× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চড়া সুদের ঋণের জালে জীবন তছনছ

শফিউল আজম টুটুল, ঝালকাঠি

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:৩৭ এএম

আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:০৬ পিএম

চড়া সুদের ঋণের জালে জীবন তছনছ

ঝালকাঠিতে চড়া সুদে ঋণের জালে আটকে যাচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠছে সুদে টাকা দেওয়া মহাজনসহ নামসর্বস্ব কিছু ক্ষুদ্র ঋণদান প্রতিষ্ঠান। গ্রাহকরা এক প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধ করছে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে। এভাবেই তারা জড়িয়ে যাচ্ছে ঋণের সুদের জালে। যা থেকে বের হতে কেউ কেউ বেছে নিচ্ছে আত্মহননের পথ। আবার কেউ কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য ফেলে রাতের আঁধারে শহর ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি এমন কিছু ঘটনা শহরবাসীকে বেশ নাড়া দিয়েছে। অভিযোগ আছে সমবায় অফিসের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগসাজশে এমনটা হচ্ছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা সমবায় কর্মকর্তা

গত ২৭ নভেম্বর শহরের বান্দাঘাটা এলাকার তরুণ ব্যবসায়ী রবীন চন্দ্র শীল আত্মহত্যা করেন। তার ভাই রনি চন্দ্র শীল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘রবীন বান্দাঘাটা এলাকার দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছিল। চড়া সুদ থাকায় সেই ঋণ পরিশোধ করতে সে ব্যর্থ হয়। এদিকে সুদি কারবারিরা তাকে পাওনা টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। একপর্যায় সে আত্মহননের পথ বেছে নেয়।’ 

শহরের কাঠপট্টি এলাকায়ও কিছুদিন আগে খোকন নামে এক যুবক ঋণের জালে আটকে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। শহরের পুরাতন স্টেডিয়াম এলাকার চা দোকানি মো. মাসুম বলেন, ‘আমার মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা টাকার সংকটে পড়লে তাদের জিম্মি করে সুদি কারবারি অফিসগুলো চড়া সুদে ঋণ দেয়। মাত্র দশ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে মাসে দুই হাজার টাকা সুদ দিতে হয়।’ 

চড়া সুদে কেন ঋণ নিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, কাগজপত্রের ঝামেলা ও হয়রানির কারণে ব্যাংকঋণ নিতে আগ্রহ কম। এ ছাড়া ব্যাংকে মর্টগেজ দেওয়ার মতো জমিজমা বা সম্পদও নেই। সহজেই এক দিন-দু দিনের মধ্যে বিভ্ন্নি বেনামি প্রতিষ্ঠান থেকে শুধু স্টাম্পে সই দিয়ে টাকা নিতে পারছেন। তাই চড়া সুদে তারা ঋণ নিয়ে থাকেন। 

এদিকে ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে শহর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সম্প্রতি শহরের কামারপট্টি এলাকায় একটি  বইয়ের দোকানের মালিক একাধিক সমিতি থেকে ঋণ নেন। চড়া সুদের এসব ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে দোকান বন্ধ করে রাতের আঁধারে শহর ছেড়ে চলে যান তিনি। শহরের কুমারপট্টি এলাকার একজন রং ব্যবসায়ীও ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে দোকান বন্ধ রেখে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। একইভাবে শহরের কাপুড়িয়া পট্টি থেকে নিরুদ্দেশ হয়েছেন এক ব্যবসায়ী। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নিরুদ্দেশ রয়েছেন শহরের রোনসালসে রোড এলাকার এক চা দোকানি। তিনিও ৩-৪টা সমিতি থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মধ্যম পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই কোনো মহাজন বা সমিতি থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়েছেন। শহরের প্রায় সবকটি সেলুন, টংঘরের চায়ের দোকান, ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ অনেকেই এ জালে আবদ্ধ। শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় দেখা যায় প্রায়ই সমিতি ও এনজিও কর্মীদের সঙ্গে গ্রাহকদদের বাগ্‌বিতণ্ডা হচ্ছে। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া ব্লাংক চেক দেখিয়ে মামলার হুমকিও দিচ্ছেন বলে অভিযোগ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী ও শহরের বাসিন্দা জানিয়েছেন, শহরের মোড়ে মোড়ে এখন নামমাত্র সমিতি করে সমবায় অফিসের নিবন্ধন নিয়ে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল অবাধে সুদের ব্যবসা করছেন। কেউ কেউ আবার কোনো ধরনের সাইনবোর্ড ও নিবন্ধন ছাড়াই চড়া সুদে ঋণ দিচ্ছেন। শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় এ রকম তিনটি দোকেন চড়া সুদে ঋণ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তারা ইচ্ছামতো গ্রাহকদের কাছ থেকে সুদ নিচ্ছেন। সমবায় অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে সমিতিগুলো নিয়মনীতি ছাড়াই ঋণদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব প্রতিষ্ঠান প্রতি এক লাখ টাকায় মাসে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সুদ নিচ্ছে। এ ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের নিবন্ধন নেই। তারা অবধৈভাবে ঋণদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। 

অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা সমবায় কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এক লাখ টাকায় ১০ হাজার টাকা সুদ নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এ ক্ষেত্রে সমিতিগুলো সর্বোচ্চ এক লাখ টাকায় ১ হাজার ৫০০ টাকা সুদ নিতে পারবে। যদি কোনো সমিতি সমবায় আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ঋণদান কার্যক্রম পরিচালনা করে তাহলে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দশ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া সমবায় অফিসের নিবন্ধন নিয়ে কেউ ইচ্ছামতো সুদের হার নির্ধারণ করে ঋণ দিলে নিবন্ধন বাতিল করা হবে। ইতোমধ্যে ৮০টি সমিতির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।’ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা