আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম ও আবদুল্লাহ আল-মামুন, ফেনী
প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:৪৪ পিএম
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:৪২ পিএম
চমেক হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরির অভিযোগে ফেনীর পরশুরাম থেকে পুলিশ দুই নারীকে আটক করে। প্রবা ফটো
নিজের শিশু অসুস্থ, জীবনমরণ শঙ্কা। সেই অসুস্থ শিশুকে রেখে কিনা হাসপাতাল থেকে উধাও হলেন তার মা। তবে উধাও হওয়ার আগে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন আরেক মায়ের সদ্যোজাত শিশুকে। এ ঘটনা ঘটে গত মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। তবে বুধবার (২০ ডিসেম্বর) ভোরে ফেনীর পরশুরাম থেকে চুরি যাওয়া শিশুটিকে উদ্ধার করার পাশাপাশি ঘটনায় যুক্ত দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুর ১২টায় পাঁচলাইশ থানায় সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মহানগর পুলিশের পাঁচলাইশ জোনের সহকারী কমিশনার আরিফ হোসেন।
সহকারী কমিশনার আরিফ হোসেন জানান, গত ১৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের এক বেসরকারি হাসপাতালে একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন আসমা উল হোসনা। লোহাগাড়ার আধুনগরের বাসিন্দা আবু মোহাম্মদ নোমানের স্ত্রী তিনি। আসমা ও তার সন্তানের শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় চিকিৎসকেরা তাদের চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ১৭ ডিসেম্বর স্বজনেরা চমেক হাসপাতালে নিয়ে যান মা-মেয়েকে। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হাসপাতালের ষষ্ঠ তলার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে মাকে এবং ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) ভর্তি করানো হয় বাচ্চাটিকে।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শিশুর কাছে কোনো অভিভাবক থাকতে পারেন না। মঙ্গলবার সকালে রাউন্ডের সময় শিশুটির মা আসমা ও দাদি এনআইসিইউর ৩১ নম্বর বেডে শিশুকে রেখে গেটের বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। দুপুর ২টায় শিশুটির খালা এনআইসিইউর ভেতরে গিয়ে দেখেন তার বোনের মেয়ে বেডে নেই। শিশুটির স্বজনেরা ঘটনাটি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও নিরাপত্তারক্ষীদের জানান। পাশাপাশি বিভিন্ন ওয়ার্ডে শিশুটিকে খুঁজতে থাকেন। এ ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হলে একপর্যায়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশের সহযোগিতা চায়। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে।
পুলিশ জানায়, হাসপাতালে অনেক ভিড় থাকায় সিসিটিভি ফুটেজ থেকে তেমন কোনো তথ্য মেলেনি। তবে আরও তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, এনআইসিইউতে আরেকটি অসুস্থ বাচ্চা ভর্তি রয়েছে; কিন্তু তার অভিভাবক সকালেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেছেন। এসব তথ্যের ভিত্তিতে ওই শিশুর মা নাসিমা আক্তারের মোবাইল ফোন নম্বর ট্র্যাকিং করে পুলিশ জানতে পারে, তিনি ফেনীর পরশুরামে অবস্থান করছেন। পরে নাসিমা আক্তারের ফেনীর বাড়ি থেকে চার দিনের ওই নবজাতককে উদ্ধার করে পুলিশ। পাশাপাশি নাসিমা আক্তার (২৩) ও তার মা খারু আক্তারকেও (৪২) আটক করে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়।
পাঁচলাইশ জোনের সহকারী কমিশনার বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, নিজের বাচ্চা অসুস্থ হওয়ায় তাকে হাসপাতালে রেখে অন্যের সুস্থ বাচ্চাকে চুরি করে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছেন নাসিমা। যদিও তিনি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি স্বীকার করেননি। তিনি আমাদের কাছে দাবি করেছেন, ভুলে অন্যের শিশু নিয়ে গিয়েছেন। শিশুটিকে বুকের দুধও খাইয়েছেন। কিন্তু তার এমন দাবি কোনোভাবেই যৌক্তিক ও বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাদের দুজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ওই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘চমেক হাসপাতালের এনআইসিইউ ওয়ার্ড থেকে চুরি যাওয়া নবজাতককে ফেনীর পরশুরাম থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুইজনকে আটক করা হয়েছে। আটক নাসিমা আক্তারের শিশুকন্যাও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। ওই শিশুটি রোগা ও প্রতিবন্ধী। হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসে তাদের অসুস্থ শিশুকে রেখে অপেক্ষাকৃত সুস্থ নোমান-আসমা দম্পতির নবজাতক বাচ্চাকে কৌশলে তারা নিয়ে যান। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।