পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:৪০ পিএম
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:৪১ পিএম
খাগড়াছড়িতে দিবসটি উপলক্ষে চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে গণসমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। প্রবা ফটো
পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাত নিরসন করে শান্তি ফেরাতে ২৬ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি করা হয়। তবে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর করা এই চুক্তির ফল এখনও পায়নি পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ। শনিবার (২ ডিসেম্বর) পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৬তম বর্ষপূর্তিতে এই চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে।
২৬ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) পক্ষে চুক্তিতে অংশ নিয়েছিলেন জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। শনিবার চুক্তির ২৬তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজিত আলোচনাসভায় তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলেও চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকার রাস্তায় কয়েক লাখ আদিবাসী এনে আন্দোলন করার সুযোগ খুব একটা নেই। কারণ যারা পার্বত্য অঞ্চলকে সামরিক শাসনের অধীনে রেখেছেন, তারা এ আন্দোলন সফল হতে দেবে না। এ চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে বর্তমান সরকার চরমভাবে দায়ী। আন্দোলন হলে এর পরিণতি কী হতে পারে, সেটি আমাদের ধারণার বাইরে না। অন্যায়, অবিচার, নিপীড়ন বজায় থাকলে সেখানে আন্দোলন থেমে যায় না।’
জেএসএস ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম সভাপতি সন্তু লারমা আরও বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে শান্তিপ্রিয় মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি বাস্তবায়নে যে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হচ্ছে, তার সাথে সাথে কিন্তু আমাদের আন্দোলনের অনুভূতি বিনষ্ট হয়ে যায়নি। আদিবাসীরা বেশ কয়েকটি বছর ধরে ধৈর্য ধরে যে আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বাঁচতে চাচ্ছিলেন, তারা এখন আর সেটি ধারণ করতে পারছেন না। এখন এ অঞ্চলের বুকে নতুন কিছুর সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে দিনকে দিন। এ চুক্তি বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তার পরও সরকারকে আহ্বান করবÑ এ চুক্তি বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবে।’
সম্মিলিতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম আয়োজিত এই সভায় আরও বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের কো-চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহসম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য মোস্তফা আলমগীর রতন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন, ঐক্যন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম এ সবুর, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাস অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটা বিশেষ গোষ্ঠীকে উপহার দেওয়া হয়েছে। যার কারণে এখন সে অঞ্চলের মানুষ নিজ দেশে পরবাসী হয়ে আছে। ২৬ বছর আগে ১৯৯৭ সালে যার হাত ধরে এ চুক্তি হয়েছিল, তার হাতেই অকেজো হয়ে পড়ে আছে এটি। চুক্তির পর থেকেও তাদের মৌলিক অধিকারগুলো সরকার সংরক্ষণ করতে পারেনি। সরকার এখন যে চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলছে তা সম্পূর্ণ প্রতারণা।
পার্বত্য অঞ্চলে নানা আয়োজন
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৬তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে চট্টগ্রামের পার্বত্য তিন জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও আলোচনাসভাসহ নানা আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া বরিশালের উজিরপুরেও দিবসটি উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও আলোচনাসভা হয়েছে।
বান্দরবানে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও বান্দরবান সেনা রিজিয়নের যৌথ উদ্যোগে শনিবার সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে রাজার মাঠে গিয়ে শেষ হয়। পরে দিবসটি উপলক্ষে আলোচনাসভা হয়। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যার সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সেনাবাহিনীর বান্দরবান রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. গোলাম মহিউদ্দিন আহমেদ। আরও উপস্থিত ছিলেন সদর জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহমুদুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম, মোজাম্মেল হক বাহাদুর, সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহাবুবুর রহমান, পৌর মেয়র সামশুল ইসলাম, জেলা পরিষদ সদস্য লক্ষ্মীপদ দাশ প্রমুখ।
এ ছাড়া দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ, মেয়েদের হ্যান্ডবল ও সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ দিনব্যাপী বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ বিতরণ করা হয়।
রাঙামাটিতে দিবসটি উপলক্ষে শনিবার সকালে শহরের কুমার সুমিত রায় জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণে গণসমাবেশ হয়েছে। জেলা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি আয়োজিত এই গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সমিতির জেলা সভাপতি ডা. গঙ্গা মানিক চাকমা। প্রধান অতিথি ছিলেন সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক জলিমং মারমা। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেব দুলাল ভৌমিক, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক জুয়েল চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য অঞ্চল সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা, জেলা পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা। এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে শোভাযাত্রা, নৌকাবাইচ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়েছে।
রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে দিবসটি উপলক্ষে সেনাবাহিনীর কাপ্তাই ৫৬ বেঙ্গলের কাপ্তাই জোনের আয়োজনে শোভাযাত্রা ও আলোচনাসভা হয়।
খাগড়াছড়িতে দিবসটি উপলক্ষে চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে গণসমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। সদর উপজেলার কমলছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়োজিত গণসমাবেশে আরাধ্য পাল খীসার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বিমল কান্তি চাকমা। অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অংশমান চাকমা, সাংগঠনিক সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি শোভা কুমার চাকমা, সাধারণ সম্পাদক প্রীতি খীসা, রাঙামাটি জেলা সভাপতি বিমলেশ্বর চাকমা, সাধারণ সম্পাদক জুপিটার চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রত্না তঞ্চঙ্গ্যা প্রমুখ।
এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও সেনা রিজিয়নের উদ্যোগে শনিবার সকালে শোভাযাত্রা করা হয়।
এদিকে বরিশালের উজিরপুরে দিবসটি উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও আলোচনাসভা হয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম জামাল হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনাসভা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা তালুকদার মো. ইউনুস। সভায় বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র মো. গিয়াস উদ্দীন বেপারী, সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য অশোক দাশ, আব্দুল হাকিম সেরনিয়াবাত, সালাউদ্দিন সিপু, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হেমায়েত উদ্দীন হিমু, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাপস রায়, সাধারণ সম্পাদক মো. রিপন মোল্লা, উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম শিপন প্রমুখ।
তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কাপ্তাই (রাঙামাটি), উজিরপুর (বরিশাল) ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক।