আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:১৮ পিএম
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া কেটে পকেট গেইট, আখাউড়া সেনারবাদি এলাকার গণকবর সংলগ্ন কাঁটা তারের বেড়া। প্রবা ফটো
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী উপজেলা আখাউড়া। ওপারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। আখাউড়া সীমান্ত এলাকায় বেশ কিছু চোরাকারবারি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা ভারত থেকে অবৈধপথে নিয়ে আসছে মাদক, মোবাইল, কাপড় ও কসমেটিকস। উপজেলার সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করছে এসব ভারতীয় পণ্য। মাঝে-মধ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হাতে মাদক জব্দ হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে কাপড়, কসমেটিকস ও মোবাইল ফোনের চালান। অবৈধভাবে এসব পণ্য দেশে আসায় একদিকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব থেকে, অন্যদিকে লাগাম টানা যাচ্ছে না অপরাধ চক্রের। আর এর সঙ্গে জড়িত মূল হোতারা থাকছে আড়ালে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানায়, সীমান্ত এলাকা ঘিরে সক্রিয় একাধিক সিন্ডিকেট। প্রতিনিয়তই ভারত থেকে মোবাইল ফোন, কাপড়, কসমেটিকস ও মাদক আসছে দেশে। সিন্ডিকেট সদস্যরা এতটা প্রভাবশালী যেÑ প্রশাসনসহ সবার সঙ্গে তাদের সখ্যতা রয়েছে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে এলাকার কেউ কথা বলার সাহস পায় না। বিভিন্ন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণকারী সদস্যের মধ্যে রয়েছেনÑ আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের মো. আফজাল হোসেন জুম্মান, আব্দুল্লাহপুরের কিবরিয়া, কালিকাপুরের মো. সোহাগ মিয়া ও হীরাপুর গ্রামের সায়েরা বেগম, মোগড়া ইউনিয়নের বাউতলা গ্রামের ইয়ার মাহমুদ, আল-আমিন, মো. ফারুক ও মো. সেলিম এবং সেনারবাদি গ্রামের মো. দেলু মোল্লা।
আখাউড়া থানা সূত্রে জানা গেছে, কিবরিয়ার নামে আখাউড়া থানায় আটটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় একটি এবং নরসিংদীর রায়পুরা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটিসহ মোট ১১টি মামলা রয়েছে। অন্যদিকে মো. সোহাগ মিয়ার নামে আখাউড়া থানায় তিনটি ও আখাউড়া রেলওয়ে থানায় একটি মামলা রয়েছে। আর ইয়ার মাহমুদের নামে আখাউড়া থানায় তিনটি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া মো. আফজাল হোসেন জুম্মান ও মো. দেলু মোল্লার নামে আখাউড়া থানায় একটি করে মামলা রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ধলেশ্বর (কাওয়ালী মুড়া) এলাকায় সীমান্ত পিলার থেকে কালিকাপুর সীমান্ত পিলার পর্যন্ত পথে যে মালামাল আসে তা নিয়ন্ত্রণ করেন মো. আফজাল হোসেন জুম্মান, কিবরিয়া, মো. সোহাগ মিয়া ও সায়েরা বেগম। সেনারবাদি সীমান্ত পিলারের আশপাশে নিয়ন্ত্রণ করেন দেলু মোল্লা, আর বাউতলা এলাকার সীমান্ত পিলার থেকে জয়নগর সীমান্ত পিলার পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করেন ইয়ার মাহমুদ, আল-আমিন, ফারুক ও সেলিম। এসব জায়গা দিয়ে কাঁটাতারের বেড়ার নিচে পানি চলাচলের জন্য কংক্রিটের মোটা পাইপ দেওয়া আছে। কখনও এই পাইপের ভেতর দিয়ে, কখনও কাঁটাতারের পকেট গেট দিয়ে (কাঁটাতারের বেড়া কেটে পকেট গেট করা হয়েছে) মাদক, কাপড় ও মোবাইল ফোনের চালান আনা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তি জানায়, উত্তর ইউনিয়নের রাজাপুর, চাঁনপুর, কল্যাণপুর ও আনোয়ারপুর সীমান্ত দিয়ে শুধু মাদক আসে। আর জয়নগর, বাউতলা, সেনারবাদি, কালিকাপুর, ধলেশ্বর (কওয়ালী মুড়া), হীরাপুর সীমান্ত দিয়ে আসে মাদক, মোবাইল, কাপড় ও কসমেটিকস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, ‘সেনারবাদি, বাউতলা বর্ডারে আল-আমিন, ইয়ার মাহমুদ, দেলু মোল্লা, ফারুক, জুয়েলসহ কয়েকজনের একটি সিন্ডিকেট আছে। তাদের ছাড়া এই বর্ডার দিয়ে কোনো কিছু আনা সম্ভব না। আর কালিকাপুর ও ধলেশ্বর বর্ডার মো. আফজাল হোসেন জুম্মান, মো. সোহাগ মিয়া, কিবরিয়াসহ কয়েকজন নিয়ন্ত্রণ করেন। বর্ডারের প্রশাসনও তাদের নিয়ন্ত্রণে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইয়ার মাহমুদ বলেন, ‘এসব ব্যবসার সঙ্গে আমি জড়িত না।’ মামলার বিষয়ে বলেন, ‘কিছু মানুষ শত্রুতা করে আমার বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছে।’ অপর অভিযুক্ত আল-আমিন বলেন,‘আমি এসবের সঙ্গে সম্পৃক্ত না। গ্রামে ৩২ সদস্যের মাদকবিরোধী কমিটি আছে, আমি সে কমিটির সদস্য।’ তার মত অভিযোগ অস্বীকার করেন কিবরিয়া।
অভিযুক্ত মো. আফজাল হোসেন জুম্মানের মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ না করে কেটে দেন। অপর দুই অভিযুক্ত মো. সোহাগ মিয়া ও সায়েরা বেগমের ফোনে একাধিকবার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়।
সরাইল ব্যাটালিয়নের (২৫ বিজিবি) অধীনে ফকিরমুড়া, শ্যামনগর ও আজমপুরে বিজিবির ক্যাম্প রয়েছে।
জানতে চাইলে সুলতানপুর ব্যাটালিয়ন (৬০ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিক হাসান উল্লাহ বলেন, ‘আমরা সীমান্তে সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থায় রয়েছি। তারপরও যদি এমন কিছু হয়ে থাকে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সরাইল ব্যাটালিয়ন (২৫ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল সৈয়দ আরমান আরিফের হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কেটে দেন। পরে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।