মিরসরাইয়ে ছাত্রলীগ কর্মী খুন
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৫৫ পিএম
নিহত ছাত্রলীগ কর্মী জিয়াউল হাসান জুয়েল। প্রবা ফটো
‘আমার ছেলেকে যেভাবে মেরেছে, এভাবে কেউ কাউকে মারে না। পৃথিবীতে এত নিষ্ঠুরভাবে মারতে কেউ দেখেনি। প্রয়োজনে আমাকে মেরে শান্তিতে থাকতি, তারপরও আমার ছেলেকে বাঁচিয়ে রাখতি। আমার ছেলেকে এভাবে কেন মারলি। আমি কাকে নিয়ে বাঁচব।’
ছেলেকে হারিয়ে এভাবেই বিলাপ করতে থাকেন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হওয়া ছাত্রলীগ কর্মী জিয়াউল হাসান জুয়েলের মা জোৎসনা আরা বেগম।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) সরেজমিন নিহত জুয়েলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের মধ্যে মা জোৎসনা আরা বেগম ছেলেকে হারিয়ে বিলাপ করছেন আর পাশে থাকা স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নিজেরাও অঝোরে কাঁদছেন।
স্বজনরা জানান, জুয়েল অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে আর বিদ্যালয়ে যাননি। কোনো পদ না থাকলেও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। আগামী কমিটিতে মিঠানালা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সম্ভাব্য সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীও ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে মাটি, ইট ও বালু সরবরাহের কাজ করতেন।
তার বাবা আলমগীর হোসেন জানান, গত বুধবার রাতে মোটরসাইকেলে মিরসরাইয়ের আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেলের শোডাউন শেষে বাড়ি ফিরছিলেন জুয়েল। রাত ১১টার দিকে স্থানীয় বামুন সুন্দর দারোগার হাট থেকে বাড়ি ফেরার সময় পথিমধ্যে পূর্বশত্রুতার জের ধরে স্থানীয় ইউনুস, রিয়াজ ও ফারুক তাকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তাকে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ভিসা জোগাড় করে ওকে বিদেশ পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। সেই সময়টা আর পেলাম না। আমার ছেলেটাকে ওরা শেষ করে দিল।’
জুয়েলের ছোট ভাই তাজমীর হাসান শুভ বলেন, ‘কিছুদিন আগে মাদক বিক্রিতে নিষেধ করায় রিয়াদ আমার ভাইয়ের পা কেটে ছোটদের উপহার দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। বুধবার রাতে বাড়ি ফেরার সময় আমার বড় ভাই জুয়েলের ওপর হামলা করে। এ সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার একটি পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ছাড়া বুকে ছুরিকাঘাত করে খুন করে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ফাহিম জামাল বলেন, ‘জুয়েলকে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই সে মারা যায়। তার বাম পা হাঁটুর নিচে বিচ্ছিন্ন ছিল। ছুরি দিয়ে কোপানোর গভীর ক্ষত ছিল। ধারণা করছি ফুসফুসে আঘাত ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে।’
মিরসরাই থানার ওসি কবির হোসেন জানান, গতকাল মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় ইউনুসকে প্রধান আসামি করে নিহত ব্যক্তির বাবা আলমগীর বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।