রংপুর অফিস
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:৪৮ পিএম
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:২৫ পিএম
রংপুর সার্কিট হাউসে জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। প্রবা ফটো
প্রার্থীরা যদি আন্তরিক ও সচেতন না হয় তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলের প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যদি আন্তরিক ও সচেতন না হয়, তাদের মাঝে পারস্পরিক আস্থা এবং সঠিক আচরণ না করে তাহলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা দুরূহ হবে।’
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে রংপুর সার্কিট হাউসে জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তিনি এ কথা বলেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমাদের তরফ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে প্রশাসন ও কমিশন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে।
এদিন সকালে রংপুরের ৬টি সংসদীয় আসনের ৩৬ জন প্রার্থীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন সিইসি। দেড় ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সিইসির কাছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলা হয়। এর মধ্যে রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের (নৌকা) বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথ সরকার বিটু (ট্রাক)। এ ছাড়া নির্বাচন তফসিল ঘোষণার ১১ দিনের মধ্যে তিনজন ওসিকে রদবদল করা, এমপির পছন্দসই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের আসন্ন নির্বাচনে সম্পৃক্ত করার অভিযোগ তোলেন ওই আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী আনিছুল ইসলাম মণ্ডল (লাঙ্গল)।
রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির (নৌকা) বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল (লাঙ্গল)। রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাশেক রহমানের (নৌকা) বিরুদ্ধে প্রতীক বরাদ্দের এক সপ্তাহ আগে থেকে নির্বাচনী সভা-সমাবেশ, মিছিল, ক্রীড়াসামগ্রী বিতরণসহ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে নানা অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার (ট্রাক)। সেই সঙ্গে প্রতীক বরাদ্দের আগে মিঠাপুকুরে এক লাখ পোস্টার সাঁটানো, পছন্দসহ ব্যক্তিদের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে তালিকা প্রদানের অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে স্বাস্থ্য সচিবের বিরুদ্ধে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুর আলম মিয়া (লাঙ্গল)। সেই সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে নিজের পোস্টারের ওপর আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর ( নৌকা) পোস্টার সাঁটানোর অভিযোগ করেন তিনি।
রংপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বিশ্বনাথ সরকার বিটু বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সব প্রার্থীকে সমান সুযোগ দেওয়া উচিত। কিন্তু আমার আসনে তা হচ্ছে না। এমপি সাহেব সরকারি প্রটোকল নিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন, যা নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন। আমি এ বিষয়ে সিইসিকে বলেছি।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী আনিছুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, এমপি সাহেব তফসিল ঘোষণার পর তিনজন ওসিকে নিজ আসনে রদবদল করিয়েছেন। তিনি বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে বাদ দিয়ে দলীয় লোকজনকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে আমি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিইসিকে অভিযোগ দিয়েছি। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।
রংপুর-৪ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী আচরণ বিধি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত রয়েছেন। তিনি যে আচরণ বিধি মানছেন, এটি আমি দেখতে চাই। নির্বাচনী পরিবেশ এখন জনগণের মাঝে আস্থা আনতে পারেনি। আমি সিইসিকে বলেছি আমার আসনে যেন প্রার্থীরা আচরণ বিধি মেনে চলেন।
রংপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার বলেন, আমার আসনে নৌকার প্রার্থীর বাবা বর্তমান এমপি আশিকুর রহমান সাহেব পুলিশ প্রটোকল নিয়ে ছেলের জন্য ভোট প্রার্থনা করছেন, যা নির্বাচনী আচরণ বিধি পরিপন্থি। ২ মাস ধরে নৌকার প্রার্থীর পোস্টার নির্বাচন অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসসহ গোটা মিঠাপুকুরে সাঁটানো রয়েছেন। আমি অভিযোগ করার পরও সেই পোস্টার অপসারণ করানো সম্ভব হয়নি। নৌকার প্রার্থী পছন্দসই ব্যক্তিকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন। আমি সিইসিকে বলেছি যেন নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়।
রংপুর-৬ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুর আলম মিয়া বলেন, গত নির্বাচনে স্বাস্থ্য সচিব পীরগঞ্জে এসে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে। এবারও এমনই আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়টি আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেছি। তিনি যদি পীরগঞ্জে এসে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন, তবে জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে যেতে পারে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার নিতে হবে স্বাস্থ্য সচিব ও নৌকার প্রার্থীকে। এ ছাড়া আমার পোস্টারের ওপর নৌকার লোকজন পোস্টার সাঁটিয়েছেন এবং নৌকার প্রার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী র্যাব-পুলিশ নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করেছেন বলেও তিনি সিইসির কাছে অভিযোগ করেছেন।