প্রস্তুতি শেষ, অপেক্ষা প্রতীক বরাদ্দের

লিফলেট, পোস্টার আর ফেস্টুন ছাড়া কী আর নির্বাচনের প্রচার হয় নাকি! আগামী ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পোস্টার ছাপার মৌসুম। আগেভাগেই সকল  প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ছাপাখানাগুলো। শেষ মুহূর্তে চলছে মেশিন পরিষ্কার, যন্ত্রপাতি মেরামতের কাজ।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের নিমতলা মোড় এলাকার রংধনু প্রিন্টিং প্রেসে তেল ও পানি দিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে যন্ত্রাংশ। সঙ্গে কালার প্লেট বসানোর স্তরগুলোও তেল দিয়ে ঘষে রাখছেন কর্মচারীরা। এতে করে সেখানে ময়লা পড়বে না। পাশাপাশি কাজের চাপ শুরু হলে সার্ভিসও ভালো পাওয়া যাবে। শহরের ছাপাখানাগুলোর কোথাও কোথাও কিনে রাখা হয়েছে স্টিল জাতীয় প্লেট। অর্ডার দিয়ে রাখা হয়েছে কাগজের। প্রতীক বরাদ্দ হলেই চাহিদা অনুসারে কাগজ এনে শুরু হবে পোস্টার ছাপানো। 

ছাপাখানা মালিকরা জানিয়েছেন, বর্তমান সময়ে কাগজ, কালিসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়েছে। দেড় বছরের ব্যবধানে এ দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। প্রতি রিম (৫০০ পিস) কাগজ বড় সাইজ (২৩ ইঞ্চি বাই ৩৬ ইঞ্চি) পুরুত্ব (পাতলা, মোটা) অনুসারে (৫৫ গ্রাম পুরুত্ব) দাম দুই হাজার ৩০০ টাকা, যা আগে ছিল ১ হাজার ৩০০ টাকা। কাগজ কিনে কাটিং মেশিনের সাহায্যে সাইজ করে তা দিয়ে পোস্টার ছাপানো হয়। কালি প্রতি পাউন্ড কোম্পানিভেদে গেল দেড় বছরে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। তাই প্রত্যাশিত মূল্য না পেলে শ্রমিক ও অন্যান্য খরচ বাদ দিলে লাভের অংশ কমই থাকবে বলেও জানান তারা। 

ছাপাখানা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলায় ছাপাখানা রয়েছে ৫-৬টি। ছাপার কাজের জন্য অফসেট মেশিনের এক্সপোজ মেশিন (প্লেট মেশিন), কালি রোল, প্লেট বাঁধার সিলিন্ডার, ছাপা সিলিন্ডার, কালি ও মবিল স্টোর, পানি স্টোর, হাওয়া সিলিন্ডার, চেইনসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ পরিষ্কার রাখা খুবই জরুরি। সাধারণত কম্পিউটারে ডিজাইন তৈরি করে এক্সপোজ মেশিনের সাহায্যে প্লেটে ডাইস (ছাপ) তৈরি করা হয়। এরপর তা প্লেট সিলিন্ডারে দিয়ে প্রিন্ট করা হয়। আকারভেদে একটি মেশিনে প্রতি মিনিটে ৭০ থেকে ১২০ পিস পোস্টার প্রিন্ট দেওয়া সম্ভব। এক হাজার পোস্টার ছাপালে গড়ে ৩০০ টাকা লাভ থাকে।

তবে প্রস্তুতির মাঝেও কোথাও কোথাও প্রার্থীদের থেকে টাকা না পাওয়ার শঙ্কা থাকায় অনাগ্রহও রয়েছে কিছু ছাপাখানা মালিকের। কয়েকটি ছাপাখানায় এখনও বকেয়া রয়েছে গত পৌরসভা নির্বাচনের পোস্টার ছাপানোর টাকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাপাখানার মালিক বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে মোটামুটি প্রস্তুতি আছে, কিন্তু খুব আগ্রহ নেই। কারণ প্রার্থীরা পোস্টার ছাপাতে তাড়াহুড়ো করে আর টাকা দিতে চায় না। টাকা চাইলেও হয়রানি করে। গত পৌরসভা নির্বাচনের পোস্টার ছাপানোর ১৮ হাজার টাকা এখনও বকেয়া রয়েছে প্রার্থীর কাছে।’

রংধনু প্রিন্টিং প্রেসের ম্যানেজার শাহিনুর ইসলাম শাহিন বলেন বলেন, ‘ফুলবাড়ীতে প্রথম থেকেই ছাপার কাজ করে আসছেন আখতারুল সরকার বকুল। তিনি বর্তমানে ক্যানসার আক্রান্ত। তবুও আমরা কয়েক কর্মচারী মিলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ছাপার কাজ অনেকদিন ধরেই খুব কম ছিল। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যবসা ভালো হবেÑ এই আশায় মেশিনের যন্ত্রাংশ মেরামত ও তেল-মবিল ব্যবহার করে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। যেন প্রার্থীকে ভালো কাজটি উপহার দিতে পারি।’

জয়ন্ত গ্রাফিক্সের স্বত্বাধিকারী জয়ন্ত কুমার সাহা বলেন, ‘সামনে নির্বাচন। এখন থেকেই অনেক কাজ অগ্রিম অর্ডার পাচ্ছি। ডিজাইন করে রাখছি। শুধু প্রতীক বরাদ্দের সঙ্গে সঙ্গে কাজ ছাপাখানাতে পাঠাব। সময়মতো সবাইকে অর্ডার ডেলিভারি দিতে পারব বলে আশা করছি।’

ফুলবাড়ীর কাগজের ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘একদিকে ডলার সংকট, অপরদিকে দাম বেশি। ফলে কাগজের কাঁচামাল কিনতে পারছে না কোম্পানিগুলো। এই কাঁচামাল কিনে সেগুলো রিফাইন করে কাগজ তৈরি করতে হয়। তাই কাগজের দাম বেড়েছে।’