প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:১২ পিএম
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:৪৪ পিএম
সোমবার নওগাঁর বদলগাছীতে এ মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রবা ফটো
পৌষ আসতে বাকি আরও কয়েক দিন। এর মধ্যেই শীত জেঁকে বসেছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। বিশেষ করে উত্তরের জনপদে অপেক্ষাকৃত বেশি শীত পড়ছে। ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত অনেক জেলায় সূর্যের দেখা মেলেনি। এর মধ্যে সোমবার (১১ ডিসেম্বর) নওগাঁর বদলগাছীতে এ মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
উত্তরের জেলা নওগাঁয় ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে চারদিক। উত্তরের হিমেল বাতাসে রাতে বাড়ছে শীতের অনুভূতি। ঘন কুয়াশার কারণে সকালে সড়কে চলা যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। বদলগাছী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক হামিদুল হক জানিয়েছেন আজ বদলগাছীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, আগের দিনের তুলনায় আজ তাপমাত্রা দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। রবিবার বদলগাছীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দেখা গেছে, সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় হিমেল বাতাস। এরপর রাতভর বৃষ্টির মতো টিপটিপ করে ঝরে কুয়াশা। সকাল পর্যন্ত কুয়াশায় ঢাকা থাকছে গোটা জনপদ। এতে দিনের বেলায়ও যানবাহনকে লাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কমলেও বিকাল গড়াতেই আবারও শীত অনুভূত হতে থাকে।
কনকনে শীতে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। হঠাৎ করে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় স্থানীয় মানুষ এ আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হিমশিম খাচ্ছেন।
হামিদুল হক বলেন, ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় তাপমাত্রা নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে। তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।
শুধু নওগাঁ নয়, শীত জেঁকে বসেছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। সোমবার বিভিন্ন জেলা থেকে পাঠানো প্রতিদিনের বাংলাদেশের প্রতিবেদকদের খবর :
দিনাজপুরে শীত জেঁকে বসেছে। দুদিন ধরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির পর উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা দিনাজপুরে তাপমাত্রা কমছে দ্রুতই। সেই সঙ্গে হিমেল বাতাসে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে নিয়মিত দেখা মিলছে না সূর্যের। ফলে দিনেও লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় শীতের শুরুতেই ঠান্ডায় কাবু এই অঞ্চলের জনজীবন। দুর্ভোগ বেড়েছে গৃহপালিত পশুরও।
জেলার আবহাওয়া অফিস বলছে, আজ সোমবার সকাল ৬টায় দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ৯৯ শতাংশ। আর সকাল ৯টায় তাপমাত্রা কমে নেমে আসে ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে নওগাঁর বদলগাছীতে।
দিনাজপুরে গতকাল তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ সকাল ১০টার দিকে দেখা যায়, ঘন কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে সড়কে চলাচল করছিল বিভিন্ন যানবাহন। বাইরে মানুষজন কম বের হয়েছেন। কাজের তাগিদে যারা বের হয়েছেন বেশিরভাগই খেটে খাওয়া মানুষ।
কনকনে ঠান্ডায় দিনাজপুর জেলাজুড়ে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। বিকাল থেকে সকাল পর্যন্ত অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। আর সকালে কাজের সন্ধানে বের হয়ে বিপাকে পড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। শীত থেকে বাঁচাতে গরু-ছাগলকে চটের বস্তা মুড়িয়ে রাখছেন অনেকে।
রিকশাচালক মোকছেদুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, দুই দিন বৃষ্টির পর শীতের তীব্রতা বেড়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে সকালে কোনো কাজকর্ম করা যাচ্ছে না। গরম কাপড় পরেও মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।
ফুলবাড়ী প্রেস ক্লাবের সভাপতি অমর চাঁদ গুপ্ত অপু বলেন, প্রচণ্ড ঠান্ডা শুরু হয়েছে। এতে শিশুসহ বয়স্করা কাবু হয়ে পড়ছে। নানান প্রকার শীতজনিত রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। মানবিক সহায়তাকারীদের উচিত এখন থেকেই শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, দুই দিন বৃষ্টি হওয়ায় জেলায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। ধীরে ধীরে শীত আরও বাড়বে।
শীতে কাঁপছে উত্তরের ভারত সীমান্ত ঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামের মানুষ। ঘন কুয়াশায় দিনের বেলা হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করেছে যানবাহন। প্রকট ঠান্ডার কারণে কষ্ট বেড়েছে শ্রমজীবী মানুষের। ঠান্ডায় ঘর থেকে বের হতে পারছে না বৃদ্ধ ও শিশুরা। আজ সকাল ৬টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে ছিল গোটা জেলা।
রিকশাচালক ময়েজ উদ্দিন বলেন, ‘কনকনে ঠান্ডা পড়েছে। ঠান্ডার কারণে রিকশা চালাতে কষ্ট হচ্ছে। ইনকাম না করলে খামু কী?’
