ঝিনাইদহ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:৩৭ পিএম
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:০৭ পিএম
কিডনি বিক্রি করতে চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে ‘গরিব কবি’ নামে পরিচিত ঝিনাইদহের বাসিন্দা গুলজার হোসেন। সংগৃহীত ফটো
‘গরিব কবি’– পত্রিকার শিরোনাম হওয়ার পর এই নাম ব্যাপক পরিচিতি পায়। ব্যক্তির আসল নাম গুলজার হোসেন। নিজের দুঃখবোধ, আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর পাওয়া না পাওয়ার কথা কবিতার পঙ্তিতে গাঁথেন তিনি।
গুলজার হোসেন পেশায় বালুশ্রমিক। স্বল্প আয়ের মানুষটির সংসারের চাকা ঘোরে অভাব-অনটনকে সঙ্গী করে। তার সঙ্গে এক প্রবাসীর পরিচয় ঘটে তিন মাস আগে। সেই লোক তাকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই টাকা পেলে জমি কিনে বাড়ি বানাতে চেয়েছিলেন গুলজার। তবে কথা রাখেননি প্রবাসী। তাই কিডনি বিক্রির বিনিময়ে টাকার সংস্থান করতে চান গুলজার।
শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে গুলজার হোসেন লিখেছেন, ‘৪ লাখ টাকা হলে আমি আমার একটি কিডনি বিক্রি করে দেব। আপনাদের কারও যদি কিডনির প্রয়োজন হয়, তাহলে দয়াকরে অবশ্যই আমার সাথে একটু যোগাযোগ করার ব্যবস্থা করে দেবেন, আমার খুব উপকার হবে। দয়া করে কেউ এই পোস্টটি অবহেলার চোখে দেখবেন না। আমি সত্যি সত্যিই বলছি। আপনারা কেউ আমার এই উপকারটুকু করুন।’
তার স্ট্যাটাস অনেকেই ছুঁয়ে গেছে। নেটিজেনরা মন্তব্য করেছেন– একজন মানুষ কতটা অভাবে থাকলে এভাবে মিনতি করে?
গুলজার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘একটি জাতীয় দৈনিকে আমাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক ব্যক্তি আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি বলেছেন আমার বসতভিটা তৈরি করার জন্য চার লাখ টাকা দেবেন। তাকে বিশ্বাস করে সদর উপজেলার বাড়িবাথান গ্রামে তিন শতক জমি কেনার জন্য আমি ৫০ হাজার টাকা ঋণ করে বায়না করি।’
গুলজার আরও বলেন, ‘বায়না করে প্রবাসীর কাছে গেলে তিনি আমাকে হতাশার সাগরে ডুবিয়েছেন। কোনো টাকা দিতে পারবেন না বলে আমাকে জানিয়ে দেন। তাই কিডনি বিক্রি করে বিনিময়ে ৪ লাখ টাকা মানুষের কাছে চেয়েছি।’
গুলজার হোসেনের বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নে। বর্তমানে পরিবার নিয়ে একই উপজেলার পাগলাকানাই ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। তার সঙ্গে থাকেন কলেজ পড়ুয়া ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী।
গুলজার জানান, স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেননি তিনি। পড়ালেখা চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত। তার বাবার পরিবারে ছিল অভাব। ছোট থেকে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করেন তিনি। একপর্যায়ে এসে বালুশ্রমিক বনে যান। কাজের পাশাপাশি সংবাদপত্র ও মানুষের কাছ থেকে বই নিয়ে পড়ার অভ্যাস তৈরি হয় তার। সেই থেকে ধীরে ধীরে কবিতা রচনায় মননিবেশ করেন গুলজার। বালুর ট্রাকে দেশের এপ্রান্ত থেকে অপ্রান্ত ঘুরে বেড়ান, আর সময় পেলেই কবিতা রচনা করেন।
গুলজারের স্ত্রী সেলিনা বেগম জানালেন স্বামীর এই প্রতিভাকে শ্রদ্ধা করেন তিনি। সব সময় স্বামীকে ভরসা দিয়ে পাশে থাকেন।
সেলিনা বেগম বলেন, ‘আমার জন্ম অভাবি এক পরিবারে। এখন আমার দুঃখবোধ নেই। স্বামীর সংসারে ভালোই আছি। নিজেদের কোনো জমিজমা নেই। এটা ভেবে মাঝে মাঝে কষ্ট হয়।’
গুলজার হোসেন কি শুধুই প্রবাসীর ওপর অভিমান করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন– প্রশ্নের জবাবে স্থানীয়রা বলছেন, তিনি যেহেতু নিজের আবেগ থেকে রচনা করেন, এটা তার স্বভাব হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। সেই অবস্থান থেকে এমন স্ট্যাটাস দিয়ে থাকতে পারেন তিনি।
ঝিনাইদহ পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আরেফিন কায়সার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে এভাবে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে সে ঠিক করেনি। তার স্ট্যাটাস থেকে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। আর ওই প্রবাসীও গুলজারের সঙ্গে যা করেছে তা নিন্দনীয়।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ঝিনাইদহ জেলা শাখার সাবেক সভাপতি আকরাম হোসেন বলেন, ‘আমি গুলজারের ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখেছি। তার সঙ্গে আসলে প্রবাসী প্রতারণা করেছে, কাজটা ঠিক হয়নি।’