খাদেমুল ইসলাম, মাদারগঞ্জ (জামালপুর)
প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:১৬ পিএম
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:২৬ পিএম
বোয়াল, কাতল, আইড়, চিতল, ইলিশ, রূপচাঁদা আর কোরালে মতো হরেকরকম মাছ সারি সারি সাজানো। আছে নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, খেলনা, কসমেটিক্স ও রকমারি খাবারের পসরা। আগ্রহ নিয়ে দরদাম করছেন ক্রেতারা। কেউ কিনছেন, কেউবা ঘুরে দেখছেন। কেউ আবার বন্ধুদের নিয়ে তুলছেন ছবি। বলছি জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার পলাশপুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলার কথা।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) জামাই মেলায় গিয়ে দেখা মিলল এমন চিত্র। গত ১৬ ডিসেম্বর শনিবার উপজেলার চরপাকেরদহ ইউনিয়নের পলাশপুরের সকালের বাজার কালার মোড় এলাকায় মেলাটি শুরু হয়। পাঁচ দিনব্যাপী মেলাটি চলবে আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত। জামাই মেলা হিসেবে পরিচিতি পেলেও এই মেলা স্থানীয়দের কাছে মাছের মেলা বা পৌষ মেলা নামেও পরিচিত। মেলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় এলাকার জামাইরা এসেছেন শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে। তারাই মূলত মেলার বাহারি জিনিসপত্রের ক্রেতা।
মেলা আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এবারের মেলায় বিভিন্ন ধরনের তিন শতাধিক দোকান বসেছে। আছে চটপটি-ফুচকা থেকে মুখরোচক নানা পদের খাবারের দোকানও। শিশুদের বিনোদনের জন্য আছে নাগরদোলা, চরকি, দোলনাসহ নানা আয়োজন।
সরেজমিন দেখা যায়, দূরদূরান্ত থেকে আসা শিশু থেকে শুরু করে নানা বয়সি মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। হরেকরকম পণ্যের পাশাপাশি গ্রামীণ এ মেলায় ঘোড়দৌড়, মইদৌড়, লাঠিখেলা ছাড়াও শিশুদের জন্য রয়েছে নানা আয়োজন। জামাই মেলার প্রধান আকর্ষণ মাছ। এ মেলায় নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছসহ চিতল, কোরাল, বোয়াল, আইড়, কালিবাউশ, গুলসা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ। সেসব মাছের ওজন ৫ থেকে ২০ কেজি বা তারও বেশি।
মেলায় এসেছিলেন ফাজিলপুর গ্রামের জামাই শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছি। বোয়াল মাছ, মিষ্টি, পান-সুপারি কিনলাম। আরও অনেক জিনিসপত্রও মেলায় উঠেছে। মেলায় এসে খুব ভালো লাগল।
মেলায় আসা আহমদ হোসেন জানান, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি জামাই মেলায় এসেছেন। মেলা থেকে ১০ কেজি ওজনের একটি রুই মাছ ও সন্তানদের জন্য খেলনা কিনেছেন তিনি।
মেলার শৃঙ্খলা কমিটির আহ্বায়ক আশরাফুল আলম জানান, ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনায় মেলা জমে উঠেছে। নারী-পুরুষ ও শিশুদের ঢল নেমেছে। মেলাটি গত বছরও খুব সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়েছিল। তিনি আশা করছেন, এবারও সুন্দরভাবেই শেষ হবে।
মেলা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান বলেন, রক্তের বন্ধনকে ধরে রাখতেই এ মেলার আয়োজন। আমরা চাই সন্তানরা বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, ভাই-বোন, আত্মীয়তার বন্ধনে যেন মিলেমিশে থাকে। মেলায় গতবারের চেয়ে এবার বেশি মানুষের সমাগম ঘটছে। প্রায় সব ধরনের জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে। মেলায় প্রায় ১৫ কোটি টাকার কেনাবেচা হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
চরপাকেরদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বদরুল আলম সরদার বলেন, দ্বিতীয়বারের মতো ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ জামাই মেলা পলাশপুর সকাল বাজারে আয়োজন করা হয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে নানা বয়সের মানুষ এ মেলায় আসছেন এবং নিজের পছন্দমতো মাছসহ বিভিন্ন পণ্য কিনছেন। মেলাটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
প্রতিবছর পৌষ মাসের প্রথম শনিবার এ মেলার আয়োজন করা হবে বলেও জানান তিনি।