চট্টগ্রাম-১০
সুবল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:৩১ পিএম
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:৩১ পিএম
বাঁয়ে মহিউদ্দিন বাচ্চু ও ডানে মনজুর আলম। প্রবা ফটো
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ২০ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, এমডি ও চেয়ারম্যান এবং চসিকের সাবেক মেয়র মনজুর আলম। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শক্তিশালী এই প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়াও রয়েছেন ফরিদ মাহমুদ (স্বতন্ত্র), ফেরদৌস রশিদ (তৃণমূল বিএনপি)সহ আটজন প্রার্থী।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘প্রতাপশালী’ এমপি মহিউদ্দিনকে এবার ছাড় দিতে চান না মনজুর আলম। হলফনামার তথ্য অনুসারে মহিউদ্দিনের চেয়ে চসিকের মনজুর আলমের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বেশি। কিন্তু চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত মহিউদ্দিনের এলাকায় শক্ত অবস্থানসহ অর্থবিত্তও কম নেই। পাশাপাশি মনজুর আলমের রয়েছে স্থাবর-অস্থাবর মিলে প্রায় শতকোটি টাকা। দুজনেরই এলাকায় কর্মী সমর্থকের কমতি নেই। তাই আসন্ন নির্বাচনে এমপি কে হচ্ছেন- সেটা নিয়ে চলছে নানা হিসাবনিকাশ।
মহিউদ্দিন বাচ্চু : হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, স্বশিক্ষিত মহিউদ্দিন বাচ্চু পেশায় একজন ব্যবসায়ী। মহিউদ্দিন বাচ্চুর ব্যবসা খাত থেকে বছরে আয় ১৭ লাখ ৯৪ হাজার ৫০০ টাকা। তার নিজ নামে নগদ রয়েছে ১১ লাখ ৩ হাজার ৪৮৪ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৭ লাখ ৩ হাজার ৫০০ টাকা জমা রয়েছে। নিজের নামে থাকা দুটি গাড়ির মূল্য দেখিয়েছেন ৯০ লাখ টাকা, স্ত্রীর কাছে ৩৫ তোলা স্বর্ণ থাকার কথা উল্লেখ করেছেন।
মহিউদ্দীন বাচ্চুর রয়েছে এক কোটি টাকা মূল্যের তিনটি কোম্পানির শেয়ার। তিন কোম্পানির মধ্যে দুটির শেয়ারহোল্ডার হিসেবে স্ত্রীর ৮ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে। তার বা স্ত্রীর নামে কোনো কৃষিজমি না থাকলেও নিজের নামে ৩ কোটি ৫০ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকার অকৃষি জমি রয়েছে। স্ত্রীর নামে রয়েছে ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা দামের একটি ফ্ল্যাট।
মহিউদ্দিন বাচ্চুর ৩০ হাজার টাকার ইলেক্টনিকসামগ্রী, ৬০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে। তবে মহিউদ্দিন বাচ্চুর নগদ ও ব্যাংকে জমা টাকা থাকলেও ২ কোটি ৮৫ লাখ ৫৭ হাজার ১৯১ টাকার ব্যাংকঋণ রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।
মনজুর আলম : হলফনামার তথ্য অনুসারে, মনজুর আলম পেশায় একজন ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি। তিনি ২০টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ব্যবসা হতে মনজুর আলমের বার্ষিক আয় ২০ লাখ ৭৫ হাজার ৮৫০ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংকে আমানত রয়েছে ৭৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০২ টাকা। পেশা ও সম্মানী হতে ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা, খালি জায়গার ভাড়া বাবদ ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৬৮ টাকা বার্ষিক আয় করেন। নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় বাড়ি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৪৭৬ টাকা এবং শেয়ার, সঞ্চয়পত্রে আমানত ৯ লাখ ২০ হাজার ৮২৭ টাকা। কৃষি খাতে মনজুর আলমের বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা, বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ৭২ লাখ ২২ হাজার ১৫৬ টাকা। এই খাতে স্ত্রীর আয় ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৪৭৬ টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে মনজুর আলমের নিজ নামে নগদ ৯ লাখ ২৬ হাজার ৬৩৮ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ ৬৭ লাখ ৩৫ হাজার ৩৩৫ টাকা, বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বাবদ ৩৮ কোটি ৩৫ লাখ ২০ হাজার ২০৬ টাকা রয়েছে। এ ছাড়াও নিজের নামে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা দামের একটি গাড়ি, ১২ লাখ ৩৩ হাজার টাকার স্বর্ণ আছে, ৪ লাখ ৮ হাজার টাকার আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিকসামগ্রী রয়েছে।
অন্যান্যের মধ্যে স্টক ও রিসিবেবল আছে ৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে নগদ আছে ৩৯ লাখ ৩৫ হাজার ১৭১ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৮৮ হাজার ০৬১ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক একচেঞ্জ তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বাবদ ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৭৬ হাজার ৫৬৫ টাকা, স্বর্ণ আছে ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকার, ৩ লাখ ৩ হাজার টাকার আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিকসামগ্রী রয়েছে।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে মনজুর আলমের নিজ নামে কৃষিজমি রয়েছে ২৫ লাখ ৫৩ হাজার ৪২০ টাকার, স্ত্রীর নামে ৪ লাখ ৮৪ হাজার ২০০ টাকার, দালান রয়েছে নিজ নামে ১১ কোটি ২১ লাখ ৯১ হাজার ৯৭৩ টাকার, স্ত্রীর নামে রয়েছে ১ কোটি ৭৯ লাখ ২৮ হাজার ৭১ টাকার। মনজুর আলমের নিজ নামে ৫৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৮৫ টাকার সম্পদ ছাড়াও একটি ব্যাংকে ৯ কোটি ১৬ লাখ টাকার দায় আছে। এ ছাড়াও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, স্ট্যান্ডার্ড, মার্কেন্টাইল ব্যাংকসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫১০ কোটি টাকার ঋণ আছে মনজুর আলমের।