× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ফের বগুড়া-৪ ছেড়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর ‘জাসদ হটাও’ কৌশল

মোহন আখন্দ, বগুড়া

প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:১৬ পিএম

আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০০:০৭ এএম

বগুড়া-৪ আসনে জাসদ প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেন (বামে) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. জিয়াউল হক মোল্লা

বগুড়া-৪ আসনে জাসদ প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেন (বামে) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. জিয়াউল হক মোল্লা

বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বগুড়ায় একাধিক আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হলেও জেলার কাহালু এবং নন্দীগ্রাম উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনের নির্বাচনী ইতিহাস ভিন্ন। প্রায় ৪৫ বছর আগে দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই আসনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হতে পারেনি। অবশ্য এবার বিএনপির বর্জনের মুখে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। নেতাকর্মীরাও প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তার আগেই ‘জোটের রাজনীতি’ টিকিয়ে রাখতে আওয়ামী লীগ ওই আসনটি গেল ৪টি নির্বাচনের (২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ এবং ২০২৩ সালের উপনির্বাচন) মতো আবারও শরিক দল জাসদের কাছে ছেড়ে দেওয়ায় সেই সম্ভাবনাটি হারিয়ে গেল। 

বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন দল এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। প্রতিবাদে তারা এবার জাসদকে বয়কটের কথা ভাবছেন। এমনকি ভবিষ্যতে জাসদ এবং তার কোনো প্রার্থী যাতে আর আসন ভাগা-ভাগির আব্দার করতে না পারে সেজন্য এবার সরকারের ‘গুডবুকে’ থাকা বিএনপি ছেড়ে আসা সাবেক এমপি ডা. জিয়াউল হক মোল্লাকে সমর্থন দেওয়ার পরিকল্পনাও করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৪ দলের শরিক জাসদের প্রার্থীর জামানাত বাজেয়াপ্ত করানোর টর্গেটও নেওয়া হয়েছে। তবে সাংগঠনিক শাস্তির মুখে পড়ার আশঙ্কায় কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যে বিকল্প খুঁজবেন সেটি ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক বিএনপি নেতা ডা. জিয়াউল হক মোল্লাও জেনে গেছেন। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘নিজ দলের প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিকল্প হিসেবে আমাকেই বেছে নেবেন বলেই বিশ্বাস করি।’

এই আসনে আওয়ামী লীগ কাহালু উপজেলা কমিটির সভাপতি হেলাল উদ্দিন কবিরাজকে মনোনয়ন দিয়েছিল। তবে গত বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে তার কপাল পোড়ে। ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু অন্য ৬টি আসনের মতো বগুড়া-৪ আসনটিও জোটের শরিক জাসদের কাছে ছেড়ে দেওয়ার কথা জানান। 

নির্বাচনী পরিসংখ্যান বলছে, বগুড়া-৪ আসনটি ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দখলেই ছিল। তবে ১৯৭৮ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠার পরের বছর ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে সেটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়ে যায়। এরপর ১৯৮৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জেলার অন্য আসনে জয় পেলেও বগুড়া-৪ আসনে কখনও জিততে পারেনি। এমনকি ২০০৮ সালে বগুড়ার আরও দু’টি আসনে আওয়ামী লীগ জয় পেলেও বগুড়া-৪ আসন অধরাই থেকে যায়।

২০০৮ সাল থেকেই বগুড়া-৪ আসনটি আওয়ামী লীগ জাসদকে ছাড় দিয়ে আসছে। এমনকি জাসদের প্রার্থী ২০০৮ এবং ২০১৮ সালে নৌকা প্রতীকও দেওয়া হয়। নির্বাচনগুলোর মধ্যে বিএনপির বর্জনের মুখে কেবল ২০১৪ সালে জাসদ প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেন বিজয়ী হতে পেরেছিলেন। আর বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য পদত্যাগের পর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে আলোচিত-সমালোচিত ইউটিউবার হিরো আলমের বিরুদ্ধে মাত্র ৮৩৪ ভোটে বিজয়ী হন।

ক্ষমতাসীন দলটির নেতাকর্মীরা জাসদ নেতা রেজাউল করিম তানসেনকে ভোটের রাজনীতিতে অযোগ্য আখ্যায়িত করে বলেছেন, আলোচিত-সমালোচিত ইউটিউবার হিরো আলমের কাছে তিনি উপনির্বাচনে হারতে হারতে জিতে গেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা প্রতিদিনের বাংলাদেশের মাধ্যমে দলীয় হাইকমান্ডের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, যে প্রার্থী  হিরো আলমের সঙ্গে ভোটের মাঠে শক্ত লড়াই করতে পারে না তার জন্য কেন আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় দলের সম্ভাবনাময় প্রার্থীকে বসিয়ে দিতে হবে?’ নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের অপর এক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পর পর ৪ বার আমরা হাইকমান্ডের নির্দেশনা মেনেছি। কিন্তু আর নয়। এবার  আমাদের কাছে ভালো বিকল্প প্রার্থী আছে। আমরা সেই বিকল্পকে বেছে নিলে জাসদ প্রার্থীর জয়লাভ তো দূরের কথা জামানতও ফিরে পাবেন না। এবার আমরা সেটাই করে দেখাব।’

নেতাকর্মীদের ধারণা ডা. জিয়াউল হক মোল্লা যেহেতু নির্বাচনকে ‘অংশগ্রহণমূলক’ করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ এবং সরকারকে সহায়তা করছেন বলে তিনি নীতিনির্ধারকদের ‘গুডবুকে’ রয়ে গেছেন। সেজন্য তাকে সমর্থন দিলে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডেরও কোনো আপত্তি থাকবে না। এমন ভাবনা থেকে এবার ‘জাসদ ঠেকাও’ নীতি নিয়ে নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করেছে নেতাকর্মীরা।

তবে ওই আসনে ১৪ দলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী জাসদ নেতা রেজাউল করিম তানসেন এমপি’র দাবি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গেই থাকবেন। তিনি বলেন, ‘এটা জোটের সিদ্ধান্ত সকলকে মানতে হবে।’

আসন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বগুড়া-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত হেলাল উদ্দিন কবিরাজ। নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি নেতাকর্মীদের কষ্ট না পাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, দল যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটা সকলকেই মানতে হবে। একই ধরনের কথা বলেছেন, বগুড়া-৪ আসনভুক্ত নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন রানাও।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরিয়ে নেওয়ায় ভোটে কোনো সুবিধা পাবেন কি না জানতে চাইলে ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ডা. জিয়াউল হক মোল্লা বলেন, ‘আমি কোনো প্রার্থীকেই ছোট করে দেখতে চাই না। তবে আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রার্থীকে সরিয়ে নেওয়ায় ওই দলটির নেতাকর্মীরা কষ্ট পেয়েছেন। তারা আমাকেই তাদের বিকল্প ভাবছেন। সেই হিসেবে কিছুটা সুবিধা তো আমি পাবোই।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা