শেরপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:১৭ পিএম
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:১৮ পিএম
গারো পাহাড়ে বিজয় দিবস পালনের একটি মুহূর্ত। প্রবা ফটো
শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ি জনপদে মহান বিজয় দিবসে ব্যতিক্রমী এক আয়োজন করেছে স্থানীয় বাগাছাস (বাংলাদেশ গারো ছাত্র সমাজ) ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ডের নেতারা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কলাপাতায় সারা শরীর মুড়িয়ে ভিক্ষুক বা পাগলের বেশে তথ্য আদান করতেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। একাত্তরের যুদ্ধকালীন স্মৃতিকে বুকে লালন করতেই এমন আয়োজন জানান আয়োজকরা।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী সিংগাবড়ুর্ণা ইউনিয়নের মেঘাঢল বাজার (শয়তান বাজার), বাবেলাকোনা, হারিয়াকোনা ও কর্ণজোড়া এলাকায় মহান বিজয় দিবসে কলাপাতায় মুড়িয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল ও টাকা তুলে তা দিয়ে রান্না করে খাওয়ার কর্মসূচি পালন করে আসছে।
বাংলাদেশ গারো ছাত্র সমাজের শ্রীবরদী উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক কাঞ্চন মিস্টার মারাক জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় গারো পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা। বাঙ্কার খনন করে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যায় প্রস্তুত থাকে ঘাতকরা। এ অবস্থায় নানা রূপ ধারণ করে তথ্য নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকার লোকজন খবর পৌঁছাত ওপারের মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে। এর মধ্যে অনেকেই কলাপাতা মুড়িয়ে ভিক্ষুক সেজে ভিক্ষা করত আর পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের অবস্থান চিহ্নিত করে খবর পৌঁছাত মুক্তিযোদ্ধাদের। একই সঙ্গে খাবারও জোগাড় করত।
বাবেলাকোনা গ্রামের সুরুবী মারাক বলেন, ‘একাত্তরে যুদ্ধের সময় কলাপাতায় মুড়িয়ে, নিজের চেহারা লুকিয়ে ভিক্ষা করবার আইতো ক্যাম্প এরিয়ায়। আর সেখান থেকে খবর নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দিত। পাশাপাশি চাল ডাল নিয়ে খাইত। পরে মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের বাড়ির কাছে একজন বিহারিকে মাইরা ফেলাইছিল। এরপর থেকেই বিজয় দিবসে এ আয়োজন করে।’
বাংলাদেশ গারো ছাত্র সমাজের শ্রীবরদী উপজেলা শাখার সভাপতি জীবন ম্রং বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেকেই পাগল, ভিক্ষুক, শ্রমিক, সবজি বিক্রেতা সেজে ক্যাম্পে প্রবেশ করত, আর বিভিন্ন তথ্য সেখান থেকে নিয়ে মুক্তি ক্যাম্পে পৌঁছাত। এভাবে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব কাজ করে দেশকে স্বাধীন করতে ভূমিকা রেখেছে। আর সেই স্মৃতি ধরে রাখতেই এমন আয়োজন।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় খেতকামলা সাজতাম, ভিক্ষুক সাজতাম, পাগল সাজতাম। তথ্য নিয়ে গিয়ে হামলা করতাম। গারো পাহাড়ে জঙ্গল আছিল, এখানে খুব রিস্ক ছিল। আমি নিজেও এমন পাগলের বেশে তথ্য সংগ্রহ করে এনেছিলাম।’
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ডের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর এই আয়োজন করা হয়। তবে এবারই বড় পরিসরে উৎসবমুখর পরিবেশে করা হয়েছে।