কুলের মাঠে রফিকুলের কাছে চালানো শিখে ফেলেন এক দিনেই। বুকে সাহস সঞ্চার করে অটোরিকশা নিয়ে একদিন চলে আসেন টাঙ্গাইল শহরে। সেই থেকে আজ অবধি অটোরিকশার মাধ্যমেই সংসার চালান রোজিনা। 

টাঙ্গাইল পৌরসভা কার্যালয়ের তথ্যমতে, শহরে চলাচলের জন্য ৪ হাজার ২০০ ইজিবাইক ও ৫ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশার অনুমতি আছে। যানজট এড়াতে ইজিবাইক জোড় ও বিজোড় সংখ্যায় ভাগ করা হয়েছে। কিন্তু রোজিনাকে দুই শিফটে চালানোর নির্দেশ দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। 

অটোরিকশায় বসেই কথা হয় রোজিনার সঙ্গে। তিনি বলেন, যখন অভাব-অনটনে দিন কাটাচ্ছিলাম তখন মানুষ ঠাট্টা করেছে। যখন জীবনের তাগিদে অটোরিকশা চালাতে শুরু করি তখনও নানা কথা বলেছে। এখন তারাই আমাকে সম্মান করেন। তারা বুঝেছে, নারীরাও সবই করতে পারে।  এই কাজের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অটো চালানোর চিন্তাটা খুব সহজ ছিল না। ছোট দুইটা মেয়েকে বাড়িতে রেখে অটোরিকশা নিয়ে সারা দিন রাস্তায় থাকতে হয়। ভাড়া বাড়িতে থাকার খরচ কমাতে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে অল্প পরিমাণে জমি কিনেছিলাম। সেখানে সরকার প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর তুলে দেয়।

রোজিনার বড় মেয়ে পড়ে আইসড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। ছোট মেয়ে পড়ে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। রোজিনা বলেন, ‘আমার তো থেমে গেলে চলবে না। মেয়েদের শিক্ষিত করতে হবে। ধারদেনা শোধ করতে হবে। সরকার যদি আমার পাশে দাঁড়ায় তাহলে অন্য কোনো কাজ করব।’

রোজিনার সাহসিকতার বিষয়ে স্থানীয় নারীসংগঠক সিরাজুল জান্নাত বলেন, ‘অনেক দিন ধরে তাকে দেখছি। পুরুষের মতোই নারীরাও যেকোনো কাজে অংশ নিতে পারে, এটা আবারও প্রমাণ করেছেন রোজিনা। তাকে স্যালুট জানাই। ’ 

টাঙ্গাইলের সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহ আলম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তিনি এখন পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নাই। তিনি যদি আবেদন করেন, অবশ্যই আমরা তাকে সহযেগিতা করব।’ 


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা