কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:৫৯ পিএম
কাশিয়ানীতে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, হাসপাতালে স্বজনদের আহাজারি। প্রবা ফটো
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে একটি ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের পর এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে মায়ের মৃত্যু হলেও নবজাতক কন্যা শিশুটি সুস্থ আছে।
শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে কাশিয়ানী উপজেলা সদরের নিরাময় নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া মাসুরা বেগম উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের রামপুরা গ্রামের ভ্যানচালক কালাম শেখের স্ত্রী।
ঘটনার পর রাতেই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ নিহতের স্বজনদের সঙ্গে ২ লাখ টাকায় দফারফা করেন। তবে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
মারা যাওয়া প্রসূতির স্বজনরা জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রসূতি মাসুরা বেগমকে কাশিয়ানীর নিরাময় নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অস্ত্রোপচার করতে নিয়ে আসা হয়। দুপুর ২টায় মাসুরা বেগমকে অস্ত্রোপচারের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। ক্লিনিক মালিক ও ডা. আসলামুজ্জামান অস্ত্রোপচার করেন। ১৫ মিনিট পর জন্ম নেয়াও নবজাতক শিশুকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করা হয়। পৌনে ১ ঘণ্টা পর মাসুরা বেগমকে অচেতন অবস্থায় অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে কেবিনে আনা হয়। তবে মাসুরাকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে বলে স্বজনদের জানান চিকিৎসকরা। দীর্ঘ সময় পরও জ্ঞান না ফেরায় স্বজনদের সন্দেহ হয়। তারা প্রসূতির নাকের কাছে হাত নিয়ে দেখে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে। পরে ক্লিনিকের নার্সদের ডাকতে গেলে কাউকে পায়নি। এ ঘটনার পর নার্সরা ক্লিনিক ছেড়ে পালিয়ে যান।
মাসুরার বোন জামাই রিপন মোল্লা বলেন ‘চিকিৎসক ভুল অপারেশন করে অপারেশন থিয়েটারেই মাসুরাকে মেরে ফেলেছে। ক্লিনিক মালিক ডা. আসলামুজ্জামান নিজেই অচেতন ও অপারেশন করেন। তিনি মাসুরার মৃত্যুর বিষয়টি আমাদের না জানিয়ে গোপন রেখেছিলেন। আমরা চিকিৎসকের শাস্তি দাবি করছি।’
এর আগেও এ ক্লিনিকটিতে একাধিক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অনেকে ভুল চিকিৎসায় পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। ক্লিনিকটি দ্রুত বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী ও অস্ত্রোপচার চিকিৎসক ডা. আসলামুজ্জামান কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিহতের স্বজনদের সঙ্গে ২ লাখ টাকায় মিমাংসার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘সিজারের নির্দিষ্ট তারিখের ১০ দিন আগে প্রসূতির স্বজনরা সিজার করিয়েছেন। সিজারের তারিখ ছিল এই মাসের ২৫ তারিখে। এর আগে একটি নবজাতক মারা যাওয়ায়, তারা এবার আগেই সিজার করতে এসেছিলেন। এছাড়া ওই নারীর শারিরীক কিছু সমস্যাও ছিল। যা তার স্বজনরা আমাদেরকে জানায়নি। যে কারণে এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।’
কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাহমুদুল হাসান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রসূতির মৃত্যুর বিষয়ে আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’