ঝিনাইদহ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:৩৪ পিএম
ঝিনাইদহের ঐতিহ্যবাহী নতুন বাজার পেঁয়াজের হাট। প্রবা ফটো
হঠাৎ অস্থির হওয়া পেঁয়াজের বাজারে স্বস্তির দেখা মিলেছে। খুচরা ও পাইকারি বাজারে মানভেদে পেঁয়াজের দাম প্রতি মণে তিন হাজার টাকা কমেছে। আগাম মুড়িকাটা পেয়াজ বাজারে উঠলে দাম আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে ঝিনাইদহের ঐতিহ্যবাহী নতুন বাজার পেঁয়াজের হাট ঘুরে দেখা গেছে, ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। যা দুই দিন আগে সাত হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হলেও তা নেমেছে ৩ হাজার টাকা মণ দরে।
কৃষক আর ব্যবসায়ীরা বলছে, ভারত থেকে পেঁয়াজ না আসার খবরে গত শনিবার থেকে হঠাৎ অস্থির হয়ে যায় পেঁয়াজের বাজার। তবে সরবরাহ ও মজুদ স্বাভাবিক থাকায় দাম কমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এছাড়া নতুন মুড়িকাটা ও গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আসতে শুরু করছে বাজারে।
পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা থেকে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকারী ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম জানান, গত হাটে তিনি প্রতি মণ দেশী পেঁয়াজ সাত হাজার টাকা কিনেছিলেন। আজ তা ৪ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। তবে তাদের স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও কম হওয়ায় তিনি পেঁয়াজ না কিনে করে ফিরে যাচ্ছেন।
শৈলকুপা বাজারে পেঁয়াজের খুঁচরা ব্যবসায় পলাশ হোসেন বলেন, ‘গত হাটে দেশী পুরান পেঁয়াজ বিক্রি করেছি, ২০০ টাকা কেজি আর মুড়িকাটা ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি যা আজ বিক্রি করছেন মুড়িকাটা ৮০ থেকে ৯০ টাকা ও দেশী ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।’
ঝিনাইদহের শৈলকুপার হারুন্দিয়া গ্রামের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘শৈলকুপার নতুন বাজারে পাইকারী হাটে গত শনিবার পেঁয়াজ কিনেছি, দেশী পুরাতন ৭ হাজার টাকা মণ এবং মুড়িকাটা ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজা টাকা মণ দরে। তবে আজ পেঁয়াজ কিনলাম মুড়িকাটা ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে ও পুরাতন দেশী পেঁয়াজ ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে। যা গত হাটের তুলনায় প্রতি মণে ৩ হাজার টাকা কম মূল্য দাঁড়িয়েছে।’
কাশিনাথপুর গ্রামের নিশিথ কুমার মন্ডল বলেন, গত হাটে দেশী পেঁয়াজ ৭ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে কিনেছিলাম। আজ তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪০০ টাকা মণ। গত হটের থেকে মণ প্রতি ঠিক ৩ হাজার টাকা।
শৈলকুপা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা কৃষ্ণনগর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজ গত হাটে পাইকারী ৭ হাজার টাকার উপরে বিক্রি হয়েছিল। আজ তা বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকা মণ। শৈলকুপা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা আড়ুয়াকান্দি গ্রামের মনিরুল ইসলাম বলেন গত হাটে তিনি পেঁয়াজ বিক্রি করেছিলেন, প্রতি মণ ৭ বাজার টাকার উপরে মঙ্গলবার তা প্রতি মণে তিন হাজার টাকা কমেছে।
শৈলকুপার পেঁয়াজের পাইকারী বাজার মনিটরে আশা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এসিল্যান্ড বনি আমিন বলেন, গত হাটরে তুলনায় শৈলকুপায় মঙ্গলবার ৩ হাজার টাকা কম মূল্যে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। চাষিদের মুড়িকাটসহ নতুন পেঁয়াজ ও বাজার মনিটরিং অব্যাহত থাকলে দাম স্থিতিশীল থাকবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহের তথ্যমতে, জেলায় প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়। এর মধ্যে জেলার শৈলকুপা উপজেলাতেই সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ করে থাকেন কৃষকেরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহের উপ-পরিচালক আজগর আলী বলেন, একদিকে মুড়িকাটা ও গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উত্তোলন শুরু হয়েছে যা পুরোদমে উঠবে আর মাত্র ২ সপ্তাহ পরেই, এদিকে শীতকালীন পেঁয়াজের বীজতলা দেওয়া শুরু হয়েছে, পেঁয়াজ মাঠে বেড়ে গেছে কৃষকদের ব্যস্ততা। সব মিলিয়ে বাজার পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।