প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:৪৩ পিএম
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:৫৯ পিএম
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার কমলাকান্তপুরে পেঁয়াজের ক্ষেত থেকে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ তোলা শুরু করেছে এক কৃষক। প্রবা ফটো
পেঁয়াজের দাম অশ্বগতিতে বেড়ে কমছে ধীরগতিতে। হঠাৎ চড়া দামে বিক্রি হওয়ায় কমেছে ক্রেতাও। গত শনিবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজ ২২০ টাকা কজি দরে বিক্রি হলেও সোমবার (১১ ডিসেম্বর) থেকে দাম কিছুটা কমেছে। সোমবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়। ভারতীয় পেঁয়াজ ১৬০ টাকা ও মুড়িকাটা পেঁয়াজ ১১০ টাকায় বিক্রি হয়। সে হিসাবে প্রায় সব ধরনের পেঁয়াজে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দাম কমেছে।
বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংস্থা এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম সরবরাহ চেইন ও মূল্য স্থিতিশীল করতে প্রয়োজনে বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানির পরামর্শ দিয়েছেন। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, পেঁয়াজের যুক্তিসংগত মূল্য বজায় রাখতে ও প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ চেইনের নির্বিঘ্ন কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
চলমান সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এফবিসিসিআই পূর্ণ সহায়তা দেবে বলে আশ্বস্ত করেন মাহবুবুল আলম।
দুই দিনে চীন-পাকিস্তান থেকে এলো ২২৬ টন পেঁয়াজ
ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর বিকল্প উৎস থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। চীন ও পাকিস্তান থেকে গত দুই দিনে পেঁয়াজ ২২৬ টন এসেছে। এর মধ্যে সোমবার পাকিস্তান থেকে ৫৮ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্ভিদ সংগনিরোধ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. শাহ আলম। তিনি বলেন, সোমবার পাকিস্তান থেকে ৫৮ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এর আগে রবিবার চীন থেকে ১৬৮ মেট্রিক টন এসেছে।
গত বৃহস্পতিবার প্রতিবেশী দেশ ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। এক দিনের ব্যবধানে কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বাজার খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। একই সময়ে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে ওঠায় পেঁয়াজশূন্য হয়ে পড়ে খাতুনগঞ্জের আড়তগুলো। শনিবারের পর রবিবার-সোমবারও খাতুনগঞ্জে একই অবস্থা ছিল। এমন অবস্থায় চীন ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হওয়ায় বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল হয়ে যাবে। সোমবার বাজারে মেহেরপুর থেকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। একই সময়ে চীন-পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আসছে। সরবরাহ বাড়ায় পেঁয়াজের দামও কমতে শুরু করেছে।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সোমবার বাজারে এক ট্রাক পেঁয়াজ এসেছে। মঙ্গলবার থেকে বাজারে পুরোদমে মুড়িকাটা পেঁয়াজ পাওয়া যাবে।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স আল-আরব বাণিজ্যালয়ের পরিচালক মাহফুজুল আলম রুবেল বলেন, খাতুনগঞ্জে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। সোমবার মেহেরপুর থেকে এক ট্রাক পেঁয়াজ এসেছে। তবে দাম একটু বেশি। প্রতি কেজির দাম পড়বে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মেসার্স সাহাঞ্জীব লিমিটেড সংযুক্ত আরব আমিরাতের গোল্ডেন উইংস জেনারেল লিমিটেড থেকে এক হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করছে। সেখানে আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৮ টনের প্রথম চালান খালাস হবে। তা ছাড়া টিসিবির ট্রাক সেলে বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় ভারতীয় পেঁয়াজ দেশে এসেছে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে কোনো ধরনের আশঙ্কা নেই। এগুলো পর্যায়ক্রমে বিক্রি করা হবে।
রাজধানীর বাজারে কমেছে পেঁয়াজের দাম
রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম সামান্য কমেছে। কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ-রসুনসহ মসলাজাতীয় পণ্য বিক্রেতা মো. রুবেল হোসেন বলেন, ফরিদপুরের পেঁয়াজ ১৭০ টাকা ও পাবনার পেঁয়াজ ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে আসা নতুন মুড়িকাটা (মূলকাটা) পেঁয়াজ ১০০-১১০ ও ভারতীয় পেঁয়াজ ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাবনা থেকে পেঁয়াজ এনে বিক্রি করেন আড়তদার মো. আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ ১১০ টাকায় কেনা হচ্ছে। আর পাবনার পেঁয়াজ ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শাহীন হোসেন ময়না নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, শনিবার পেঁয়াজের দাম বেশি নেওয়ায় বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে। এখন আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেক ক্রেতা আসছে। পুরো পেঁয়াজের বাজারে আগের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা অর্ধেক। তিনি জানান, ভারতীয় পেঁয়াজ ১৫৫ টাকায় কিনে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ ১১৫ টাকায় কেনা হচ্ছে। এসব পেঁয়াজের সঙ্গে কিছু মাটি থাকায় চাহিদা কম। ১২০ টাকা কেজিতে এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে তেজগাঁওয়ের কলমিলতা কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী মোতাহার হোসেন ফারুক বলেন, পেঁয়াজের ক্রেতা কমে গেছে। ১২০ টাকায় যখন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি, তখন দৈনিক এক বস্তা (৫০ কেজি) পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। গত তিন দিন ধরে এই বিক্রি নেমে গেছে ১০ থেকে ১৫ কেজিতে।
