পঞ্চগড় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:৪৮ পিএম
পঞ্চগড় সদর উপজেলায় এক হত্যা মামলার ১৬ আসামিকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়ায় চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করেছেন বাদী। সোমবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরের এ ঘটনায় বাদী মিনারা আক্তারকে আটক করে কোর্ট পুলিশ। পরে এ ঘটনায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অফিস সহায়ক তাজুল ইসলাম একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা শুনানি শেষে ওই নারীকে পাঁচ হাজার টাকা বন্ডে জামিন দেন একই আদালতের বিচারক।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, গত ৫ ডিসেম্বর সদর উপজেলার সাহেবীজোত ডাঙ্গাপাড়া এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধের সময় মারামারিতে আব্দুল মমিন নামে এক আসামির কিলঘুষিতে ইয়াকুব আলীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের ছোট মেয়ে মিনারা আক্তার ওইদিন রাতে সদর থানায় বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। নিহতের বড় ছেলের স্ত্রী রওশনা আক্তার লিলিসহ বাদীপক্ষের স্বজনরা বলেন, এমন একটি হত্যা মামলার আসামিদের কীভাবে, কোন আইনে জামিন দেওয়া হয়? আমরা এ ঘটনার ন্যায়বিচার চাই।
জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আবু মো. ইউনুস আলী লেলিন বলেন, নিম্ন আদালতের রায় যদি আমাদের পছন্দ না হয়, তাহলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু বাদী আজকে বিচারককে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মেরেছেন। জুতাটি বিচারকের সামনে থাকা গ্লাসে লেগে নিচে পড়ে যায়। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এরপর যে আইনজীবী বা অন্য কাউকে মারা হবে না তা মনে করা যায় না।
বাদীপক্ষের আইনজীবী হাবিবুল ইসলাম হাবিব বলেন, কয়েকদিন আগে বাদীর বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। আজকে তাদের বাড়িতে কুলখানি। এ অবস্থায় একটি হত্যা মামলায় সব আসামির জামিন দেওয়া কোনোভাবে কাম্য নয়। বিচারকের এমন আদেশে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে আদালত ত্যাগ করে চলে আসি। এই বিচারক এর আগে ছোট ঘটনায় কাউকে জামিন দিতেন না। এখন আবার বড় ঘটনায় আসামিদের জামিন দিয়েছেন। আজকে আদালত আমাদের কাছে নিহতের সুরতহালের প্রতিবেদন এবং মামলার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন চাচ্ছিলেন। এখনই আমরা এসব কোথায় পাব?
আসামিপক্ষের আইনজীবী রাকিবুত তারেক বলেন, আসামিদের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন আদালত। মামলার ১ থেকে ৩ নম্বর আসামি আত্মসমর্পণ করেননি। যারা আত্মসমর্পণ করেছেন, তাদের অধিকাংশই নারী। এছাড়া আসামিদের বক্তব্য ছিল, ওই ব্যক্তি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। সুরতহাল রিপোর্টের নথিতে এই তথ্য নেই। তাই সার্বিক বিবেচনা করে এই জামিন দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, আটকের পর ওই তরুণীকে আদালতে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়। তার বিরুদ্ধে নালিশি মামলা দায়েরে পর সন্ধ্যায় মেজবা ওয়ানুল করিম বসুনিয়া ওরফে বাবু নামে একজন অ্যাডভোকেট পাঁচ হাজার টাকার বন্ডের মাধ্যমে নিজ জিম্মায় জামিন আবেদন করলে মঞ্জুর করেন আদালত। আদালত অবমাননা ও হোট্টগোল করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। মিনারার বড় ভাই ফারুক হোসেন বলেন, আদালতের এমন রায়ে আমার ছোট বোন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জামিন বিষয়ে অ্যাডভোকেট মেজবা ওয়ানুল করিম বলেন, ‘পাঁচ হাজার টাকার বেল্ড বন্ডের মাধ্যমে তার জামিন হয়েছে।’