নাঈম ইসলাম, শেরপুর
প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:১২ পিএম
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:৩৬ পিএম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুর জেলায় এবার নতুন ভোটার হয়েছেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৩৭ জন, যা মোট ভোটারের প্রায় ১৫ শতাংশ। জেলার তিনটি আসনেই ভোট উৎসবে প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করবেন নতুন ভোটাররা। নির্বাচন সামনে রেখে তাদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। প্রার্থীরাও নতুন ভোটারদের আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। তবে তরুণ প্রজন্মের এসব ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নের নিশ্চয়তা চায় প্রার্থীদের কাছে।
তিনটি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত ভারতের মেঘালয় রাজ্যঘেঁষা সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার জনসংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ। শেরপুর সদর নিয়ে গঠিত শেরপুর-১ আসন, নকলা-নালিতাবাড়ী নিয়ে গঠিত শেরপুর-২ আসন ও শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী নিয়ে গঠিত শেরপুর-৩ আসন।
জেলা নির্বাচন কার্যলয়ের তথ্য মতে, শেরপুর-১ আসনের নতুন ভোটার ৬৫ হাজার ৫৬১ জন। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৯। শেরপুর-২ আসনের নতুন ভোটার ৬৩ হাজার ১৫২ জন। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১২ হাজার ৩১০ জন। শেরপুর-৩ আসনের নতুন ভোটার ৫৭ হাজার ৬২৪ জন। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৩ হাজার ১৪৪ জন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে নতুন ভোটারদের তালিকা। তারা বলছেন, সুষ্ঠুভাবে ভোট হলেই শুধু তারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন। পাশাপাশি এলাকায় উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন এমন সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার কথাও জানান নতুন ভোটাররা।
শেরপুর পৌর শহরের মোবারকপুর মহল্লার নতুন ভোটার নাজমুল আলম জিহাদ। পড়াশোনা করেন রাজধানীর তেজগাঁও কলেজে। তিনি বলেন, ‘যারা তরুণদের নিয়ে কাজ করবে, আমরা তরুণরা সেই প্রার্থীকেই বেঁছে নেব। আশা করি, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ হবে। যাতে সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।’
স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ও শ্রীবরদী উপজেলার কুড়িকাহনীয়া ইউনিয়নের ভোটার জেনিয়া আক্তার বলেন, ‘আমি যেহেতু মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান তাই আমার জীবনের প্রথম ভোটটা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকেই দিতে চাই। যারা আমার মতো তরুণ রয়েছে, তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে, তারা যেন জীবনের প্রথম ভোটটা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকেই দেয়।’
শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি গ্রাম বাবেলাকোনার নৃগোষ্ঠীর সুপ্রিয়া মারাক বলেন, ‘যাকে সব সময় আমাদের কাছে পাব, যাকে ভোট দিলে এলাকার উন্নয়ন করবে, নৃগোষ্ঠীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে বিপদ-আপদে পাশে থাকবে, নতুন ভোটার হিসেবে তাকেই ভোট দেব।’
নালিতাবাড়ীর ভারতঘেঁষা গ্রাম কালাকোমা। এ গ্রামের নৃগোষ্ঠী তরুণ রাখসন সাংমা বলেন, ‘আমাদের সীমান্তবর্তী এ অঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই বললেই চলে। নাকুগাঁও স্থলবন্দর থাকলেও সেটির প্রায় অচলাবস্থা। এই এলাকাকে ঘিরে সম্ভাবনাময় পর্যটন খাত নিয়েও কাজ হয় না। যারা এসব নিয়ে কাজ করবে তাকেই ভোট দেব।’
নকলা পৌর শহরের বাসিন্দা ও ময়মনসিংহ মোমিনুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থী নাফিসা মুমু বলেন, ‘আমাদের শেরপুরে এখনও রেললাইন, মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় হয়নি। বারবার প্রতিশ্রুতিতেও তা মেলেনি। প্রত্যাশা থাকবে এমন প্রার্থীর, যারা দীর্ঘদিনের এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন করবে।’
শেরপুর সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘এখন যারা নতুন ভোটার আমার মনে হয়, তারা মুক্তিযুদ্ধকে ভালোবাসেন। মুক্তিযুদ্ধ হয়তো দেখে নাই তারা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করে। আশা করি, যারা নতুন ভোটার, যারা দেশকে ভালোবাসে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেই ভোট দেবেন।’
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক সভাপতি নূরুল ইসলাম হিরু বলেন, ‘৭ জানুয়ারি নির্বাচনে শেরপুরের তিনটি আসনে আজকে যারা নতুন ভোটার, সেই ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। আমার অনুরোধ থাকবে নতুন ভোটারদের প্রতি, কারোর কথা প্ররোচিত না হয়ে বিবেক খাটিয়ে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দেবে। তবে প্রার্থীকে ভোটের মাঠের পরিবেশ সুশৃঙ্খল করে এসব ভোটারকে টানতে হবে।’
শেরপুর জেলা নির্বাচন অফিসার মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক বলেন, ‘শেরপুর জেলায় পাঁচটি উপজেলায় তিনটি সংসদীয় আসন। তিনটি আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন ভোটার বৃদ্ধি পেয়েছে। সকল বৈধ ভোটার আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার তালিকায় আছেন। তারা সবাই নিজ নিজ আসনের কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।’