ভ্যান শ্রমিক আবেদ আলী বলেন, ‘যেভাবে শীত নামছে বাহে তাতে টেকা দুষ্কর। গাত দেওয়ার মতো গরম কাপড় নাই। ছেড়া জাম্পার পরি বের হইছি কাজে যাওয়ার জন্য। শীত আসলেই হামার কষ্ট বাড়ে। সরকারও তো কম্বল দেয় না।’
কুড়িগ্রাম রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘আজ সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি সপ্তাহে তাপমাত্রা আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।’
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘চলতি বছর শীতার্ত মানুষের জন্য জেলায় ৪৫ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শীতের প্রতিকূল পরিবেশে ছিন্নমূল মানুষকে রক্ষায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে।’
শীত জেঁকে বসেছে রংপুরেও। হেমন্তের প্রকৃতিকে মুড়িয়ে নিয়েছে শীতের চাদর। চারদিক কুয়াশায় আচ্ছন্ন। তাই সূর্যের দেখা নেই। দৃষ্টির সীমানা থমকে গেছে কয়েক হাত দূরত্বে। নগরের ব্যস্ততায় এসেছে ধীরগতি। গ্রামীণ জনজীবনে নেমেছে কিছুটা স্থবিরতা। তবে শীত আর কুয়াশাকে মাড়িয়ে আলু রোপণের উৎসব চলছে গ্রামে গ্রামে। এদিকে নগরে শীতের প্রকোপ তুলনামূলক কম থাকলেও নদীর তীর, চর, দ্বীপচর ও মহাসড়ক ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেছে। দিনের বেলাতেও আলো জ্বালিয়ে চলেছে যানবাহন।
রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১৩ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, দিনাজপুরে ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ডিমলায় ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, গাইবান্ধায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ডিসেম্বরে স্বাভাবিকভাবে শীত পড়ে। কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড়ে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প হয়েছে তা পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি না হওয়ার কারণে বাতাস থেকে গেছে। এ কারণে কুয়াশার ঘনত্বটা বেশি। তাই সূর্যের কিরণ আসতে পারছে না। এমন পরিস্থিতি দুদিন পর থেকে তাপমাত্রা আরও কমে আসবে। তবে দুপুরের পর কিছু সময়ের জন্য রোদের দেখা মিলতে পারে।
বার্ন ও শিশু বিভাগে রোগী বাড়ছে : শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ও বার্ন ইউনিটে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জ্বর, সর্দি, কাশিসহ শীতজনিত নানা রোগ নিয়ে শিশু-বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। শীত নিবারণে আগুন পোহাতে গিয়ে খড়কুটোর আগুনে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে বার্ন ইউনিটে। ১৬ শয্যার বার্ন ইউনিটে বর্তমানে ২০ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. এমএ হামিদ পলাশ বলেন, শীত বাড়লে বার্ন ইউনিটে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। বর্তমানে রোগীর চাপ স্বাভাবিক রয়েছে। তবে শীতের প্রকোপ বাড়লে আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ রোগীর সংখ্যা বাড়ে। তখন শয্যা সংকটের কারণে রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. ইউনুস আলী বলেন, শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বার্ন ও শিশু বিভাগে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৩১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে।
ফেনীতে শীত জেঁকে বসেছে, বেড়েছে তীব্রতা। ঘন কুয়াশায় ঢেকেছে জনপদ। শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ঠান্ডার জবুথবু হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষ। ফেনী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার ভোর ৬টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কয়েক দিন ধরে সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত কুয়াশায় ঢেকে থাকছে গোটা জনপদ। শীতবস্ত্রের অভাবে বিপাকে পড়েছে ছিন্নমূল মানুষ।
চুয়াডাঙ্গাতেও দ্রুত কমছে তাপমাত্রা। বাড়ছে শীতের তীব্রতা। সোমবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৯১ শতাংশ।
সকাল ৬টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ৯৭%। অর্থাৎ বেলা বাড়লেই তাপমাত্রার পারদ কমছে।
চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান বলেন, এখন থেকে এ অঞ্চলের তাপমাত্রা কমতে থাকবে, বাড়বে শীতের তীব্রতা।