ভোক্তা অধিদপ্তরের জরিমানা
পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা মহানগরসহ দেশের ৫০টি জেলায় সোমবার অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। মোট ৫৩টি টিম অভিযান চালিয়ে ১২২টি প্রতিষ্ঠানকে ৮ লাখ ২১ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।
কমবেশি সব জেলায় কমেছে পেঁয়াজের দাম
শুধু ঢাকায় নয়, দেশের অন্যান্য জেলায়ও পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। তারপরও কোথাও ১৬০ টাকার কমে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে না। প্রতিদিনের বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় পেঁয়াজ ১৬০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে।
চট্টগ্রামে ১২০-১২৫ টাকার বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি নয় : চট্টগ্রামে ১২০-১২৫ টাকার বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা যাবে না বলে ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলী বাজার এলাকায় যেসব গোডাউন রয়েছে, এখন থেকে সব গোডাউনের তথ্য নেওয়া হবে। কোনোভাবেই এই দামের চেয়ে বেশি টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করা যাবে না। তা ছাড়া কেউ একসঙ্গে ৫-১০ কেজি পেঁয়াজও কিনতে পারবে না।
সিলেটে পেঁয়াজের পাইকারি দাম জানাল ব্যবসায়ীরা : সিলেটের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কালিঘাটের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের পাইকারি দাম জানিয়েছে জেলা প্রশাসনকে। ব্যবসায়ীরা পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকা ও এলসি পেঁয়াজ ১৪০ টাকা দাম নির্ধারণ করেছে। সোমবার সন্ধ্যায় সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান এ তথ্য জানান।
এর আগে সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পুলিশ প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষরণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করে জেলা প্রশাসন। এতে সভাপতিত্ব করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান।
হিলিতে কমেছে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম : এক দিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলিতে কমেছে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম। কেজিপ্রতি প্রকারভেদে কমেছে ২০ টাকা। বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজ ১৬০ টাকায়, দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ ১২০ টাকায় এবং দেশি শুকনা পেঁয়াজ ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হবেÑ এমন সংবাদে দেশি পেঁয়াজের দাম কমেছে বলছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
হবিগঞ্জে এক কেজির বেশি পেঁয়াজ বিক্রি নয় : হবিগঞ্জ জেলায় পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি নিয়ে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সোমবার পাইকারি এলসি পেঁয়াজের মূল্য কেজিপ্রতি ১২০ টাকা, খুচরা ১২৫ টাকা করে বিক্রি করতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়। পাইকারি ব্যবসায়ী থেকে খুচরা বিক্রেতারা ১ বা ২ বস্তার বেশি পেঁয়াজ একসঙ্গে কিনতে পারবে না।
নোয়াখালীতে অভিযান দেখে ১১৬ টাকায় বিক্রি ৪২৭ মণ পেঁয়াজ : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান দেখে ১১৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে ৪২৭ মণ পেঁয়াজ। এ সময় বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি এবং মূল্য তালিকা না থাকায় এক ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সোমবার বিকালে উপজেলায় চৌমুহনী দক্ষিণ বাজারে এই জরিমানা করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নোয়াখালীর সহকারী পরিচালক মো. কাউছার মিয়া।
বগুড়ায় এক দিনে কমেছে কেজিতে ৫০ টাকা : বগুড়ায় এক দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম কমেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। রবিবার বগুড়ার রাজাবাজারে ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা দরে পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হলেও সোমবার ৯০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। পাইকারিতে নতুন দেশি পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, যা দুদিন আগে ছিল ১৪০ টাকা।
সিঙ্গাইরে বিভিন্ন বাজারে ভোক্তার অভিযান : মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে বিভিন্ন হাট-বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানের পর কেজিপ্রতি ১০০ টাকা কমে গেছে পেঁয়াজের দাম।
সিলেটে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করলে আইনি ব্যবস্থা : সিলেটে জেলা প্রশাসন জরুরি বৈঠক করে অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি না করতে নির্দেশনা দিয়েছে।
যশোরের পেঁয়াজের বাজারে কমছে ক্রেতা : যশোরের বাজারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজের সরবরাহ থাকলেও দাম তেমন কমেনি। সোমবার অধিকাংশ আড়তে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ দেখা গেছে। তবে বাজারে চাহিদাও কম। একপ্রকার বাজার ক্রেতাশূন্য বলা চলে। সোমবার আড়ত থেকে দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে। পুরোনো দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ তোলা শুরু : চাঁপাইনবাবগঞ্জে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ তোলা শুরু হয়েছে। পেঁয়াজের ফলনে খুশি কৃষকরাও। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য মতে, জেলায় এবার ৪০২ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৫৫ হেক্টর, শিবগঞ্জে ১০১ হেক্টর, গোমস্তাপুরে ১৫ হেক্টর, নাচোলে ৭ হেক্টর ও ভোলাহাটে ১৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে।
তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকরা।