সদরপুর-চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:৩৮ পিএম
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী ইউনিয়নের হাওলাদার কান্দি গ্রামের আড়িয়াল খাঁ নদের তীরে চলছে ফসলি জমির মাটি কাটার ধুম। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিন-রাত ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে একটি মহল। এতে দিন দিন কমে যাচ্ছে কৃষিজমি। এক্সকাভেটর দিয়ে এমনভাবে মাটি কাটা হচ্ছে, একটু বৃষ্টি হলেই পাশের জমি ভেঙে পড়বে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাশের জমির মালিকও। সেই সঙ্গে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ঢেউখালী ইউনিয়নের হাওলাদার কান্দির পাকা সড়ক থেকে মাটির রাস্তা নেমে গেছে সোজা পূর্ব দিকে আড়িয়াল খাঁ নদের উৎসমুখ পর্যন্ত। নদীভাঙনের কারণে পদ্মা চরের বাসিন্দারা এখন উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করছে। চরে জেগে ওঠা জমিতে বাদাম, ভুট্টা, ধান, কলইসহ নানা শস্য আবাদ করা হয়। হাওলাদার কান্দি চরের মাটির রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যেতেই ফসলি জমির মাঝ বরাবর দেখা মিলল একে একে দুটি এক্সকাভেটরের। রাস্তার পাশেই দুটি এক্সকাভেটর দিয়ে অবাধে চলছে মাটি কাটা। কৃষিজমির মাটি কেটে ৩০-৪০ ফুট গভীর করা হয়েছে। গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে এক্সকাভেটর রেখেই পালিয়ে যান চালক। পরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও সেখানে মাটি কাটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকে পাওয়া যায়নি।
কৃষিবিদদের মতে, জমির উপরিভাগের চার থেকে ছয় ইঞ্চি (টপ সয়েল) গভীরের মাটিতেই মূল পুষ্টিগুণ থাকে। মূলত মাটির এই স্তরে ফসল উৎপাদিত হয়। মাটির এই স্তর কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরাশক্তি নষ্ট হয়। এজন্য অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করেও কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায় না। তা ছাড়া কৃষিজমি ওপরের এ টপ সয়েল হারিয়ে ফেললে তা স্বাভাবিক হতে প্রায় ১০-১২ বছর লাগে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানে উপস্থিত একাধিক কৃষক জানান, স্থানীয় প্রভাশালীরা জোরপূর্বক তাদের জমির ওপর দিয়ে রাস্তা বানিয়ে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে। প্রতিরাত ৭টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কয়েকশ গাড়ি বালু-মাটি কেটে বিক্রি করে। পাশের জমি থেকে গভীর করে মাটি কেটে নেওয়ায় তাদের জমি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। খাঁড়া করে মাটি কাটায় তাদের জমি ভেঙে যাচ্ছে। এ ছাড়া মাটি বহনকারী যান চলাচলের জন্য ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। তাদের বলেও থামানো যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জমির মালিক জানান, নদ-নদীর চরের নতুন মাটিতে শস্য খুব ভালো ফলে। জমিতে বাদাম, ভুট্টা, কলইয়ের চাষ করা হয়। তবে পাশের জমির মালিক মাটি কেটে বিক্রি করছে। মাটি টানার জন্য ব্যবহৃত গাড়ি চলাচলের কারণে তার জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া ধুলো ও রাতভর গাড়ির শব্দের কারণে তাদের বসবাস করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাটি কেটে বিক্রি করার কাজে মুখ্য ভূমিকা রাখা স্নেহ হাওলাদার ঢেউখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এই জমির মালিক আমি নিজেই। আমার জমি থেকেই মাটি কেটে বিক্রি করছি।’
ঢেউখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি মাটি কাটার বিষয়ে তেমন কিছুই জানি না। স্নেহ এক দলের রাজনীতি করে, আমি অন্য দলের করি। তবে আমার জানামতে, নদের চরের যে জায়গার মাটি কাটা হচ্ছে, তা ব্যক্তিমালিকানাধীন। সেই মাটিই ইউপি সদস্য স্নেহ কেটে বিক্রি করছেন।’
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ), ২০১৩ অনুযায়ী, কৃষিজমির মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা নিষিদ্ধ। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকার জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ আইন প্রয়োগ করবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
জানতে চাইলে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ মোরাদ আলী বলেন, ‘সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছি। হাওলাদার কান্দি গ্রামের কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়টি জানা নেই, আপনার মাধ্যমে জানলাম। খোঁজখবর নিয়ে মাটি কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’