পাইকগাছা (খুলনা) সংবাদদাতা
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৫৩ পিএম
বাবার লাশ দাফনে বাধা। প্রবা ফটো
মৃত্যুর আগে হাসপাতালে বাবার আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে সব সম্পত্তি লিখে নিয়েছেন এক ছেলে। মৃত্যুর পর লাশের গোসলের সময় হাতের বুড়ো আঙ্গুলে টিপসই দেওয়ার ছাপ পাওয়া যায়। সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি জেনে বাবার লাশ দাফনে বাধা দেয় পাঁচ মেয়ে। এমন অবস্থায় বাড়ি পুলিশ আসলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পালিয়ে যান অভিযুক্ত ছেলে। দুই দিন বাড়ির উঠনে পড়ে থাকে লাশ। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে লাশ দাফন করা হয়। তবে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয় মৃত ব্যক্তি বৃদ্ধ স্ত্রী ও পাঁচ মেয়ে।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের ঘোষাল গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, ওই গ্রামের সাকাত গাজী কিডনি জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত মঙ্গলবার ভোর ৪টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তার লাশ বুধবার সকাল ৮টায় বাড়িতে নেওয়া হয়। সাকাত গাজীর এক ছেলে, পাঁচ মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে।
সাকাত গাজীর স্ত্রী ও মেয়েদের অভিযোগ, সাকাত গাজী অসুস্থ হলে তার ছেলে মামুন গাজী তাকে নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। হাসপাতালে থাকাকালে কৌসলে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে সব সম্পত্তি লিখে নেন। লাশ বাড়িতে নিয়ে আসলে গোসলের সময় সাকাত গাজীর হাতের বুড়ো আঙ্গুলে টিপসই দেওয়ার কালি লেগে থাকতে দেখা যায়। এমন অবস্থায় মামুন লাশ দাফন করার ব্যাবস্থা করলে তার পাঁচ বোন লাশ দাফনে বাধা দেয়। খবর পেয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশ আসলে মামুন তার পরিবার নিয়ে পালিয়ে যান। এ ছাড়া মুসল্লীসহ গ্রামবাসী সিদ্ধান্ত নেয়Ñ মৃত্যু সাকাত গাজী তার মেয়েদের হক নষ্ট করায় জানাযা পড়াবে না। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে থানা-পুলিশের হস্তক্ষেপে লাশ দাফন করা হয়।
এ অবস্থায় সওকত গাজীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন মেয়ে শাহনাজ পারভিন, লাবনী আক্তার, লিপি আক্তার, মুন্নি আক্তার ও ময়না আক্তার এবং স্ত্রী রহিমা বেগম। সওকত গাজীর মেয়েরা বলেন, তারা পাঁচ বোনই বিবাহিত। তারা কেউ বাড়িতে না থাকার সুযোগে তাদের ভাই বাবার অসুস্থতার সময় তাদের ও মা রহিমা বেগমকে না জানিয়ে কৌসলে সব সম্পত্তি লিখে নিয়েছে।
এ বিষয়ে ঘোষাল জামে মসজিদের ইমাম বেলাল হোসেন বলেন, সাকাত গাজীর মৃত্যুর সংবাদ শুনে মঙ্গলবার বাদ জোহর জানাজার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু তার পাঁচ মেয়ে জনাজা এবং লাশ দাফনে বাধা দেওয়ায় মুসল্লীসহ গ্রামবাসী সিদ্ধান্ত নেয়Ñ মৃত্যু সাকাত গাজী তার মেয়েদের হক নষ্ট করায় জানাযা পড়াবেন না।
অভিযুক্ত মামুন বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শরীক ফাঁকি দেওয়ার কারণে মৃত সাকাত গাজীর লাশ দাফন করতে দিচ্ছে না তার মেয়েরা- এমন সংবাদ পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে মেয়েদের এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানাযা ও দাফনের ব্যবস্থা করেছেন। বাবার সম্পত্তি বঞ্চিত মেয়েরা আইনগত ব্যবস্থার জন্য তার কাছে গেলে তাদের আইনের মধ্যে থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে।