পঞ্চগড় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:৫১ পিএম
মালাদাম দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়। প্রবা ফটো
পদ না থাকলেও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার মালাদাম দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিপেন চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। তারা জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও রংপুর মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরসহ বেশ কয়েকটি দপ্তরে প্রতিকার চেয়ে এবং নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধসহ ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছেন।
লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী, গত ১৬ এপ্রিল পবিত্রা রানী নামে একজনকে আয়া ও পারুল রানী নামে একজনকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে বিদ্যালয়টিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের কাছ থেকে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের নামে নেওয়া হয়েছে ২০ লাখ টাকা। কিন্তু সেই টাকা বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা না করে পরিচালনা কমিটির কয়েকজন সদস্যসহ আত্মসাৎ করেছেন বিপেন চন্দ্র রায়। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ত্রুটি থাকায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী পারুল রানীর বেতনের কাগজপত্র আটকে দিয়েছে রংপুর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক অধিদপ্তর। এর পরও গত ৩১ অক্টোবর আবারও চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মচারী নিয়োগ দিতে গোপনে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। এর জন্য কোনো সভা কিংবা রেজুলেশন করা হয়নি। বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের নামে পঞ্চগড় জেলা পরিষদ থেকে দুই দফায় আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ নেওয়া হলেও সেই টাকায় পাঁচ ফিট উচ্চতার মাত্র ১০০ ফিট প্রাচীর তৈরী করা হয়েছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নকশা বদলে নিজের প্রয়োজনে ও শিক্ষকদের জন্য তৈরি করেছেন দুটি বাথরুম। এখানেও বরাদ্দের পুরো টাকা খরচ না করেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতার পরিচয় দিয়ে বিদ্যালয়ে নিজের খেয়ালখুশিমতো আসা-যাওয়া করনে এবং ছুটি ছাড়াই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন বলেও অভিযোগ করেন অভিভাবকরা।
বিদ্যালয়টির সাবেক প্রধান শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কালীপদ রায় বলেন, ‘বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য, কর্মচারী প্যাটার্ন পূরণের পরও গোপনে আরও একটি পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যেন কোনো জবাবদিহি নেই। বিদ্যালয়টিতে আগের তুলনায় কমেছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষার মান। সবকিছুই যেন হযবরল অবস্থায় চলছে।’ বিদ্যালয়টির দাতা সদস্য মুহুনী রায় বলেন, ‘বিদ্যালয়ের বিষয়ে যে অভিযোগটি হয়েছে তা সত্য। আমি দাতা সদস্য অথচ আমাদের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে নতুন একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এর আগে চলতি বছরে দুটি নিয়োগ দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সীমানা প্রাচীরের টাকাও তিনি খেয়েছেন।’
বিদ্যালয়টির সভাপতি সত্যেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘আসলে অনেকে তো অনেক অভিযোগই করে। প্রতিটি বিদ্যালয়ের গোপন কিছু থাকে। সব তো আর বলা যায় না। তাছাড়া কর্মচারী প্যার্টানের বাইরে তো আমরা যেতে পারব না।’ অভিযোগ সম্পর্কে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিপেন চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে শুনেছি। আর টাকা লেনদেন হয়েছে এটা ওরা প্রমাণ করুক। মূলত ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজন পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে এসব করছে।’
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল মালেক এখনও এ বিষয়ে কাজ শুরু করেননি। তিনি বলেন, ‘আমি তো নতুন এসেছি। সব স্কুলের নাম এখনো জানি না। ওই স্কুলে যদি কর্মচারী প্যাটার্ন পূরণ হয়ে যায় তাহলে তো আর নিয়োগ দিতে পারবে না। আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটির তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’