খাতুনগঞ্জের আড়ত শূন্য
চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:১৯ পিএম
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:২৫ পিএম
শনিবার খাতুনগঞ্জে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। প্রবা ফটো
ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর পেঁয়াজের বাজার হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠেছে। সারা দেশের মতো বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন খাতুনঞ্জের ব্যবসায়ীরা। এর জন্য ৮টি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পৃথক অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই জরিমানা করে।
এর মধ্যে জেলা প্রশাসনের দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দুটি বাজারে অভিযান চালিয়ে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ৩৫ হাজার টাকা আর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দুটি বাজারে অভিযান চালিয়ে ৫টি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে।
দণ্ডিত ৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চৌমুহনীর কর্ণফুলী মার্কেটের ফারুক স্টোরকে ৩০ হাজার, আলিফ ট্রেডার্সকে ২০ হাজার, খাতুনগঞ্জের বরকত ভাণ্ডারকে ২০ হাজার, এ এইস ট্রেডার্সকে ১০ হাজার, এ কে ট্রেডার্সকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার।
অন্যদিকে পাহাড়তলী বাজারের ফারুক স্টোরকে ১০ হাজার, জাহিদ স্টোরকে ১৫ হাজার এবং খাতুনগঞ্জের আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
অভিযানের বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্ল্যাহ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর ব্যবসায়ীরা খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন- এমন খবর পেয়ে আমরা অভিযান শুরু করি। অভিযানে নগরীর চৌমুহনী কর্ণফুলী মার্কেটের তিনটি দোকানসহ খাতুনগঞ্জের দুটি আড়তকে জরিমানা করা হয়েছে। তারা আগের তুলনায় বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছিল। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা সর্তক করে দিয়েছি, তাদের স্বাভাবিক দামে পেঁয়াজ বিক্রি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
পাহাড়তলী বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল ইসলাম।
প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘অভিযানে গিয়ে আমরা দেখি প্রতিষ্ঠান বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। ২১০ টাকা দামে পেঁয়াজ বিক্রি করলেও তাদের দোকানে কোনো মূল্য তালিকা ছিল না। প্রতিষ্ঠান দুটি খাতুনগঞ্জ থেকে ২০০ টাকা দামে পেঁয়াজ কিনে এনেছে জানায়। কিন্তু এর স্বপক্ষে তারা কোনো ভাউচার দেখাতে পারেনি। পরে এ ঘটনায় দুটি প্রতিষ্ঠানকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
একই সময় খাতুনগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের আরেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘আড়তগুলোতে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। যারা পেঁয়াজ কিনছেন তাদের কাছ থেকে ভাউচার নিয়ে দেখেছি বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। পরে এ ঘটনায় একটি আড়তকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বাকি আড়তগুলোকে সর্তক করে দেওয়া হয়েছে, বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করলে ওই সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এদিকে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনার পর আড়ত পেঁয়াজ শূন্য হয়ে পড়েছে।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) খাতুনগঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ আড়তে পেঁয়াজ নেই। কিছু কিছু আড়তে ভারতীয় আদা, চায়না রসুন থাকলেও পেঁয়াজ নেই।
ক্রেতাদের দাবি, আড়তদাররা বেশি দামে বিক্রির জন্য পেঁয়াজ আড়ত থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। শুক্রবার আমদানি করা পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে না এনে মজুত করে রেখেছেন।
আড়তদাররা জানিয়েছেন, স্বাভাবিক সময়ে খাতুনগঞ্জে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক পেঁয়াজ আসলেও শুক্রবার রাতে পেঁয়াজ কম এসেছে। আগে আড়তে যেগুলো মজুত ছিল, দাম বাড়তে থাকায় সেগুলোও দ্রুত বিক্রি হয়ে গেছে। যে কারণে এখন আড়ত শূন্য হয়ে পড়েছে।
এ সর্ম্পকে জানতে চাইলে মেসার্স আল আরব বাণিজ্যালয়ের ম্যানেজার মো. মাহফুজুল আলম রুবেল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাজারে পেঁয়াজ নেই। পেঁয়াজের সংকট। যে কারণে যাদের কাছে পেঁয়াজ আছে, তারা বাড়তি দামে বিক্রি করছে। শনিবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০০ থেকে ২২০ পর্যন্ত উঠেছে। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ সংকট অব্যাহত থাকলে সামনে পেঁয়াজের দাম আরও অনেক বেড়ে যাবে।’