আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:৫৩ পিএম
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:৫৭ পিএম
বাসচাপায় জাবির সাবেক ছাত্র রুবেলের মৃত্যু। ফাইল ফটো
সেলফি পরিবহনের বাসচাপায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক শিক্ষার্থী ও ৪১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত রুবেল পারভেজ নিহতের ঘটনায় তার পরিবারকে ১৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে সেলফি কর্তৃপক্ষ দিয়েছে ৮ লাখ এবং সরকারিভাবে দেওয়া হবে ৫ লাখ।
ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে সেলফি পরিবহনের ১৫টি বাস আটকে রেখেছিলেন শিক্ষার্থীরা। পরে সোমবার (১১ ডিসেম্বর) ৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ নিয়ে বাসগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, সোমবার সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে সেলফি পরিবহন কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফি, প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানসহ কয়েকজন আলোচনায় বসেন। দীর্ঘ আলোচনা শেষে ৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ নিয়ে আটকে রাখা ১৫টি সেলফি পরিবহনের বাস ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেলফি পরিবহন কর্তৃপক্ষ আট লাখ টাকা নগদ পরিশোধ করেছে। সাভার উপজেলা প্রশাসন থেকে আরও ৫ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। মোট ১৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে নিহত রুবেলের পরিবার।
অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ’সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) উপস্থিতিতে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আট লাখ টাকা নগদ ক্ষতিপূরণ নিয়ে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। আর সরকারি ফান্ড থেকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হবে। আট লাখ টাকা নিহত রুবেলের ভাই ও শ্যালকের কাছে দেওয়া হয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রুবেল পারভেজের ১৬ মাস বয়সি একটি সন্তান আছে, স্ত্রী আছেন। বাড়িতে মা আছেন। তার ছোট ভাইয়েরা পড়াশোনা করছে। রুবেলই পরিবারটির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন।
সেলফি পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করেছি। নিহত রুবেলের বাচ্চার ভরণপোষণের দায়িত্বও নিয়েছি।’
জাবির অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রুবেল পারভেজ ৪১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাই থানা বাসস্ট্যান্ডে সেলফি পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে একটি বাস যাত্রীদের চাপা দেয়। এতে রুবেলসহ দুজন নিহত হয়। খবর ছড়িয়ে পড়ার পর জাবির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের একটি দল ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলাচলকারী সেলফি পরিবহনের অন্তত ২০টি বাস আটকে রাখেন।
পরদিন শুক্রবার সকালে আরও পাঁচটিসহ মোট ২৫টি বাস আটক রাখা হয়। রুবেল হত্যার বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ১০টি বাস ছেড়ে দেওয়া হয়, ১৫টি বাস আটকে রাখা হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রুবেলের পরিবারের জন্য ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। এ নিয়ে পরিবহন প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ, শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কয়েক দফায় আলোচনা চলে। তারা প্রথম দফা আলোচনায় তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছিল। তা মানেননি শিক্ষার্থীরা। শেষ পর্যন্ত আলোচনা শেষে আট লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে পাঁচ দিন পর বাসগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, সেলফি পরিবহনের বেপরোয়া গতি, চালকের সহকারীদের খারাপ আচরণ, হাফ ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ইত্যাদি কারণে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল তাদের। বাসচাপায় রুবেল পারভেজের নিহত হওয়ার পর এ ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।