নুপা আলম, কক্সবাজার
প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:৩৮ পিএম
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:১২ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
কক্সবাজারের টেকনাফে র্যাব পরিচালিত এক অভিযানে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়াবা উদ্ধারের পর র্যাবের দায়ের করা মামলা থেকে এক আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে টেকনাফ থানা পুলিশ। এ মামলার নথিপত্র প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
গত ২১ জুন টেকনাফের হোয়াইক্যং র্যাব ক্যাম্পের সদস্য নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় এ মামলাটি করেন। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ ফয়সাল। তিনি ১ অক্টোবর এই মামলাটির অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে দাখিল করেন। যেখানে মামলার ২ নম্বর আসামি টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরার মুনাফের ছেলে ওসমান গণিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সেখানে অভিযুক্ত করা হয় একই ইউনিয়নের নাইক্ষ্যংখালী এলাকার মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ ফারুককে।
র্যাবের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০ জুন সকাল ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে হ্নীলার নাইক্ষ্যংখালীর মোহাম্মদ ফারুকের বসতবাড়িতে র্যাব এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে একজন ব্যক্তি পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়াবাসহ মোহাম্মদ ফারুক নামে একজনকে আটক করা হয়। ফারুক এবং অভিযানের সময় উপস্থিত এলাকার লোকজন পালিয়ে যাওয়া যুবক ওসমান গণি বলে জানায়। র্যাব পরের দিন মোহাম্মদ ফারুককে প্রধান আসামি ও ওসমান গণিকে পলাতক আসামি উল্লেখ করে টেকনাফ থানায় মামলা করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তিন মাসের মাথায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। যেটি ১ অক্টোবর অগ্রগতির সুপারিশ করেন টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি মো. জোবায়ের সৈয়দ।
ইতোমধ্যে টেকনাফ থানা থেকে মো. জোবায়ের সৈয়দ বদলি হয়ে কক্সবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংযুক্ত হয়েছেন।
গত মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে মো. জোয়াবের সৈয়দ বলেন, তিনি এখন টেকনাফ থানায় নেই। বিষয়টি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাই ভালো জানবেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করার পরামর্শ দেন তিনি।
র্যাবের দায়ের করা এজাহারে বলা হয়েছে, সকাল ১০টার পরে এই অভিযান। দিনের আলোয় পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে শনাক্ত করা সহজ। আটক মোহাম্মদ ফারুক ও এলাকার লোকজন এবং মামলার সাক্ষীরা ওসমান গণিকে শনাক্ত করায় মামলায় পলাতক আসামি করা হয়েছিল। কিন্তু তিন মাস পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এ আসামিকে কিসের ভিত্তিতে অব্যাহতি দিয়েছেন তা তদন্তকারী কর্মকর্তাই জানেন বলে মন্তব্য করেন র্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টেকনাফ থানার এসআই মাসুদ ফয়সাল জানান, মামলার তদন্তকালে আসামি মোহাম্মদ ফারুককে জিজ্ঞাসাবাদে ওসমান গণি নামে কাউকে চেনেন না বলে তাকে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে মামলার সাক্ষীদের কেউ ওসমান গণি নামে অভিযানের সময় ঘটনাস্থলে থাকা বা পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেননি। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তিগত সহায়তায় ওসমান গণির অবস্থান অভিযানস্থলে না হওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় অভিযোগপত্রে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আদালতে দাখিল করা চার্জশিট নিয়ে আদালত পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তার স্বাধীন ভূমিকা রয়েছে। তিনি ঘটনার সার্বিক দিক ও বিষয়বস্তু পর্যালোচনা করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া তদন্ত কর্মকর্তার তৈরি প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এবং ওসি যাচাই করে সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পুলিশ সুপার পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। এরপরই তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদনটি আদালতে জমা দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে প্রতিবেদনের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরাই ভালো করে বলতে পারবেন। তারপরও বিষয়টির খোঁজ নেওয়া হবে বলে জানান মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম।
কক্সবাজার পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল সাম্প্রতিক কিছু মামলার অভিযোগপত্র-সংক্রান্ত বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, র্যাব মামলা দিল, ইয়াবার বিশাল চালান, পলাতক আসামিকে পুলিশ বাদ দিয়ে দিল। এর আগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের করা অপর একটি মামলার অভিযোগপত্র থেকে প্রধান দুজনকে বাদ দিয়েছে খোদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তদন্তকারী কর্মকর্তা। এতে মাদক ব্যবসায়ী বা সিন্ডিকেট বারবার রক্ষা পেয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আরও সজাগ থাকার অনুরোধ জানান তিনি।