ফেনী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৩০ পিএম
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৫৪ পিএম
মুহুরী সেচ প্রকল্পের রেগুলেটরের গেট বন্ধ রাখায় অতিরিক্ত পানি নামতে পারছে না। তলিয়ে আছে আমন ধান। রবিবার ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুরের শিবপুর এলাকা। প্রবা ফটো
ফেনীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গাফিলতিতে পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা কার্যকর না থাকায় ডুবে আছে ২৯ হেক্টর জমির আমন ধান। এতে ১২৮ মেট্রিক টন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ফলে কৃষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে হাহাকার। এবারের আমন ধান, মৌসুমি বিভিন্ন শাক-সবজিসহ ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা প্রায় অর্ধকোটি টাকা। এ ছাড়া রবিশস্য চাষাবাদ করতে না পারায় দুশ্চিন্তায় কৃষকরা। সব মিলিয়ে চরম লোকসানের মুখে পড়তে হবে বলে জানায় কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ফেনীতে এবার ৬৬ হাজার ৭১৪ হেক্টর আমন রোপণ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে ২৮ দশমিক ৯৫ হেক্টর জমির ১২৮ মেট্রিক টন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ফসলহানি হয়েছে। এদিকে জমি থেকে পানি সরে না যাওয়ায় রবিশস্য—গম, ভুট্টা, সরিষাসহ ডালজাতীয় ও অন্যান্য ফসল চাষাবাদেও বিলম্ব হচ্ছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদর উপজেলার ফাজিলপুর, কাজিরবাগ, মোটবী, সোনাগাজী তলিয়ে আছে। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে আমন ধানে বেশ ক্ষতি হয়েছে। এ সময় পানিতে নুয়ে পড়েছে আমন ধান। এরপর মিগজাউমের প্রভাবেও বৃষ্টি হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার ফসলি জমির ধান কৃষক ঘরে তুলতে পারবে কি না—এ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। কৃষকরা বলছে, বীজ, সার ও শ্রমিকের মজুরি দিয়ে প্রতি একরে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে, তার তিন ভাগের এক ভাগও উঠবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।
ফেনী পাউবোর মুহুরী সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ না নেওয়ায় জমির ধান ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের। ফাজিলপুরের শিবপুর গ্রামের কৃষক আবদুল মুনাফ জানান, তিনি এবার ৫০০ শতক জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। পানিতে না ডুবলে ৭৫ মণ ধান ঘরে তুলতে পারতেন। এখন ২৫ মণ তুলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ।
অপর কৃষক রবিউল হোসেন বলেন, ‘১৫ দিন আগে ধান ঘরে তোলার কথা ছিল। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে পানির নিচে নুয়ে পড়ায় ও শ্রমিকের অভাবে কাটতে পারিনি। জমিতে পানি জমে না থাকলে ধান নষ্ট হতো না। এবার লোকসানের মুখে পড়তে হবে।’
আরেক কৃষক শফি উল্লাহ বলেন, ‘চারদিকে খাল-বিলে ও জমিতে পানি জমে থাকায় শীতকালীন সবজিক্ষেতও করতে পারছি না। সঠিক সময়ে ফসল বুনতে না পারলে কীভাবে পরিবারের চাহিদা মেটাব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
ফাজিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মজিবুল হক রিপন বলেন, ‘পাউবোর গাফিলতির কারণে মুহুরী সেচ প্রকল্পের রেগুলেটরের গেট বন্ধ রাখায় অতিরিক্ত পানি সরতে পারছে না। তাই ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি কৃষকরা আমাকে জানালে সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যার কথা জানিয়েছি। কিন্তু তারা এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গত বছর ফেনীতে রেকর্ড পরিমাণ সরিষা আবাদ হয়েছে। এবার তার অর্ধেক হবে কি না, সন্দেহ।’
ফেনী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক একরাম উদ্দিন জানান, মুহুরী সেচ প্রকল্পের রেগুলেটরের গেটগুলো বন্ধ থাকায় ও মুহুরী নদীতে পর্যাপ্ত পানি থাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ বিষয়ে পাউবো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তারা গেট খুলে অতিরিক্ত পানি অপসারণের বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে বলেও জানান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পাউবো ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে কৃষকের তথ্য পেয়ে রবিবার মুহুরী সেচ প্রকল্পের রেগুলেটরের দুটি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই কৃষকদের এই দুর্ভোগের অবসান হবে, পানি নেমে যাবে।’