ট্রেনে দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়ে অঙ্গার
নেত্রকোণা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:৫২ পিএম
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:২৪ পিএম
ট্রেনে দুর্বৃত্তের আগুনে মারা গেছে নেত্রকোণার পপি ও তার শিশুসন্তান। পুত্রবধূ ও নাতিকে হারিয়ে ৬৫ বছরের বৃদ্ধা শহর বানুর আহাজারি। মঙ্গলবার নেত্রকোণা সদর উপজেলার বরুনা গ্রামে। প্রবা ফটো
‘কী দোষ করেছিল আমার বৌমা, ছোট্ট নাতিটা? কেন তাদের আগুনে পুড়িয়ে মারা হলো?’ ৬৫ বছরের বৃদ্ধা শহর বানু যখন প্রশ্নগুলো করছিলেন, তাকে ঘিরে আছে বহু মানুষ। কিন্তু কারও মুখে নেই কোনো শব্দ। যেন সবার মাঝে রাজ্যের নীরবতা। ভেজা চোখ নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শহর বানু আবারও বলে উঠলেন, ‘আমার ছেলের স্ত্রী ও সন্তানকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।’
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ট্রেনে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা গেছে শহর বানুর ছোট ছেলে মিজানুর রহমানের স্ত্রী নাদিরা আক্তার পপি ও তাদের তিন বছরের সন্তান ইয়াসিন আরাফাত। মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোরে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনে তারাসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। পরে তাদের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়। বাকি দুজনের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ডিএনএ পরীক্ষা করে তাদের পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
নাদিরা আক্তার পপি নেত্রকোণা সদর উপজেলার বরুনা গ্রামের মিজানুর রহমানের স্ত্রী। তিনি পূর্বধলা উপজেলার আলমপুর গ্রামের ফজলুল রহমানের মেয়ে। একই পরিবারের দুই সদস্যের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় বরুনা গ্রামে চলছে শোকের মাতম। বাড়িতে আহাজারিতে পরিবেশ ভারী করে তুলেছেন স্বজনরা।
মিজানুর রহমানের মা শহর বানু বলেন, ‘আমি আর আমার দাদা ভাইয়ের সোনামুখ দেখতে পাইতাম (পাব) না। দাদা ভাই যাওনের (যাওয়ার) সময় আমারে (আমাকে) কইছিল (বলেছিল) দাদু যাই। আবার আইবামনে (আসব)। বৌমা (পুত্রবধূ) কইছিল- মা শরীরের খেয়াল রাইখেন। আর কোনো দিন তাদের ফিরে পাইতাম না।’
খবর পেয়ে নাদিরা আক্তার পপির বাবা ফজলুল হক ছুটে এসেছেন মেয়ের স্বামীর বাড়িতে। তিনি বলেন, ‘কী অপরাধ, কী দোষে আমার নিষ্পাপ নাতি ও মেয়েকে আগুনে পুড়ে মরতে হলো। মেয়ে ও নাতিকে আর ফিরে পাব না, যারা আগুন দিয়েছে শুধু তাদের বিচার চাই।’
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবদুল মজিদ ও শহর বানু দম্পতির দুই ছেলে। ছোট ছেলে মিজানুর রহমান ঢাকায় কারওয়ান বাজারে হার্ডওয়্যারের (পার্সের) ব্যবসা করেন। স্ত্রী ও দুই সন্তান তার সঙ্গে কারওয়ান বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকত। ১১ ডিসেম্বর তাদের বাড়িতে পাঠান মিজানুর। সোমবার রাতে তারা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। ঢাকায় তেজগাঁওয়ে পৌঁছাতে না পৌঁছাতে দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়ে প্রাণ হারিয়েছে মিজানুরের স্ত্রী ও এক সন্তান। অগ্নিকাণ্ডের সময় মায়ের কোলে ছিল তিন বছরের ইয়াসিন। সন্তানকে বুকে জড়িয়ে প্রাণ হারান নাদিরা। এ সময় সঙ্গে থাকা পপির ভাই তার আরেক ছেলে ফাহিমকে নিয়ে লাফিয়ে পড়ে নিজদের রক্ষা করেন।
সংশ্লিষ্টে সূত্রে আরও জানা যায়, মোহনগঞ্জ থেকে ট্রেনটি ছাড়ে রাত ১১টায়। তেজগাঁও স্টেশনে পৌঁছালে যাত্রীরা নামতে শুরু করেন। পপিদের পেছনের আসনে দুজন লোক ছিল, তারা নামার সঙ্গে সঙ্গে ওই আসন থেকে আগুন জ্বলে ওঠে। মুহূর্তেই আগুন পুরো বগিতে ছড়িয়ে পড়ে।
কমলাপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আহাম্মেদ বিশ্বাস প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, ময়নাতদন্ত শেষে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে পপি ও শিশুসন্তানের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নেত্রকোণা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া তাবাসসুম বলেন, মরদেহ এখনও গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায়নি। নিহতদের পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।