চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:৩১ পিএম
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:১০ পিএম
কর নিয়ে সাধারণ নাগরিকের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করে জানিয়ে আয়কর বিভাগকে এই ভীতি দূর করতে প্রতিষ্ঠান ধরে ধরে করমেলা আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরিন আখতার।
তিনি বলেন, ‘আয়কর বিভাগ বিভিন্ন জায়গায় মেলার আয়োজন করে। এই ধরনের মেলা যদি আরও বাাড়নো যায় তাহলে সাধারণ মানুষ কর প্রদানে আরও উদ্বুদ্ধ হবে। করদাতা বাড়লে দেশের রাজস্ব আয় বাড়বে। পাশাপাশি কর প্রদান নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ভীতি কাজ করে সেটিও কেটে যাবে।’
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আয়োজিত সেরা করদাতা সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শিরিন আখতার বলেন, আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ট্যাক্স প্রদান করত সরকার। কয়েক বছর ধরে আমরা নিজেরা নিজেদের ট্যাক্স প্রদান করছি। আয়কর বিভাগ প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে মেলার আয়োজন করে। শিক্ষকরা খুব আনন্দের সঙ্গে ওই মেলায় গিয়ে আয়কর প্রদান করেন। তাদের মধ্যে একটি উৎসাহ কাজ করে। করভীতি দূর করতে অন্যান্য জায়গায়ও এ ধরনের মেলার আয়োজন করা উচিত।
চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১-এর কমিশনার মো. শাহাদাৎ হোসেন শিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমি চট্টগ্রামের মহাপরিচালক সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাস, দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ওমর হাজ্জাজ। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের পাঁচটি জেলার ৪২ জন সেরা করদাতার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।
মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীরা ট্যাক্স-ভ্যাট দিতে চাই। ব্যবসায়ীরা যে ব্যবসাই করুক, সবার একটাই চিন্তা থাকে, আমরা ট্যাক্স-ভ্যাট দেব। কিন্তু ভ্যাট-ট্যাক্স নিতে গিয়ে যে সমস্যা, সেটি নিয়ে আমাদের সঙ্গে এনবিআরের মতানৈক্য। ব্যক্তি করদাতা, ব্যক্তি থেকে কর নেওয়া অনেক কঠিন কাজ। তবে এখন মানুষের মানসিকতা অনেক পরিবর্তন হচ্ছে। অনেকেই ট্যাক্স দিতে আগ্রহী হচ্ছে। মানুষকে আরও আগ্রহী করতে এনবিআর একটি উদ্যোগ নিতে পারে। যারা সেরা করদাতা হচ্ছেন তাদের তো সিআইপি ঘোষণা করা যাবে না। তবে যারা সেরা করদাতা হচ্ছেন তাদের যদি একটি কার্ড দেওয়া যায়, যেটি দেখালে মানুষ অন্তত তাদের সম্মান করবে। করদাতারাও সম্মানিত বোধ করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এনবিআরকে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। কারণ অটোমেশন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। অটোমেশন হলে মানুষ সহজে ট্যাক্স দিতে পারবে।’
চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কর প্রদানের বিকল্প নেই। কর প্রদানকারীর সংখ্যা যত বাড়বে, দেশের রাজস্ব আয়ও বাড়বে। তখন দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন আরও বেশি হবে। এ জন্য করের হার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়াতে হবে।’
সম্মাননা পাওয়ার পর অনুভূতি প্রকাশ করেন দেশের শীর্ষ ইস্পাত প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমের আলী হোসাইন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এটা প্রথম কর প্রদান নয়, আমরা ১৯৪৯ সালে ব্যবসা শুরু করেছি। ব্যবসার শুরু থেকে আমরা ট্যাক্স দিয়ে আসছি। এটা আমাদের পারিবারিক কালচার, যা আমরা করি সেটি যেন সর্বোচ্চ কমপ্লায়েন্সের মধ্যে করতে পারি। এটি আমাদের জন্যে গর্বের, এবার আমার বাবা, আমার মা এবং আমি নিজে সেরা করদাতার সম্মাননা পেয়েছি। শুধু তাই নয়, আমাদের দুটি প্রতিষ্ঠানও জাতীয় পর্যায়ে এনবিআর থেকে সম্মাননা পাচ্ছে।’
৪০ বছরের নিচে তরুণ পুরুষ হিসেবে সর্বোচ্চ করদাতার স্বীকৃতি পেয়েছেন পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক মো. আকতার পারভেজ। তিনি বলেন, ‘আমরা অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার জন্য কিংবা সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য কাজ করি না। তবে আমি নিশ্চিত করে বলতে চাই, আজকের এই অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তি নিঃসন্দেহে আমাদের আগ্রহী করবে আরও দ্বিগুণ উৎসাহে কাজ করার জন্য। আমি আমার ব্যবসায়িক জীবনে অনেক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি, কিন্তু এটি পাওয়ার পর আমার কাছে অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছে।’