নোয়াখালী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:১৬ পিএম
নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ভোট দিতে বাধ্য করার কৌশল হিসেবে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৪৯২ জন সুবিধাভোগীর কার্ড জব্দ করার অভিযোগ উঠেছে সোনাইমুড়ী উপজেলার অম্বরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। বিষয়টি তিনি স্বীকারও করেছেন। তার ভাষ্য, যারা নৌকার প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবেন তাদের কার্ড ফিরিয়ে দেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সুবিধাভোগীদের কেউ কেউ। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বলছেন, একজন চেয়ারম্যান এভাবে সুবিধাভোগী কারও কার্ড জব্দ করতে পারেন না। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা দেওয়ান মাহবুবুর রহমানের কাছে কার্ড জব্দের লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভূঁইয়া।
অভিযোগে বলা হয়েছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-২ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোরশেদ আলম। তার পক্ষে জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার ৫ নম্বর অম্বরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন দুলু এবং ডিলার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সরকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের কার্ড জব্দ করেছেন। সেই সঙ্গে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট না দিলে কার্ড বাতিল করার হুমকি দিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করছেন। অম্বরনগর ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুবিধাভোগীরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন, যা নির্বাচনী আচরণবিধি, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি বা পরিচালনায় বাধাগ্রস্ত করা তথা নির্বাচনী অপরাধ। এই অবস্থায় অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের স্বার্থে যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।
স্থানীয় ও দলীয় সূত্র বলেছে, সেনবাগের ৯টি ইউনিয়ন ছাড়াও পাশের বারোগাঁও ও নাটেশ্বর ইউনিয়ন নোয়াখালী-২ আসনের অন্তর্ভুক্ত। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন সাতজন।
কার্ড জব্দের বিষয়টি স্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন দুলু। তিনি বলেন, প্রত্যেক ওয়ার্ডের মেম্বারের মাধ্যমে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৪৯২ জন সুবিধাভোগীর কার্ড সংগ্রহ করে আমার কাছে রেখেছি। কার্ডধারীরা সরকারের দেওয়া ১০ টাকা মূল্যে ৩০ কেজি করে চাল পেয়ে থাকেন। গত সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে তারা চাল পেয়েছিলেন। আগামী এপ্রিল এবং মে মাসে আবারও পাবেন। যেহেতু তারা সরকারের সুবিধা গ্রহণ করেন সেহেতু তাদের নৌকায় ভোট দিতে হবে। নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করতে আমরা এমপি সাহেবের (মোরশেদ আলম) সঙ্গে বৈঠক করেছি। ওয়ার্ডভিত্তিক কার্ডধারীদের সঙ্গেও বৈঠক করব। যারা নৌকার প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবেন আমরা তাদের কার্ড ফিরিয়ে দেব। এসব বিষয় এমপি সাহেবও জানেন।
কার্ডধারী হারুন অর রশিদ বলেন, মেম্বাররা এসে আমাদের কাছ থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড নিয়ে গেছেন। বলেছিলেন, চেয়ারম্যান নিতে বলছেন, তাই তারা নিয়ে গেছেন। চাল না আসা পর্যন্ত কার্ড চেয়ারম্যানের কাছে জমা থাকবে। একই কথা জানান আবদুল করিম ও আবুল হাশেম।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর এই অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তবে একজন চেয়ারম্যান এভাবে সরকারি সুবিধাভোগী কারও কার্ড জব্দ করতে পারেন না। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’