রূপসা এক্সপ্রেস
মাহাবুবুর রহমান, ঈশ্বরদী (পাবনা)
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:২৬ পিএম
খুলনা-ঈশ্বরদী-চিলাহাটি রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেন যাত্রাপথে ত্রুটি দেখা দিলে এভাবেই স্টেশনে থামিয়ে মেরামত করা হয়। প্রবা ফটো
খুলনা-ঈশ্বরদী-চিলাহাটি রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেন পুরাতন লক্কড়ঝক্কড় যাত্রীবাহী কোচ নিয়ে চলাচল করছে। প্রায় এতে চলার পথে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এ কারণে স্টেশনেই থামিয়ে কোচ মেরামত করতে হয়। বর্তমানে রূপসা (আপ) ও রূপসা (ডাউন) প্রতিদিন ২ থেকে ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বে চলাচল করছে। এতে যাত্রীদের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে রবিবার ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, দাঁড় করানো রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনের বগির নিচে ট্রলির মেরামত কাজ করছে ট্রেন পরীক্ষক অফিসের কর্মচারীরা। এমন ঘটনা মাঝেমধ্যে ঘটছে। এতে প্রতিদিনই বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রথম শ্রেণির আন্তঃনগর রূপসা যাতায়াতে (আপ ও ডাউন) দুটি ট্রেন প্রায় তিন ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করছে। রূপসা এক্সপ্রেস (আপ) ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে নির্ধারিত সময় ১১টা ২০ মিনিটে হলেও সেটি স্টেশনে প্রবেশ করে ১টা ৫ মিনিটে। এরপর ট্রেনের প্রতিটি কোচ পর্যবেক্ষণ শুরু করে ট্রেন পরীক্ষক (টিএক্সআর)। প্রায় ৫০ মিনিট ট্রেনের বগির চাকা, টুলবক্স, বাফোর, ব্যাকাম, এয়ার সিলিন্ডার, স্পিরিং, সুইচবোর্ড, হোসপাইপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মেরামত শেষে দুপুর ২টার দিকে ট্রেন চিলাহাটির উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে ট্রেন থামিয়ে ৫০ মিনিট মেরামত করা হয়। এরপরও যাত্রাপথে বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন থামার পর এটি মেরামত করতে হয়। পুরাতন ও চলাচলের অযোগ্য কোচ দিয়ে ট্রেন চলাচলের কারণে যাত্রাপথে বিলম্ব ঘটছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলা দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোনো প্রথম শ্রেণির আন্তঃনগর ট্রেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার রূপসা (আপ) এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে নির্ধারিত সময় ১১টা ২০ মিনিটে পৌঁছানোর কথা থাকলেও পাঁচ ঘণ্টা বিলম্বে বিকাল ৫টায় সেখানে প্রবেশ করে এবং খুলনাগামী রূপসা (ডাউন) ট্রেন ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে নির্ধারিত সময় ২টায় পৌঁছানোর কথা থাকলেও এটি প্রায় তিন ঘণ্টা বিলম্বে বিকাল ৪টায় প্রবেশ করে। দুটি ট্রেনেরই কোচ পর্যবেক্ষণ শেষে আরও আধাঘণ্টা পর তা ছেড়ে যায়।
পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনের কোচগুলো দীর্ঘদিনের পুরোনো হওয়ার কারণে নানা যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। চলতি পথে মেরামতের কারণে এই ট্রেনটির যাত্রা বিলম্বিত হচ্ছে। তবে খুব শিগগিরই এ ট্রেনে নতুন কোচ সংযুক্ত করে এ সংকট নিরসন করা হবে।
খুলনা থেকে চিলাহাটি যাচ্ছিলেন মামুনুর রশীদ নামে এক যাত্রী। তিনি জানান, ‘ট্রেনটি সকাল ৭টা ১০ মিনিটে খুলনা থেকে ছেড়ে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে চিলাহাটি পৌঁছানোর কথা। এখন ২টা বাজে ট্রেন ঈশ্বরদীতে। চিলাহাটি যেতে আরও ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় লাগবে। চলতি পথে স্টেশনে স্টেশনে ট্রেনের কোচ মেরামত করতে হয়েছে। কোচগুলো বেশ পুরাতন ও জরাজীর্ণ মনে হচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনটি রেলের সবচেয়ে অবহেলিত একটি ট্রেন। প্রতিদিনই এই ট্রেনের মেরামত করতে হয়। ফলে প্রতিদিনই ট্রেনটি বিলম্ব নিয়েই চলাচল করছে। ট্রেনের বগিগুলো পুরোনো হয়ে গেছে। এ কারণেই নানা রকম ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। রেল কর্তৃপক্ষ বারবার নতুন কোচ সংযোজন করার কথা বললেও তা করছে না। শুধু বগির সমস্যাই না, বগির ভেতরে ফ্যান, লাইট ও ওয়াশরুমের বেহাল দশা। এটা রেল কর্তৃপক্ষের বড় উদাসীনতা ও অবহেলা বলা যেতে পারে।
রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনের দায়িত্বরত ট্রেন পরিচালক (গার্ড) এস আর চৌধুরী বলেন, ‘ট্রেন চললে সমস্যা হতেই পারে। তবে রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনের কোচ অনেক পুরেনো হয়ে গেছে। যার ফলে প্রায় মেরামতের প্রয়োজন হচ্ছে। এতে যাত্রা বিলম্ব হলেও ট্রেনের গতিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’
ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের ট্রেন পরীক্ষক (টিএক্সআর) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনের কোচগুলো বেশ পুরোনো। ট্রেন চলার সময় ঝাঁকুনিতে কিছু কিছু যন্ত্রে ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে কোচের নিচের যন্ত্রাংশ বারবার সমস্যা দেখা দেয়। তাই এ ট্রেন স্টেশনে এলে পর্যবেক্ষণ করা হয়। প্রয়োজনে মেরামত করা হয়।’
ঈশ্বরদীর স্টেশন মাস্টার মোছা. মাহবুবা খাতুন বলেন, ‘প্রতিনিয়তই এ ট্রেনটি মেরামত করা হয়Ñ এটা সবাই জানে। আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। এটি প্রকৌশল বিভাগ ভালো বলতে পারবে। আপনারা তাদের সঙ্গে কথা বলেন।’
পাকশি রেলওয়ে বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলী (ক্যারেজ) মো. মমতাজুল ইসলাম বলেন, ‘এটা দীর্ঘদিনের সমস্যা। আমরাও খুব চাপে আছি বিষয়টি নিয়ে। চলতি মাসে রূপসা এক্সপ্রেসসহ বেশ কয়েকটি ট্রেনে নতুন কোচ সংযোগ করা হবে। আশা করছি এ সমস্যা নিরসন হয়ে যাবে।’