টাঙ্গাইল সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৫৩ পিএম
ইঁদুর নিয়ে গেছে ধান। গর্ত খুঁড়ে তাই সংগ্রহের চেষ্টা। টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কলিয়া মাঠে শুক্রবার। প্রবা ফটো
কারও হাতে শাবল, কারও হাতে পাসন-কোদাল। কৃষক আমন ধান কেটে নেওয়ার পর মাঠে মাঠে এসব দেশি অস্ত্র হাতে ইঁদুরের গর্ত খুঁজে বেড়াচ্ছে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা। ইঁদুরের গর্ত কিংবা ঝরেপড়া ধান দেখলেই তাদের চোখে-মুখে ফুটে উঠছে হাসি। মুহূর্তেই গর্ত খুঁড়ে বের করে আনছে, কুড়িয়ে নিচ্ছে মাঠে পড়ে থাকা ধানও। টাঙ্গাইলে আমন ধান কাটার মৌসুম শুরুর পর থেকে প্রতিবারের মতো এবারও শুরু হয়েছে তাদের দিনান্ত পরিশ্রম। চাষিরা ফসল ঘরে তোলার পর খালি মাঠে পড়ে থাকা ও ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান তুলতে দেখা যাচ্ছে তাদের।
জেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, আমন ধান কেটে নেওয়ার পর ক্ষেতে অবশিষ্ট পড়ে থাকা ধানের শিষ কুড়িয়ে নিচ্ছে শিশুরা। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চার-পাঁচ কেজি ধান পায় একেকজন। কেউ বিক্রি করে, কেউ আবার মজুদ করে রাখে নিজেদের জন্য। ধান সংগ্রহের পর ধুয়ে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিতে হয়। জেলার বাসাইল উপজেলার কাউলজানী গ্রামের ফুল খাতুন অন্য অনেকের মতোই ধান কুড়ান। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় পাড়ার মেয়েরা দল বেঁধে এভাবে ধান কুড়াতাম। এখনকার মেয়েরা মাঠে আসে না। আগের মতো সেই আনন্দ এখন আর নেই। আমার দুই মেয়ে জামাই আছে। নাতি-নাতনিদের পিঠা খাওয়ানোর জন্য ধান কুড়াই। গরিব মানুষ। কিনার মতো সামর্থ্য নাই। যেগুলো ধান পাইছি সবাই মিলে পিঠা খেতে পারব।’
স্কুল থেকে ফিরে ধান কুড়ায় খাদিজা আক্তার। এগুলো তাদের সংসারে কাজে লাগে। মাঝেমধ্যে পিঠা খাওয়াও চলে এই ধানে। খাদিজা বলে, ‘ধান কাটার সময় মালিক ক্ষেতে নামতে দেয় না। কেটে নিয়ে যাওয়ার পর পড়ে থাকা ধান কুড়াই। ইঁদুরের গর্ত খুঁড়েও বের করি।’
গর্তে সাপ, পোকামাকড় থাকতে পারে, ভয় লাগে না? এমন প্রশ্নে খাদিজা বলে, ‘ভয় তো হয়ই। কিন্তু আমরা গরিব মানুষ।’
বর্ণী কিশোরী গ্রামের কুলসুম বেগম বলেন, ‘আগে চামারা ধানের আবাদ আছিল। সেই ধানের পিঠায় অনেক স্বাদ আছিল। এখন আগের মতো পানি হয় না। তাই চামারা ধানের আবাদ নাই। এখন পাইজাম ও গাইন্জা ধানের আবাদ হয়। এগুলোই কুড়াচ্ছি। পিঠা বানামু।’
চলতি বছর জেলার সব এলাকায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা দুলাল উদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এখন জেলায় পুরোদমে ধান কাটা-মাড়াই চলছে। কৃষি বিভাগ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে; কৃষকদের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে।