ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গাজী
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:৩৭ পিএম
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:২১ পিএম
প্রতীক বরাদ্দের পর চলছে নির্বাচনী প্রচারণা। এলাকায়-এলাকায় বইছে নির্বাচনী আমেজ। ভোট চেয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো
সংসদীয় আসন ২০৪, নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ উপজেলা)। রাজধানীর উপকণ্ঠে গড়ে ওঠা উপজেলাটিতে ৪ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। এই জনপদে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগা শুরু হয়েছে মাত্র ১৫ বছর। স্রোতস্বিনী শীতলক্ষ্যার দুই তীরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা জনপদের মানুষের উন্নত নিরাপদ জীবন পাওয়ার আশা-আকাঙ্ক্ষা আগের চেয়ে তীব্র হয়েছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে এখানে টানা ১৫ বছর সেই আশা-আকাঙ্ক্ষার ছায়া হয়ে আছেন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক। চতুর্থবারের মতো তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার দৌড়ে মাঠে সরব রয়েছেন।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, রূপগঞ্জ থেকে এবার এমপি হওয়ার দৌড়ে শামিল হয়েছেন মোট ৮ জন। অন্য ৭ জনের চেয়ে নির্বাচনের মাঠে যোজন যোজন এগিয়ে আছেন গোলাম দস্তগীর গাজী। এর মূলে অন্যতম কারণ এলাকায় জনসম্পৃক্ততার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারা ও নেতাকর্মীদের পাশে থাকা। জরাজীর্ণ একটি উপজেলাকে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছেন তিনি। এলাকার মানুষ আবার এখানে জনপ্রতিনিধি হিসেবে গাজীকেই দেখতে চান। যে কারণে দলমত নির্বিশেষে তার পক্ষে জোরসে চলছে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে প্রচারণা।
এ প্রসঙ্গে দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান ও রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পছন্দের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী। জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর থেকে গত ১৫ বছর এলাকার মানুষের পাশে তাকে যেভাবে সব সময় পাওয়া গেছে, এটা অন্যদের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। যেকোনো সময়, যেকোনো প্রয়োজনে অসহায়, গরিব, রিকশাওয়ালা, শ্রমিক সবাই তাকে কাছে পেয়েছেন। এলাকায় নিঃস্বার্থভাবে সড়ক যোগাযোগ উন্নয়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্প প্রতিষ্ঠান বাড়ানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ রূপগঞ্জের জন্য ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন তিনি। যা আগে কেউ করে দেখাতে পারেনি।’
প্রতীক বরাদ্দের পর রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রত্যেক এলাকার অলি-গলি নির্বাচনী পোস্টারে ছেয়ে গেছে। পাড়া-মহল্লায় বইছে নির্বাচনী আমেজ। প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। তবে সব দিকে এগিয়ে আছেন নৌকার গাজী। যখন-তখন ভোটারদের কাছে গিয়ে নৌকায় ভোট দেওয়ার প্রার্থনা করছেন তিনি। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র এক প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চলছে গাজীকে ঘিরেই। রাস্তার পাশে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে হোটেল-রেস্তোরাঁয় চলছে গাজীকে ঘিরে নানান আলাপ। মাঠে গাজীর প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীরা অনেকটাই ফিকে হয়ে পড়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, দলের সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের ৯০ শতাংশ নেতাকর্মী গাজীর পক্ষে মাঠে সরব রয়েছেন। তারা ভোটারদের কেন্দ্রে আসার জন্য নানাভাবে উৎফুল্লতা জাগিয়ে তুলছেন। ফলে এবার ভোটার উপস্থিতিও হবে চোখে পড়ার মতো। নেতাকর্মীরা দিন-রাত নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। সার্বিক নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্য ইতোমধ্যে ৭১ সদস্য কমিটি করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মধ্যে ছয়জন, দুই পৌর মেয়রের একজন গাজীর পক্ষে প্রচারে যুক্ত আছেন। এ ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে তার পক্ষে কাজ করছেন ৭টির মধ্যে ৬ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এর বাইরে দাউদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং রূপগঞ্জ ইউনিয়নের সভাপতি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে।
রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রূপগঞ্জের মানুষের পছন্দের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীকে আবার বিপুল ভোটে বিজয়ী করার লক্ষে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণ মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। নৌকা প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার ও মিছিলে গণজোয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। এতেই প্রমাণ মিলেছে– আবার এই এলাকার মানুষ গোলাম দস্তগীর গাজীকে বিজয়ী করে ঘরে ফিরবেন।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গোলাম দস্তগীর গাজী সব দিক দিয়ে ফিট– রণাঙ্গনের বীরপ্রতীক, তিনবারের সংসদ সদস্য, দেশের হাতেগোনা শিল্পপতিদের একজন। তিনি এক/এগারোর সময় জীবনবাজি রেখেছিলেন নেত্রীর জন্য। রূপগঞ্জে গাজীর বিকল্প শুধুই গাজী। গোলাম দস্তগীর গাজী এই এলাকার মানুষের অন্তরে অবস্থান করেন।’
এই আসনে আওয়ামী লীগের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও অতীতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার ওপর ক্ষুব্ধ স্থানীয় নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে দলে অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দেওয়ার।
আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়াকে নিয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘তার সঙ্গে আমি ৪৫ বছর ধরে রাজনীতি করে কোনো দিন ১০০ টাকার উপকার পাইনি। তার পক্ষে যারা প্রচার চালাচ্ছে এরা অধিকাংশ হলো হাইব্রিড। এদের মধ্যে রূপগঞ্জ ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি রিটন প্রধান কিছু দিন আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে শাহজাহান ভূঁইয়ার জন্য কাজ করছে। এসব কারণে তৃণমূলের ত্যাগী নেতারা এখানে শাহজাহান ভূঁইয়াকে চায় না।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মেহের বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ-১ আসন একসময় বিএনপির ঘাঁটি ছিল। ২০০৬ সাল থেকে গোলাম দস্তগীর গাজী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে রাজপথে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। এমপি হওয়ার পর এই জরাজীর্ণ এলাকাকে বদলে দিয়েছেন তিনি। কাঁচারাস্তা থাকায় অজপাড়া হিসেবে একসময় রূপগঞ্জকে মূল্যায়ন করা হলেও বর্তমানে তা উন্নয়নের ছোঁয়ায় আমূল পরিবর্তন হয়েছে। রূপগঞ্জে ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণ, গাজী সেতু, কাঞ্চন সেতু, পুর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, রাস্তাঘাট প্রশস্ত করা, নতুন রাস্তা নির্মাণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ বহু উন্নয়ন হয়েছে।’
রূপগঞ্জ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শীলা রানী পাল বলেন, ‘অসম্প্রদায়িক রূপগঞ্জ গড়ে তুলতে গোলাম দস্তগীর গাজী নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি এমপি হওয়ার পর এখানে সংখ্যালঘুদের ওপর কোনো নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। এলাকার নারীদের উন্নয়নে নানা কাজ করেছেন গোলাম দস্তগীর গাজী।’
তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। প্রতীক বরাদ্দের মাধ্যমে নির্বচনী প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকে আমেজ বিরাজ করছে রূপগঞ্জে। এই আসনে আওমী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীরসহ প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন ৮ জন। তাদের মধ্যে মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া, তৃণমূল বিএনপির মনোনীত দলটির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও জাতীয় পার্টির (জাপা) সাইফুল ইসলাম।
রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আহসান আহমেদ রাসেল বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রমাণ পেলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’