× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘মুমূর্ষু অবস্থা’ কোটি টাকার নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের

ভোলা সংবাদদাতা

প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:২০ পিএম

‘মুমূর্ষু অবস্থা’ কোটি টাকার নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের

দেশের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলার দুর্গম জনপদের মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে সরকারের দেওয়া কোটি টাকা মূল্যের ৪টি আধুনিক নৌ-অ্যাম্বুলেন্স কাজে আসছে না। দুই বছরের বেশি সময় ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকতে থাকতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এসব অ্যাম্বুলেস নিজেই মুমূর্ষু হয়ে পড়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভেতরে ময়লা-আবর্জনা জমে রোগী পরিবহনের অনুপযোগী হয়ে গেছে। এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় বিভিন্ন ঘাটে পড়ে আছে। এসব অ্যাম্বুলেস বন্ধ থাকায় দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসাসেবা পেতে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। কবে নাগাদ চালু হবে তা-ও কর্তৃপক্ষ বলতে পারছে না।

সরেজমিন ভোলার দৌলতখান, তজুমদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলার নদীসংলগ্ন ঘাটে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোলার অর্ধশতাধিক ছোট-বড় চরে তিন লক্ষাধিক মানুষের বাস। এসব দুর্গম চরের বাসিন্দারা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার নির্ভরযোগ্য কোনো নৌযান না থাকায় তাদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হতো। দুর্ভোগ লাঘবে ২০১৭ সালে প্রথম জেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা উপজেলায় একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়।

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে একে একে ২০১৮ সালে দৌলতখান, ২০১৯ সালে চরফ্যাশন ও ২০২০ সালে তজুমদ্দিন উপজেলায় আরও ৩টি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। উপহার পাওয়ার পর প্রথমদিকে অ্যাম্বুলেন্সগুলো স্থানীয়দের উপকারে আসে। কিন্তু পরবর্তীতে চালক না থাকা, জ্বালানি সংকটসহ নানা অজুহাতে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি। ফলে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের চারটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স অবহেলা-অযত্নে পড়ে আছে।

আর কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও অবহেলার কারণে দুটি অ্যাম্বুলেন্স পানির নিচে ডুবে রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। অবশ্য স্থানীয়দের কথার সত্যতা পাওয়া গেল দৌলতখান উপজেলার পাতারখাল মাছঘাট-সংলগ্ন মেঘনা নদীর তীরে গিয়ে সেখানে অ্যাম্বুলেন্সটি নদীর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়, আবার ভাটায় জেগে ওঠে। একই অবস্থা চরফ্যাশনের কচ্ছপিয়া ঘাটে রাখা অ্যাম্বুলেন্সটিরও। আর তজুমদ্দিন ও মনপুরা উপজেলার বাকি দুটিও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকেজো হয়ে নদীর পাড়ে পড়ে আছে। এতে দুর্গম এলাকার বাসিন্দাদের চরম ভোগান্তিসহ অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে মূল ভূখণ্ডে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। দ্রুত অচল নৌ-অ্যাম্বুলেন্সগুলো মেরামত করে সচল করার দাবি জানিয়েছেন দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষ।

কথা হয় তজুমদ্দিন উপজেলার চর জহিরউদ্দিনের বাসিন্দা আবুল কালামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দুর্গম চরাঞ্চলের অসহায় মানুষের কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী যে একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স উপহার দিয়েছেন, তা চরের মানুষ জানেই না। এ বিষয়ে কখনও কোনো প্রচারও শুনিনি। এখন শুনলাম ব্যবহার হচ্ছে না, পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।’

অপর বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘তজুমদ্দিন সি-ট্রাক ঘাটে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়। আর চরের অসুস্থ শিশু, বৃদ্ধ ও গর্ভবতী মায়ের চিকিৎসায় উপজেলা সদরে আনতে হয় নৌকায়। রোদ-বৃষ্টির মধ্যে নদী পারাপারের সময় রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। রোগীদের এ দুর্ভোগ লাঘবে জরুরি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স মেরামত প্রয়োজন। এতে সঠিক সময়ে রোগীরা উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার পাশাপাশি হতদরিদ্রদের অর্থ সাশ্রয় হবে।’

চরফ্যাশন উপজেলার সাগর মোহনার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর কুকরি-মুকরি ইউনিয়নের বাবুগঞ্জ গ্ৰামের ফিরোজ কবিরাজ জানান, তার মেয়ে দুই মাস আগে সন্তান প্রসব করেছে। ওই এলাকায় কোনো হাসপাতাল না থাকায় তিন হাজার টাকায় স্পিডবোট ভাড়া করে কচ্ছপিয়া হয়ে অ্যাম্বুলেন্সে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে হয়েছে। এতে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় ও ফিটনেসবিহীন নৌযানে ধকল সহ্য করতে হয়েছে। অথচ কচ্ছপিয়া ঘাটে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের সরকারি একটি নৌ-অ্যাম্বুলেস পানিতে ডুবে আছে। 

একই ইউনিয়নের শাহবাজপুর গ্রামের দিনমজুর রাকিব হোসেন জানান, তার স্ত্রী রাবেয়া খাতুনকে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে হয়েছে। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় কচ্ছপিয়া ঘাটে যেতে ১ হাজার ৫০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। খোলা ট্রলারে নদীর ঢেউÑ সবকিছুই একজন প্রসূতির জন্য কষ্টকর। অর্থের অভাবে তার মতো অনেকেই স্বাস্থ্যসেবা পেতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

ভোলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানসহ নানা কারণে দৌলতখান উপজেলার নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি, চরফ্যাশন উপজেলারটি ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি, তজুমদ্দিন উপজেলারটি ২০২০ সালের ২২ মে ও সর্বশেষ মনপুরা উপজেলারটি ২০২১ সালের ৩০ মে বিকল হয়। সিভিল সার্জন দপ্তরের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নৌ-অ্যাম্বুলেন্সগুলো খরস্রোতা মেঘনা নদীতে চলাচল অনুপযোগী ও গতি কম।

জানতে চাইলে সিভিল সার্জন কেএম শফিকুজ্জামান বলেন, ‘বিকল হওয়া প্রতিটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের মেরামতের জন্য আকু বিল্ডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান ৪ লাখ টাকা করে বাজেট দিয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অর্থ বরাদ্দের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সগুলো মেরামত করা হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা